দুলাল দে: বাঙ্কারহিলের মাধ্যমে মুম্বই স্টক এক্সচেঞ্জে নথিভুক্ত স্পোর্টস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি ‘টয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ’—কে ৫১ শতাংশ শেয়ার দিয়ে একশো কোটি টাকার চুক্তি করতে চলেছে মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব (Mohammedan Sporting Club)। তারজন্য অবশ্য মহামেডানের আগে, পরে কোনও নাম যুক্ত হচ্ছে না। আর ইনভেস্টরকে বিশাল পরিমাণ শেয়ারও দিতে হচ্ছে না। ক্লাবের কাছে থাকবে ৫০ শতাংশ শেয়ার। ইনভেস্টরের কাছে মাত্র তার এক শতাংশ বেশি। অর্থাৎ, ৫১ শতাংশ। এতেই ২০২৩—২৪এ আইএসএল খেলার জন্য একশো কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে রাজি হয়ে গিয়েছে ‘টয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ’। অনেকটা নিঃশব্দেই নতুন ইনভেস্টরের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারটি এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে মহামেডান স্পোর্টিং। টয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ হচ্ছে একমাত্র স্পোর্টিং কোম্পানি, যারা মুম্বই স্টক এক্সচেঞ্জে নথিভুক্ত। স্পোর্টিং অ্যাকটিভিটি ছাড়াও ফিটনেস, ফ্যাশন, ফিল্ম, এন্টারটেইনমেন্টেও বিনিয়োগ করছে টয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ। রাজস্থানের একটি ক্রিকেট লিগও কিনে নিয়েছে তারা। দুবাই এবং সৌদি আরব থেকে বিভিন্ন স্পোর্টিং অ্যাকটিভিটিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে এই কোম্পানিতে।
প্রখ্যাত প্রাক্তন বক্সার মাইক টাইসন (Mike Tyson) রয়েছেন টয়াম স্পোর্টসের বোর্ডে। আছেন ভারতীয় মহিলা রেসলার গীতা ফোগটের বাবাও। এই টয়াম ইন্ডাস্ট্রিজের লক্ষ্য এবার কলকাতার মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। এর পিছনে একটাই লক্ষ্য পৃথিবী জুড়ে লক্ষ লক্ষ মহামেডান সমর্থকদের, তাদের কোম্পানির শেয়ার কিনতে আগ্রহী করে তোলা।
[আরও পড়ুন: আমেরিকায় খেলতে যাচ্ছেন রোহিতরা, ঘোষিত ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের পূর্ণাঙ্গ সূচি]
টয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ (Toyam Industries) অবশ্য সরাসরি মহামেডানের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে না। ইনভেস্টর বাঙ্কারহিলের সঙ্গে ছয় বছররের চুক্তি রয়েছে মহামেডান স্পোর্টিংয়ের। যে চুক্তির দু’বছর ইতিমধ্যেই কেটে গিয়েছে। আই লিগের দল চালাতে এই মরশুমে প্রায় ৮ কোটি টাকার মতো খরচ করেছে বাঙ্কারহিল। চুক্তির শর্ত হিসেবে দু’পক্ষর শেয়ারের পরিমাণ ছিল পঞ্চাশ—পঞ্চাশ। কিন্তু ২০২৩-এ আইএসএল খেলার জন্য এখনই প্রস্তুতি শুরু করতে চাইছেন সাদা—কালো কর্তারা। শীর্ষকর্তা কামারুদ্দিন ক্লাবের অন্য কর্তাদের বুঝিয়েছেন, আইএসএল খেলতে গেলে, ভবিষ্যতেও ইনভেস্টরের হাত ধরতেই হবে। আর নতুন করে কোনও ইনভেস্টর এসে ক্লাবের কত শতাংশ শেয়ার চাইবে এবং আরও কী কী শর্ত চাপিয়ে দেবে, আগাম কিছুই বলা যায় না। তার থেকে বাঙ্কারহিলের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল। সেক্ষেত্রে বাঙ্কারহিল যদি আইএসএলের জন্য ইনভেস্টর নিয়ে আসতে চায়, ক্লাবের উচিত পাশে দাঁড়ানো।
এই ভাবেই বাঙ্কারহিল কর্তা দীপক সিং মহামেডান কর্তাদের তিনি বলেন, তিনি মাত্র ৫১ শতাংশ শেয়ার চাইছেন, যা টয়াম ইন্ডাস্ট্রিজকে ট্রান্সফার করবেন। এক্ষেত্রে বাঙ্কারহিলের সঙ্গে চুক্তি হবে টয়াম ইন্ডাস্ট্রিজের। কারণ, টয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তারা মনে করছেন, মহামেডানের ৫১ শতাংশ শেয়ার তাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ হলে, স্টক এক্সচেঞ্জে তাদের শেয়ারের দাম বেড়ে যেতে পারে। যে কারণে, তারা ১০০ কোটি টাকার চুক্তি করতে চাইছেন মহামেডানের সঙ্গে। আর এই চুক্তির ফলে ক্লাবের নামে যেমন পরিবর্তন হবে না, সেরকম জার্সি, লোগো, রঙ সব কিছুই অপরিবর্তিত থাকবে।
কোনওকিছু পরিবর্তন করতে হবে না, অথচ আইএসএল খেলার জন্য ভাল অর্থও পাওয়া যাবে, এটা জেনেই ইনভেস্টরের হাতে ক্লাবের ৫১ শতাংশ শেয়ার ছেড়ে দিতে রাজি হতে চলেছেন কর্তারা। আপাতত কলকাতা লিগের মতো এই মরশুমে নিজেদের মাঠে আই লিগ খেলার জন্যও ক্লাবের পরিকাঠামোর পুরো ভোল বদলে দিতে শুরু করেছেন মহামেডান কর্তারা। যে কোনওদিন এখন মহামেডান মাঠে গেলে, চমকে যেতে হবে। যাঁরা কিশোরভারতী স্টেডিয়ামের মাঠ তৈরি করেছেন, তাঁরাই সুন্দর করে তৈরি করেছেন মহামেডান মাঠ। চারিদিকে শুধুই সবুজে সবুজ।
নিজেদের মাঠে আই লিগ খেলার জন্য, যে রাস্তা দিয়ে কোচ—ফুটবলাররা মাঠে যাবেন, সেই রাস্তায় তৈরি হয়েছে দীর্ঘ টানেল। দ্রুততার সঙ্গে তৈরি হচ্ছে দু’দুটো আধুনিক মানের ড্রেসিংরুম। আই লিগের শর্ত হিসেবে নিজেদের ড্রেসিংরুমের পাশে অ্যাওয়ে দলের জন্যও আধুনিক মানের ড্রেসিংরুম রাখতে হবে। মহামেডান তাঁবুতে এখন তারই প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। সঙ্গে ম্যাচ কমিশনার, রেফারিদের রুমও থাকবে। কিছুদিনের মধ্যে মহামেডান তাঁবুটাও ভেঙে ফেলা হবে। তৈরি হবে দুটো ফ্লোরের আধুনিক ক্লাব। একবছর পর আইএসএল খেলার জন্য বিড করতে গিয়ে, যাতে পরিকাঠামোর দিক থেক কোনও প্রশ্ন না ওঠে, তারই প্রস্তুতি। সঙ্গে ইনভেস্টরের সঙ্গে ১০০ কোটির চুক্তি করে ফেলা।