ইংল্যান্ড– ২ (স্টার্লিং, হ্যারি কেন)
জার্মানি–০
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২৫ বছর আগের এক হারের প্রায়শ্চিত্ত যেন মঙ্গলবারের ওয়েম্বলিতে করলেন ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। তাঁর ছেলেরা দারুণ এক জয় উপহার দিলেন কোচকে। এই জয় হয়তো সাউথগেটের দগদগে ক্ষতে প্রলেপ দেবে। ফুটবলারজীবনে তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন এই জার্মানদের বিরুদ্ধে। কিন্তু কোচ সাউথগেট জার্মান বাধা টপকাতে সক্ষম হলেন। তাও আবার ঘরের মাঠে এবং ইউরোর মঞ্চে। জার্মানদের মাটি ধরিয়ে ইউরো কাপের (Euro 2020) কোয়ার্টার ফাইনালে চলে গেল সাউথগেটের ইংল্যান্ড (England)।
এই ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামেই ১৯৯৬ সালের ইউরো কাপ সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল জার্মানি (Germany) এবং ইংল্যান্ড। সেই ম্যাচের প্রতিটি মুহূর্ত মনে রয়েছে ইংরেজ সমর্থকদের। আজও হয়তো তাঁদের চোখে ভাসছে সেই দৃশ্য। হতাশায় মাটিতে শুয়ে রয়েছেন পল গাসকোয়েন। ৫ ফুট ১০ ইঞ্চির গাজ্জার চোখেমুখে খেলা করছিল অবিশ্বাস। এমন সহজ গোলের সুযোগ তিনি নষ্ট করলেন কীভাবে!
[আরও পড়ুন: ১৭ অক্টোবর আমিরশাহীতে শুরু টি-২০ বিশ্বকাপ, জানিয়ে দিল ICC]
ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসে প্রথম গোল্ডেন গোল হতে পারত সেটা। গাজ্জার নাম লেখা হয়ে যেত ইতিহাসের পাতায়। সেদিন গাজ্জা পারেননি। টাইব্রেকারে ম্যাচটা হেরে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। পেনাল্টি স্পট থেকে গোল করতে পারেননি সাউথগেট। সেই ক্ষত এতদিন বয়ে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। ইংরেজ সমর্থকরাও কি চাইতেন না? এদিনের উচ্ছ্বসিত ওয়েম্বলি দেখলেই তো বোঝা যাচ্ছে এই জয় দেখার জন্যই অনন্ত অপেক্ষায় বসেছিলেন ইংরেজ সমর্থকরা।
এবারের ইউরোর প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড ২-০ গোলে হারিয়ে দিল লড়াকু জার্মানদের। এভাবে চিরশত্রুর কাছে আত্মসমর্পণ করবে জার্মানি এমনটাও কি কেউ ভেবেছিলেন? কেউ কি ভেবেছিলেন জার্মানির ডিফেন্স ভঙ্গুর হয়ে যাবে ইংল্যান্ডের সামনে? যে জার্মানরা বিশাল ব্যবধানে জিততে সিদ্ধহস্ত, তাদের রথের চাকা কিনা থেমে গেল ওয়েম্বলিতে! রহিম স্টার্লিং এবং হ্যারি কেন ওয়েম্বলিতে উৎসবের আবহ এনে দিলেন। কথিত আছে, স্টার্লিং গোল করলে ইংল্যান্ড নাকি হারে না। সেটাই দেখা গেল ওয়েম্বলিতে। ৭৫ মিনিটে লিউক শয়ের গড়ানে ক্রস থেকে স্টার্লিংয়ের জোরাল পুশ ধরতে পারেননি ম্যানুয়েল নুয়ের। অথচ শুরুর দিকে শরীর ছুড়ে নুয়ের বাঁচিয়েছিলেন জার্মানিকে। মোক্ষম সময়ে হার মানলেন তিনি।
গোলের জন্য ইংল্যান্ডকে অবশ্য ৭৫ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হত না। বিরতির ঠিক আগে অধিনায়ক হ্যারি কেন সামনে পেয়ে গিয়েছিলেন জার্মান গোলকিপারকে। স্টার্লিংয়ের কাছ থেকে বলটা পাওয়ার পরে স্ট্রোকটা একটু জোরে দিয়ে ফেলেছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। বিপদের গন্ধ পেয়ে হামেলস বাঁচান দলকে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচে জার্মানি। সেই সময়ে ইংল্যান্ড এগিয়ে গেলে আরও চাপে পড়ে যেতেন মুলাররা।
ইংল্যান্ডের বারের নীচে পিকফোর্ড একাধিক বার ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। প্রথমার্ধে টিমো ওয়ার্নারের প্রয়াস ব্যর্থ করেন। কাই হ্যাভার্টজের শটও বাঁচান। গোলের পিছনে দাঁড়িয়ে সতীর্থদের ক্রমাগত উৎসাহ দিয়ে যান। হ্যারি কেন-স্টার্লিংরাও ঝাঁপিয়ে পড়েন জার্মানদের উপরে। গোল হজম করার পরেও ফিরে আসার দারুণ সুযোগ পেয়েছিল জার্মানি। ইংল্যান্ড ডিফেন্ডারদের ভুলে বল পেয়ে গিয়েছিলেন টমাস মুলার। কিন্তু সামনে পিকফোর্ডকে পেয়েও গোল করতে পারেননি মুলার। তাঁর প্লেস বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে মাথায় হাত দিয়ে মাঠেই বসে পড়েন। তখনই হয়তো সবাই ধরে নিয়েছিলেন দিনটা জার্মানির নয়। যে মুলার অসম্ভব সব গোল করেছেন, সেই তিনিই লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেন। ৮৬ মিনিটে জার্মানদের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দেন হ্যারি কেন। গোলের মধ্যে একেবারেই ছিলেন না ইংরেজ অধিনায়ক। তাঁকে নিয়ে সমালোচনা হচ্ছিল। গ্রিলিশের সেন্টার থেকে সেই হ্যারি কেন মাথা ছুঁয়ে গোল করে ম্যাচ নিয়ে চলে যান নিজেদের সাজঘরে। টুর্নামেন্ট থেকে আগেই ছিটকে গিয়েছিল পর্তুগাল, ক্রোয়েশিয়া, ফ্রান্সের মতো দল। এবার ইউরো থেকে বিদায় নিল জার্মানিও।