shono
Advertisement

‘ভারতই ফেভারিট, তবে দক্ষিণ আফ্রিকা ভোগাবে’, টেস্ট সিরিজের আগে অকপট ডোনাল্ড

২৬ ডিসেম্বর থেকে সেঞ্চুরিয়নে শুরু হচ্ছে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম টেস্ট।
Posted: 02:26 PM Dec 25, 2023Updated: 07:33 PM Dec 25, 2023

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: অ‌্যালান অ‌্যান্টনি ডোনাল্ডের (Allan Donald) পুরনো স্বভাবটা আজও গেল না! তা হল, নিজের বোলিংয়ের ভঙ্গিমায় সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর-টুত্তর দেওয়া।
যা আগুনে। যা সোজাসাপ্টা।
আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে সেঞ্চুরিয়নে শুরু হয়ে যাচ্ছে ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা (India vs South Africa) টেস্ট ম‌্যাচ। ক্রিকেট পৃথিবীর সম্ভবত একজন বিশেষজ্ঞও পড়ে নেই যিনি কি না আসন্ন টেস্ট সিরিজে ভারতকে এগিয়ে রাখেননি। সর্বত্র বলাবলি চলছে যে, দীর্ঘদিনের দক্ষিণ আফ্রিকা অভিশাপ কাটানোর এটাই মোক্ষম সুযোগ ভারতের সামনে। ক্রিকেট ব্রহ্মাণ্ডে ‘সাদা বিদ‌্যুৎ’ নামে পরিচিত ডোনাল্ডও মনে করেন যে, আসন্ন টেস্ট সিরিজে ভারতই ফেভারিট। শাপ কাটানোর সেরা সম্ভাবনা। কিন্তু তার পরেও নিরঙ্কুশ ভাবে তিনি রোহিত শর্মার টিমকে তাজ এখনই দিয়ে দিতে রাজি নন!
কেন? কী কারণ? 

Advertisement

[আরও পড়ুন: ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ‘শত্রু’-কে খুঁজে বের করলেন অশ্বিন! কে সেই ব্যক্তি?]

‘‘মানছি, দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের ঘরের মাঠে হারানোর এবারই সেরা সুযোগ ভারতের। কিন্তু এটাও বলব, দক্ষিণ আফ্রিকাকে দক্ষিণ আফ্রিকায় হারানো পৃথিবীর কঠিনতম কাজের একটা। গতকাল খবরে দেখলাম, পূর্ণ শক্তির সাউথ আফ্রিকা বোলিংকে তৈরি করার চেষ্টা চলছে। আনরিখ নখিয়া বহু দিন টিমের বাইরে। কাগিসো রাবাডা সদ‌্য পায়ের চোট সারিয়ে ফিরেছে। এনগিডি ফিরছে গোড়ালির চোট সারিয়ে। আশা করব, ওরা সবাই খেলবে। কিন্তু কত জন পারবে শেষ পর্যন্ত নামতে, টস বলবে,’’ বলছিলেন ডোনাল্ড। যাঁকে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ নিয়ে গোটা কয়েক প্রশ্ন পাঠানোর সুযোগ পাওয়া গিয়েছিল। ‘রেভস্পোর্টস’-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে।
মুশকিল হল, দক্ষিণ আফ্রিকা যেমন চোটের জন‌্য নখিয়াকে পাচ্ছে না। ভারত তেমন আবার পাচ্ছে না মহম্মদ সামিকে। চোটের কারণে। দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বকালের অন‌্যতম শ্রেষ্ঠ বোলারের যা নিয়ে দেখা গেল বেশ মন খারাপ। বলছিলেন, ‘‘সামি খেলবে না, ভাবলেই খারাপ লাগছে। ও আমার প্রিয় পেসারদের একজন। সামির চেয়ে বেটার ‘রিলিজ’ কোনও পেসারের মধ‌্যে সাম্প্রতিক কালে দেখেছি বলে তো মনে পড়ছে না। নিঃসন্দেহে সামির না থাকাটা বড় ধাক্কা। কিন্তু ভারতের হাতে একটা জসপ্রীত বুমরা আছে। একটা মহম্মদ সিরাজ রয়েছে। কী জানেন, গত কয়েক বছরে অসম্ভব সেটেলড একটা টেস্ট টিম তৈরি করেছে ভারত। যা দেশে ও বিদেশে, সর্বত্র ভাল পারফর্ম করতে পারদর্শী।’’
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ৭২ টেস্টে ৩৩০ উইকেট নেওয়া কিংবদন্তি পেসারের অভিমত হল, সেঞ্চুরিয়ন পিচে শুধুমাত্র পেসাররা সাহায‌্য পাবেন না। একই সঙ্গে ব‌্যাটাররাও সে পিচে খেলতে পছন্দ করবেন। বিশেষ করে ভারতীয় ব‌্যাটাররা। ‘‘রান উঠবে সেঞ্চুরিয়নে। সেঞ্চুরিয়ন পিচে বল ভালো আসে ব‌্যাটে,’’ বলতে থাকেন ডোনাল্ড। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা? প্রোটিয়া ব‌্যাটিং লাইন আপ পারবে ভারতীয় বোলিংয়ের মহড়া নিতে? শেষ বার ভারত যখন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যায়, টেস্ট সিরিজ জয়ের খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন বিরাট কোহলিরা। হাসিম আমলা, এবি ডে’ভিলিয়ার্সরা শেষ পর্যন্ত যা হতে দেননি। এবার তাঁরা কেউ নেই। সম্ভব এরপর বুমরাদের সামলানো?
প্রথমে কিছুটা সন্ধিগ্ধ শোনায় ডোনাল্ডের গলা। বলেন, ‘‘এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, ফাফ-আমলা-এবিদের আমরা মিস করব। ওরা প্রত‌্যেকে গ্রেট। এটাও জানি, আমাদের ব‌্যাটিং লাইন আপ গত কয়েক বছরে দারুণ কিছু করেনি টেস্টে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটই তোমার ক্ষমতার পরীক্ষার প্রকৃত মঞ্চ। জানি, আমাদের দলে তরুণ ব‌্যাটার বেশি। দেখা যাক, কী করে।’’ পরে যেন গলার জোর ফিরে পান। বলেন, ‘‘তবে টিমের কোচ শুকরাড কনরাডের উপর আমার ভরসা আছে। ও অসম্ভব আগ্রাসী। দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজ হারুক বা জিতুক, কনরাডের কোচিং স্টাইল আমরা এ সিরিজে প্রভাব ফেলতে দেখতেই পারি। দক্ষিণ আফ্রিকা কিন্তু ছেড়ে কথা বলবে না।’’
তা, আগ্রাসন তাঁর নিজেরও কিছু কম ছিল না! কে ভুলেছে ’৯৬-’৯৭ সালে ভারতের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর? কে ভুলেছে সেই টেস্ট সিরিজে শচীন তেণ্ডুলকর-রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে তাঁর আগুনে ‘ডুয়েল’? ডোনাল্ডকে মনে করিয়ে দিলে, হাসেন তিনি। স্মৃতি হাতড়ে বলে দেন, ‘‘ডারবান টেস্টটা সে বার তিন দিনেরও কম সময়ে শেষ হয়ে গিয়েছিল, তাই না?’’ সঙ্গে জুড়ে দেন, ‘‘সে বারই পরে একবার রাহুলের সঙ্গে আমার একবার লেগে গিয়েছিল। বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলাম আমি। আজ মনে পড়লে হাসি পায়। কী সমস্ত প্লেয়ার ছিল ওরা! শচীন। দ্রাবিড়। গাঙ্গুলি। বিশেষ করে শচীন।’’ চটজলদি ‘সাদা বিদ‌্যুৎ’-কে ধরিয়ে দেওয়া হল যে, এবারও যে দুই মহারথী আসছেন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে, তাঁরাও ক্রিকেট শৈলীতে পূর্বসুরিদের চেয়ে কিছু কম যান না। রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি! যাঁদের এ বছরের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর খুব সম্ভবত ক্রিকেটজীবনের শেষও বটে!
‘‘তাই কি? শেষ সফর? সেটা যদি হয়, ওরা দু’জনেই কিন্তু আসবে দক্ষিণ আফ্রিকায় নিজেদের ক্রিকেট অহঙ্কারের ছাপ রেখে যেতে। আরসিবিতে থাকার সময় কোহলিকে খুব কাছ থেকে দেখেছি আমি। আলাদা করে কোনও মোটিভেশন প্রয়োজন হয় না ওর। আর তাই এটাই যদি বিরাটের শেষ প্রোটিয়া সফর হয়, তা হলে ধরে নিন ও চাইবে দক্ষিণ আফ্রিকা বোলিংকে ফালাফালা করে ছেড়ে দিতে! সেক্ষেত্রে বিরাট-রোহিতই কিন্তু সবচেয়ে বড় আতঙ্ক আমাদের জন‌্য,’’ গড়গড়িয়ে বলে শেষ করে দেন ডোনাল্ড। নিজের দেশের প্রতি প্রচ্ছন্ন এক সতর্কবার্তা দিয়ে।
হে তেম্বা বাভুমা, দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক, আপনি শুনছেন?

[আরও পড়ুন: আইপিএল আশীর্বাদ না বিসিসিআইয়ের ঐতিহাসিক ভুল? কড়া জবাব দিলেন গম্ভীর]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement