দুলাল দে, দোহা: স্পেন (Spain) ম্যাচের আগে প্রথাগত সাংবাদিক সম্মেলনে কোনও ফুটবলার না নিয়ে আসায় জার্মানিকে (Germany) দশ হাজার ইউরো জরিমানা করেছে ফিফা (FIFA)। সাংবাদিক সম্মেলনের থেকেও ফুটবলারদের বিশ্রামে থাকা কতটা জরুরি, তা বোঝানোর জন্য প্রচুর ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন কোচ হ্যান্সি ফ্লিক। কোস্টারিকার (Costa Rica) বিরুদ্ধে মরণ-বাঁচন ম্যাচ খেলতে নামার আগে আর কোনও বিপ্লবের রাস্তায় হাঁটেননি জার্মান কোচ। আর্থিক জরিমানার ভয়ে রাইট ব্যাক লুকাস ক্লোস্টারম্যানকে নিয়ে এসেছিলেন সাংবাদিক সম্মেলনে।
যতদূর শোনা যাচ্ছে, নিজের ইচ্ছেয় ফুটবলার নিয়ে ফ্লিক সাংবাদিক সম্মেলনে এসেছিলেন, এরকমটা নয়। নির্দেশটা এসেছে জার্মান ফুটবল ফেডারেশন থেকে। জাপান আর স্পেনের কাছে পয়েন্ট হারিয়ে জার্মানি এখন যে অবস্থায় রয়েছে, তাতে ফেডারেশন কর্তাদের আদেশ অগ্রাহ্য করবেন, সাধ্য কী ফ্লিকের? চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা গ্রুপের প্রথম দুটো ম্যাচ পরপর জিততে পারবে না, এরকমটা জার্মান ফুটবল ইতিহাসে একবারই দেখা গিয়েছিল ১৯৩৮ সালের বিশ্বকাপে। তারপর থেকে সেই ঐতিহ্যশালী জার্মান ফুটবলকে কালিমালিপ্ত অধ্যায়ের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছেন ফ্লিক।
[আরও পড়ুন: ‘হিন্দি আগ্রাসন’ বরদাস্ত নয়, বিক্ষোভের জেরে তামিলনাড়ুর স্টেশনের সাইনবোর্ডে সরল হিন্দি শব্দ]
গত যে ১৮টি বিশ্বকাপে জার্মানি খেলেছে, কখনও এরকম অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়নি জার্মানিকে। প্রথমে জাপানের কাছে হার। তারপর স্পেনের সঙ্গে ড্র করে গ্রুপ থেকে পরের রাউন্ডে যাওয়ার পরিস্থিতি এখন এতটাই কঠিন হয়ে উঠেছে জার্মানির জন্য, তাতে বৃহস্পতিবার কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে জিতলেও বলা যাচ্ছে না, ফ্লিকের দল পরের রাউন্ডে যাচ্ছেই। কারণ, জাপান-স্পেনের ম্যাচের ফলাফলের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে তাদের। এসব তথ্যে অবশ্য ঘাবড়াচ্ছেন না ফ্লিক। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বরং কিছুটা আবেগপ্রবণই হয়ে পড়েছিলেন। বলছিলেন, ‘‘আসলে ঠিকঠাক ফল পাচ্ছি না বলে আমাদের পারফরম্যান্স নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। দেখে নেবেন, এই বিশ্বকাপে কোস্টারিকা ম্যাচটাই হবে আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর ম্যাচ।’’
বৃহস্পতিবার জার্মানি যদি কোস্টারিকাকে হারিয়ে দেয় আর স্পেনের কাছে হার মানতে বাধ্য হয় জাপান, তা হলে জার্মানিকে আর কোনও দিকে তাকাতে হবে না। সোজা পরের রাউন্ডে। আর এই হিসাবের অন্যথা হলে অনেক ‘যদি-কিন্তু’র দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে জার্মান কোচ হ্যান্সি ফ্লিককে। তাতে অবশ্য ঘাবড়াচ্ছেন না তিনি।
[আরও পড়ুন:সাময়িক স্বস্তিতে অনুব্রত, ৭ ডিসেম্বর অবধি স্থগিত কেষ্টর দিল্লি যাত্রা]
দলের অধিনায়ক ম্যানুয়েল নয়্যার ভাবতেই চান না, ম্যাচের ফলাফল কী হলে তবে তাঁরা পরের রাউন্ডে যাবেন। তিনি বরং ভাবছেন, স্পেনের বিরুদ্ধে দলের পারফরম্যান্স নিয়ে। ‘‘ভাবুন, সেদিন আমাদের পারফম্যান্স কতটা ভাল ছিল। আমরা যে বিশ্বকাপে এখনও বেঁচে আছি, সেটা তো স্পেনের বিরুদ্ধে আমাদের অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্যই,’’ বলছিলেন তিনি।
এমনিতে অন্যান্য দলের প্র্যাকটিসে যে আবহ থাকে, তা কখনও জার্মানির প্র্যাকটিসে দেখা যাবে না। আবেগের বিন্দুমাত্র নেই। যেন একটা মিশনে এসেছেন ফুটবলাররা। সময় ধরে রোবটের মতো কাজ করে চলেছেন। যে কারণে কোস্টা রিকা ম্যাচের আগে যথেষ্ট চাপে থাকলেও বুঝতে দিতে চাইছেন না কোচ ফ্লিক। সাংবাদিক সম্মেলনের একেবারে শেষে যে কথাগুলি বললেন, সেটাই জার্মান ফুটবল সম্পর্কে বিশ্বাস করে এসেছেন সমর্থকরা। ‘‘এত তাড়াতাড়ি জার্মানিকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় জানাবেন না। এখনও অনেক চমক বাকি আছে।’’ বিশ্বকাপে রুমেনিগের গোলে জার্মানির ফিরে আসা এখনও কেউ ভোলেনি। আর ভোলেনি বলেই জার্মান দল সম্পর্কে বলা হয়, শেষ বাঁশি বাজার আগে জার্মানি সম্পর্কে শেষ কথা না বলাই ভাল।