সব্যসাচী বাগচী: বিনোদ কাম্বলি (Vinod Kambli), বিরাট কোহলি (Virat Kohli) পর এবার যশস্বী জয়সওয়াল (Yashasvi Jaiswal)। টেস্টে তৃতীয় ভারতীয় হিসাবে পরপর দুটি ডবল সেঞ্চুরি করার বিরল রেকর্ড গড়লেন টিম ইন্ডিয়ার (Team India) তরুণ ওপেনার। বুঝিয়ে দিলেন শচীন তেণ্ডুলকর (Sachin Tendulkar) তাঁর প্রশংসায় ‘যশস্বী ভব’ লিখে মোটেও ভুল করেননি।
তবে যশস্বীর ‘যশ’ ছড়ানো কীর্তি অন্য একটি কারণেও স্পেশাল। দুই বাঁহাতি ব্যাটারকে একসূত্রে মেলাতে লেগে গেল দীর্ঘ ৩১টা বছর। মুম্বইয়ের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে টেস্টের পরপর দুটি ডবল সেঞ্চুরি। কাম্বলির রেকর্ডে ভাগ বসালেন যশস্বী। ১৯৯৩ সালে ইংল্যান্ড ও জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে পরপর ডবল সেঞ্চুরি করেছিলেন কাম্বলি। সাহেবদের বিরুদ্ধে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ২২৪ রান করার পর, দিল্লির তৎকালীন ফিরোজ শাহ কোটলায় জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ২২৭। ঠিক সেভাবেই বাইশ গজে দাপট দেখালেন যশস্বী। বিশাখাপত্তনমে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২৯০ বলে ২০৯ রান করার পর, এবার আরও বিস্ফোরক মেজাজে ২৩৬ বলে ২১৪ রানে অপরাজিত রইলেন।
[আরও পড়ুন: Exclusive: সিন্ধু-গায়ত্রীদের ঐতিহাসিক জয় দেশের ব্যাডমিন্টনে নবজাগরণ ঘটাবে, মনে করেন গোপীচাঁদ]
তবে এবারের ডবল সেঞ্চুরি কিন্তু এত সহজে আসেনি। ইংল্যান্ডের ১৩৩ বলে ১০৪ রান করার পরেই পিঠের ব্যথা শুরু হয়। মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন যশস্বী। সেই সময় তাঁর নিয়ে চোট নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। সবার চিন্তা ছিল তিনি আদৌ বাইশ গজে নামতে পারবেন তো? তবে সব হিসেব বদলে দিলেন তিনি। যশস্বী শুধু ক্রিজেই এলেন না, মারকুটে মেজাজ বজায় রেখে সেরে নিলেন টেস্ট তাঁর দ্বিতীয় ডবল সেঞ্চুরি।
মুম্বই থেকে ছাত্রের এমন দানবীয় ইনিংস তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলেন ছোটবেলার কোচ জ্বালা সিং (Jwala Singh)। সংবাদ প্রতিদিন.ইন-কে টেলিফোনে বলছিলেন, “বিশাল মনের জোর। নাহলে ব্যাক স্প্যাজম (পড়ুন, পিঠে ব্যথা) হওয়ার পরেও ছেলেটা ব্যাট হাতে নেমে গেল! আমার ছাত্র একটাই মন্ত্রে বিশ্বাস করে। সেটা হল শুধু লড়াই। ছোটবেলা থেকে কষ্ট খুব কাছ থেকে দেখেছে। পরিবার ছাড়া একা থেকেছে। এই ব্যাপারগুলোই ওকে আরও কঠিন করে তুলেছিল।”
প্রিয় ছাত্র দেশের মাঠে মাত্র ১৬ দিনের ব্যবধানে দুটি ডবল সেঞ্চুরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তবে এমন মহাকাব্যিক ইনিংস স্টেডিয়ামে বসে দেখার সৌভাগ্য তাঁর হল না। তবে তাতে কি! জ্বালা সিং যোগ করলেন, “স্টেডিয়ামে বসে দেখলে তো ভালোই লাগত। কিন্তু যশস্বী ছাড়া আমার তো অন্য ছাত্রও রয়েছে। তাদের দিকটাও তো দেখতে হবে।”
গত বছরের ১৩ জুলাই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় দিন শতরান করেছিলেন যশস্বী। ডমিনিকার বাইশ গজে ঘটেছিল ড্রিম ডেবিউ। এর পর কেরিয়ারের ষষ্ঠ টেস্ট খেলতে নেমে ইংল্যান্ডের করেছিলেন প্রথম ডবল সেঞ্চুরি। আর এবার পরের টেস্টেই সেরে নিলেন লাল বলের ক্রিকেটে দ্বিতীয় ডবল সেঞ্চুরি।
জন্ম উত্তরপ্রদেশে। কর্ম মুম্বইয়ে। সেই বিখ্যাত আজাদ ময়দানে। এই মাঠ থেকেই ভারতীয় ক্রিকেটে উঠে এসেছেন শচীন তেণ্ডুলকর, বিনোদ কাম্বলির মতো ক্রিকেটারেরা। স্কুল ক্রিকেটে শচীন এবং কাম্বলির ৬৬৪ রানের জুটি হয়েছিল এই ময়দানেই। সেখানেই ক্রিকেট শেখা শুরু করেছিলেন যশস্বী। এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল ছোটবেলার লড়াই। সেটাই কি এই তরুণকে আরও উজ্জবিত করেছে?
জ্বালা সিং ফের বললেন, “১৯৯৩ সালে বিনোদ কাম্বলির সেই ইনিংস দেখার পর আমি ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছিলাম। প্রয়াত রমাকান্ত আচরেকরের অধীনে শুরু হয় আমার ক্রিকেট পাঠ। যশস্বীও ঠিক সেভাবেই নিজেকে তৈরি করেছে। লড়াকু মানসিকতার জন্যই ‘খারুস’ হয়ে উঠেছে যশস্বী।”
দেশের হয়ে এখনও একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেনি। টেস্টের পাশাপাশি টি-২০ ফরম্যাটেও নিজের জাত চিনিয়েছিলেন। ১৭টি টি-২০ ম্যাচে তাঁর রান ৫০২। ১৬১.৯৩ স্ট্রাইক রেট বজায় রেখে করে ফেলেছেন ১টি শতরান ও ৪টি অর্ধ শতরান। এবার এহেন যশস্বী টেস্ট ক্রিকেটেও তাঁর ‘যশ’ ছড়িয়ে যাচ্ছেন। ওঁর কোচের শুধু একটাই প্রার্থনা যশস্বী ভবিষ্যৎ যেন অন্ধকারে চলে যাওয়া কাম্বলির মতো না হয়।