shono
Advertisement
Madih Talal

'কোচ কুয়াদ্রাতের ডাক শুনেই এসেছি', একান্ত সাক্ষাৎকারে ইস্টবেঙ্গলের নয়া তারকা তালাল

'কলকাতা থেকেই আমার ভারতে ফুটবল জীবন শুরু', বলছেন তালাল।
Published By: Anwesha AdhikaryPosted: 04:41 PM Jun 28, 2024Updated: 04:41 PM Jun 28, 2024

ইন্ডিয়ান সুপার লিগের শেষ সংস্করণের অন্যতম সেরা ফুটবলার। দশ-দশটা গোলে সহায়তা করে সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টের মালিক। সঙ্গে হাফডজন গোল। পাঞ্জাব এফসি ছেড়ে তিনি ২ মরশুমের চুক্তিতে যোগ দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলে। কেন লাল-হলুদ জার্সিই পছন্দ হল? কলকাতা শহরটা নিয়ে তাঁর ধারণা কী? আর ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের চিরায়ত লড়াইকে কীভাবে দেখছেন তিনি? ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এ মন খুলে সব প্রশ্নেরই জবাব দিলেন লাল-হলুদের নতুন বিদেশি মাদিহ তালাল। শুনলেন শিলাজিৎ সরকার। 

Advertisement

প্রশ্ন : একটা মরশুম ভারতে খেলে ফেললেন। কেমন অভিজ্ঞতা হল? ইউরোপের থেকে কতটা আলাদা এদেশের ফুটবল?
মাদিহ : ভারতে ফুটবলটা ইউরোপের থেকে আলাদা, অন্যরকম। এখানে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক ফুটবল হয়। কিন্তু ইউরোপে সময় সময় রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলা হয়। তবে মূল পার্থক্যটা তৈরি করেন সমর্থকরা। এদেশে সমর্থকরা অসাধারণ। বিশেষত কলকাতায়। আইএসএলের সময় দুটো ম্যাচ খেলতে এসেছি। প্রতিবারই দেখেছি যে গ্যালারি উপচে যায় সমর্থকদের ভিড়ে। ওঁরা সবসময় ফুটবলারদের পাশে থাকেন। আমি প্রতিবারই এখানে অনুভব করেছি, এই শহরটা ফুটবলের শহর।

প্রশ্ন : তা হলে তো কলকাতার সঙ্গে আপনার সম্পর্কটা এখনই অনেকটা দৃঢ় হয়ে গিয়েছে?
মাদিহ : দেখুন, কলকাতা থেকেই আমার ভারতে ফুটবল জীবন শুরু। কারণ আমি ডুরান্ড কাপ চলাকালীন পাঞ্জাব এফসি-তে এসেছিলাম। তখন দল এখানেই ছিল। তবে পরে যোগ দেওয়ায় ডুরান্ডে খেলা হয়নি। আবার আইএসএলে নিজের প্রথম ম্যাচটা কলকাতাতেই খেলেছি, মোহনবাগানের বিরুদ্ধে। পরে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধেও খেলেছি। দু’বারই অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়েছে।

প্রশ্ন : আপনার কাছে তো আইএসএলে আরও ক্লাবের প্রস্তাব ছিল। ইস্টবেঙ্গলেই কেন সই করলেন?
মাদিহ : সবচেয়ে বড় কারণ, কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত। কোচ যেভাবে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছেন, সেটাই আমাকে লাল-হলুদে নিয়ে এসেছে। দেখুন, জানি গত আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের ফল ভালো হয়নি। কিন্তু দু’টো নকআউট প্রতিযোগিতাতেই ফাইনাল খেলেছে, একটায় চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। সেই সাফল্যের উপর দাঁড়িয়ে একটা সুন্দর এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে ওরা, ভবিষ্যতের জন্য। আমার সেটা খুব পছন্দ হয়েছে। আরও একটা কারণ হল, কলকাতা শহর। এই শহরটা ভারতের অন্য অনেক শহরের থেকে এগিয়ে। সমর্থকরাও দুর্দান্ত। সেটাও একটা কারণ। তাছাড়া ইস্টবেঙ্গেল দেশের অন্যতম ঐতিহ্যশালী ক্লাব, আগামী মরশুমে এএফসি-তে খেলবে। আমি কীভাবে ইস্টবেঙ্গলে খেলার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতাম বলুন?

[আরও পড়ুন: ‘একশো বছর পরেও ইংরেজদের ভয় দেখাচ্ছেন’, ভারত জিততেই ‘বাপু’ অক্ষরকে নিয়ে মিমের বন্যা

প্রশ্ন : অর্থাৎ কোচের ডাকে ইস্টবেঙ্গলে এসেছেন আপনি। কুয়াদ্রাতের সঙ্গে আপনার ঠিক কী আলোচনা হয়েছে?
মাদিহ : কোচ আমাকে অনেক কিছুই বলেছেন। ক্লাবের ইতিহাস নিয়ে। সমর্থকদের নিয়ে। কলকাতা শহর নিয়ে। আবার ক্লাবের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এই দলে আমাকে কোচ কীভাবে ব্যবহার করতে চাইছেন, তার স্বচ্ছ ধারণা দিয়েছেন। যে কোনও ফুটবলারের কাছে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কুয়াদ্রাতের আমলে ইস্টবেঙ্গল দু’টো প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলেছে। এমন কোচের দলে খেলার সুযোগ একজন প্লেয়ারের কাছে বোনাস। এক কথায় বলতে পারি, ক্লাবের পরিকল্পনা আর কোচের কথা– দুটোই আমার খুব পছন্দ হয়েছে।

প্রশ্ন : আর ক্লেটন সিলভা? ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলেননি?
মাদিহ : ক্লেটনের সঙ্গে এরমধ্যে কথা হয়নি। তবে আগে হয়েছে, আমাদের শেষ সাক্ষাতের ম্যাচে। ও দুর্দান্ত ফুটবলার, সঙ্গে ভালো মানুষও। এরপর তো রোজই কথা হবে আমাদের (হাসি)।

প্রশ্ন : দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকোস আইএসএলে সর্বোচ্চ স্কোরার। ক্লেটন সুপার কাপে সর্বোচ্চ স্কোরার। ডেভিড লালহানসাঙ্গা ডুরান্ড কাপের সর্বোচ্চ স্কোরার। আর আপনি গত আইএসএলে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট করেছেন। এমন তিন ফরোয়ার্ডের সঙ্গে এক দলে খেলতে চলেছেন। কী মনে হচ্ছে?
মাদিহ : আমি খুব উত্তেজিত। গত মরশুমের সেরা দুই স্কোরারের সঙ্গে খেলতে চলেছি। একজন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের কাছে এর থেকে ভালো পরিস্থিতি হতে পারে না। মাঠে আমার কাজটা সহজ হয়ে যাবে দিমিত্রিয়স-ক্লেটনরা থাকলে। আর ডেভিডও প্রতিভাবান। আশা করছি, সবাই মিলে সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটাতে পারব।

প্রশ্ন : গত আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের নকআউটে যেতে না পারার অন্যতম কারণ আপনি...
মাদিহ : (প্রশ্ন শেষ না করতে দিয়েই) জানতাম এই প্রশ্নটা করবেনই। দেখুন, আমি একজন পেশাদার। যখন যে দলের হয়ে খেলি, তাদের হয়ে সেরাটাই দিই। ইস্টবেঙ্গলের হয়েও সেরাটা দেব। গত মরশুমটা আমার ভালোই গিয়েছে। তবে আরও ভালো খেলার ক্ষমতা আছে আমার। লাল-হলুদ জার্সিতেও নিজের একশো শতাংশ দেব।

প্রশ্ন : দীর্ঘদিন ইস্টবেঙ্গল জাতীয় স্তরে লিগ জেতেনি। বলার মতো একটা ট্রফি এসেছে ১২ বছর পর। শুরু থেকেই সাফল্য দেওয়ার চাপ থাকবে আপনার উপর। কীভাবে দেখছেন বিষয়টা?
মাদিহ : চাপ যে সবসময় খারাপ, তা নয়। বড় ক্লাবে খেলার চাপ তো নিতেই হবে। আর চাপ থাকলে নিজের সেরাটা দিতে সুবিধা হয় আমার। তাই চাপ আমার কাছে ইতিবাচক বিষয়। চাপ একজন প্লেয়ারের উন্নতিতে সাহায্য করে।

প্রশ্ন : কলকাতার ফুটবল নিয়ে আপনি অনেক কথাই শুনেছেন, জেনেছেন। ডার্বি নিয়ে খোঁজ নিয়েছেন?
মাদিহ : অবশ্যই। সমর্থকদের উন্মাদনা, পরিবেশ আর উত্তেজনার বিচারে এটাই আমার কাছে টিভিতে দেখা সেরা ম্যাচ। আমি লাল-হলুদ জার্সিতে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলার জন্য মুখিয়ে আছি। তবে আমি শুধু ডার্বি নিয়ে ভাবছি না। ডার্বি যে স্পেশাল, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু এর বাইরে বাকি ম্যাচেও আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ ডার্বি হবে মাত্র দু’টো। আর অন্যান্য ক্লাবের বিরুদ্ধে ম্যাচ হবে অনেক বেশি। সেগুলোয় জেতাটাও জরুরি। তবে আমি সব ডার্বিই জিততে চাই। কারণ তাতে আমাদের সমর্থকরা খুশি হবেন।

প্রশ্ন : প্রতিপক্ষ হিসাবে মোহনবাগান কেমন দল?
মাদিহ : মোহনবাগান দারুণ দল। আইএসএল শিল্ড জিতেছে। ডুরান্ড কাপ জিতেছে। আইএসএল কাপে রানার্স। দুর্দান্ত সব ভারতীয় ফুটবলার আছে ওদের দলে। বিদেশিরাও ভালো। তবে কী জানেন, মরশুমের শুরুতে সব দলই শূন্য থেকে শুরু করে।

প্রশ্ন : আপনার সদ্য প্রাক্তন ক্লাবের অনেকেই বর্তমান ক্লাবে খেলে গিয়েছে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন আসার আগে?
মাদিহ : শুধু জুয়ান মেরা গঞ্জালেসের সঙ্গে কথা বলেছি। ও আমাকে কলকাতা নিয়ে, ইস্টবেঙ্গল নিয়ে প্রচুর কথা বলেছে। আর পুরোটাই ইতিবাচক। ও আমাকে বলেছিল, ডাক পেয়েছ যখন চলে যাও। ওই শহর, ওই ক্লাব, ক্লাবের সমর্থক– তোমাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দেবে।

প্রশ্ন : আপনি ইস্টবেঙ্গলে আসছেন শুনে লাল-হলুদ সমর্থকরা বেশ উত্তেজিত। সেই উত্তেজনা টের পেয়েছেন?
মাদিহ : আমি এখন ভারতের বাইরে। তবে এখান থেকেই টের পাচ্ছি যে সমর্থকরা আমাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে। কারণ সোশাল মিডিয়ায় অগুনতি মেসেজ পেয়েছি আমি লাল-হলুদ সমর্থকদের। কলকাতা গেলে না জানি কতটা ভালোবাসা পাব।

[আরও পড়ুন: কোপা যুদ্ধে সামনে প্যারাগুয়ে, ব্যর্থতা ভুলে সাম্বার ছন্দে ফিরতে চাইছে ব্রাজিল]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • এদেশে সমর্থকরা অসাধারণ। বিশেষত কলকাতায়।
  • আমি খুব উত্তেজিত। গত মরশুমের সেরা দুই স্কোরারের সঙ্গে খেলতে চলেছি।
  • মোহনবাগান দারুণ দল। আইএসএল শিল্ড জিতেছে। ডুরান্ড কাপ জিতেছে। আইএসএল কাপে রানার্স।
Advertisement