স্টাফ রিপোর্টার: পাঁচ বছর আগে প্যারা সুইমিংয়ে অংশ নেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। বলে দেওয়া হয়েছিল, তিন বারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন বাঙালি প্যারা সাঁতারু অমর্ত্য চক্রবর্তী প্যারা সুইমিং ইভেন্টে (Para Athlete) অংশ নেওয়ার উপযুক্ত নন। বুধবার অমর্ত্যর জীবন ও দেশের ক্রীড়া প্রশাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই চিরকালের মতো শেষ হয়ে গেল। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি চলে গেলেন ইহলোক ছেড়ে, মাত্র উনিশ বছর বয়সে। নয়াদিল্লির হাসপাতালে।
আর পুত্রের মৃত্যুশোক সামলানোর পাশাপাশি অমর্ত্যর পিতা অমিতোষ চক্রবর্তী বুঝে উঠতে পারছেন না, এবার তিনি করবেন কী? আর দু’মাস পরে চাকরি থেকে অবসর। কিন্তু ছেলের চিকিৎসার খরচ মেটাতে তিনি দেউলিয়া। বিপুল ঋণের দায় মাথায়। যতুটুকু যা সঞ্চয় ছিল, সব শেষ। প্রয়াত প্যারা সাঁতারুর পিতার অভিযোগ, মৃত্যুপথযাত্রী ছেলের কথা বারবার দেশের ক্রীড়ামন্ত্রক এবং প্যারা অলিম্পিক কমিটিকে জানানো সত্ত্বেও কোনও লাভ হয়নি। কেউ ন্যূনতম সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।
[আরও পড়ুন: মাদক পাচারের অপরাধে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ভারতীয় বংশোদ্ভূতকে ফাঁসির সাজা]
“ভিক্ষা করতে হবে যা অবস্থা। একটা টাকাও আর নেই। চিকিৎসার খরচ মেটাতে ঋণ নিয়েছিলাম প্রচুর। জানি না কী ভাবে সেগুলো মেটাব,” বুধবার বলে দিয়েছেন শোকার্ত অমিতোষ। সঙ্গে পুত্রশোকে কাতর পিতার হাহাকার, “এটাই এ দেশে জাতীয় চ্যাম্পিয়নের পরিণতি। প্যারা ন্যাশনালসে আমার ছেলে ২০১৭ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আর আজ দেখুন। কেউ এগিয়ে এল না আমাদের এই বিপদের দিনে।”
অর্থাভাবে চেন্নাইয়ের বড় হাসপাতাল বা নয়াদিল্লির এইমসে ছেলেকে ভর্তি করাতে পারেননি অমিতোষ। বদলে নয়াদিল্লিরই জিবি পন্থ হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। গত বছর ডিসেম্বরে অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছিল অমর্ত্যর। সেই অস্ত্রোপচারের পর বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। কিন্তু আবার অসুস্থ হওয়ায় ফের তাঁকে নয়াদিল্লির হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। “দেশের প্যারা অলিম্পিক কমিটি, ক্রীড়ামন্ত্রক, কোথায় চিঠি লিখিনি আমরা? কিন্তু কেউ সাহায্য করেনি। কিছুটা অর্থসাহায্য পেলেও হয়তো ছেলেটাকে বাঁচাতে পারতাম,” বুকফাটা আর্তনাদ করে বলে ওঠেন সন্তান হারা পিতা। অমিতোষের আর্থিক অবস্থা যা, তাতে কী করে হাওড়ার সালকিয়ার বাড়িতে ছেলের মৃতদেহকে ফেরত আনবেন, জানেন না। কারণ, সঙ্গে ফ্লাইট ভাড়াটুকু পর্যন্ত নেই।হায় রে ভারতবর্ষ!