কৃশানু মজুমদার: বাইশ গজে ব্যাট হাতে ক্রিস গেইল (Chris Gayle) মানেই ছয়ের বৃষ্টি।
ছক্কা মারার জন্য বিখ্যাত মহেন্দ্র সিং ধোনিও (MS Dhoni)। ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালে শ্রীলঙ্কার নুয়ান কুলশেখরকে মারা সেই আইকনিক ছক্কা ভারতীয় ক্রিকেটের রূপকথায় জায়গা করে নিয়েছে।
গেইল-ধোনিদেরও বহু আগে এক ভারতীয়র মারা বিশাল ছক্কা সফরকারী দলের অধিনায়কের প্রশংসা আদায় করে নিয়েছিল।
সেই ভারতীয়র কথা কি আজ আর কেউ মনে রেখেছে? কথায় বলে, চোখের বাইরে মানে মনেরও বাইরে। সদানন্দ বিশ্বনাথও (Sadanand Viswanath) সেরকমই এক বিস্মৃতপ্রায় ক্রিকেটার।
ভারতীয় ক্রিকেটের ভাগ্যবিড়ম্বিত মুখ তিনি। অসামান্য এক প্রতিভা। কিন্তু ভাল করে বিকশিত হওয়ার আগেই ঝরে যেতে হয়েছিল। সেই সদানন্দ বিশ্বনাথ মঙ্গলবার সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে বলছিলেন, ”ক্রিস গেইল অবলীলায় চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম পার করে দিত। মহেন্দ্র সিং ধোনিও বড় বড় সব ছক্কা হাঁকাতো। বাট ক্রেডিট গোজ টু মি।ছক্কা হাঁকিয়ে চিন্নাস্বামীর বাইরেও যে বল পাঠানো সম্ভব, সেটা প্রথম দেখিয়েছিলাম আমিই।” একসময়ের সুদর্শন উইকেটকিপারের এমনটাই দাবি।
[আরও পড়ুন: ২০২৪ বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যেতে পারবেন না, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ফিঞ্চের]
সদানন্দ বিশ্বনাথ নামটা উচ্চারিত হলে ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখের সামনে ফুটে ওঠে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অনুষ্ঠিত বেনসন অ্যান্ড হেজেস কাপ। মেলবোর্নের ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন ভারত। মনে পড়ে যায় রবি শাস্ত্রীর অডি গাড়ির সামনের দিকে বসে পা দোলাচ্ছেন তিনি। তাঁর পাশে বসে মহিন্দর অমরনাথ। গ্যালারিতে উড়ছে ভারতের পতাকা। ভারতীয় ক্রিকেটের চিরদিনের ফ্রেমে জায়গা করে নিয়েছে সেই ছবি।
মেলবোর্ন টু চিন্নাস্বামী। পৃথিবীর দুই প্রান্তের দুই স্টেডিয়াম। কত ইতিহাস তৈরি হয়েছে দুটো স্টেডিয়ামে তার ইয়ত্তা নেই। এই চিন্নাস্বামীতেই একদা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বিরাট এক ছক্কা মেরেছিলেন বিশ্বনাথ। পুরনো সেই দিনের কথা মনে পড়ছে ভারতের প্রাক্তন উইকেটকিপারের।
আর দিন দুয়েক বাদে শুরু হতে চলেছে ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজ। ১৯৪৭-৪৮ সালে প্রথম বল গড়িয়েছিল যে সিরিজের। এবার তার ৭৫ বছর। বিশ্বনাথ বলছেন, ”অস্ট্রেলিয়ার বাঁ হাতি স্পিনার রে ব্রাইট বল করছিল আমাকে। নন স্ট্রাইকিং এন্ডে ছিল রবি শাস্ত্রী। আমি নভজ্যোৎ সিং সিধুর কাছ থেকে ধার করা বিডিএম ব্যাট নিয়ে খেলতে নেমেছিলাম। রে ব্রাইটের বলটা ঠিকঠাক কানেক্ট করেছিলাম। আকাশ ছুঁয়ে বল চিন্নাস্বামীর বাইরে চলে গিয়েছিল।”
১৯৮৬ সালে ভারত সফরে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই সিরিজেই বিখ্যাত টাই টেস্ট হয়েছিল। সিরিজ শুরু হওয়ার আগে বোর্ড প্রেসিডেন্ট বনাম অস্ট্রেলিয়ার খেলা ছিল। আর সেই ম্যাচেই সদানন্দ বিশ্বনাথের ব্যাট থেকে এসেছিল আকাশছোঁয়া ‘সিক্সার’। স্মৃতিচারণ করে বিশ্বনাথ বলছিলেন, ”৭৭ এবং অপরাজিত ৪৬ রানের ইনিংস খেলেছিলাম আমি। আমার ওই ছয় দেখে প্রয়াত ডিন জোন্স বলেছিলেন, এরকম বিশাল ছক্কা মারতে আগে কাউকেই দেখিনি। অস্ট্রেলিয়ার তদানীন্তন ম্যানেজার ববি সিম্পসনও প্রশংসা করেছিলেন আমার শটের। আর শ্রদ্ধেয় অ্যালান বর্ডার তো বলেই ফেলেছিলেন, আকাশ ছুঁয়ে নীচে নামার সময়ে বলের শরীরে হয়তো বরফ লেগে ছিল।”
কিন্তু এতকিছুর পরও বিশ্বনাথের নামের পাশে লেখা মাত্র তিনটি টেস্ট ম্যাচ। ‘সদানন্দ’ ছিল না তাঁর ক্রিকেট জীবন। এখন তিনি আম্পায়ার। আগামী বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাবেন বলে স্থির করেছেন। আসন্ন ভারত-অস্ট্রেলিয়া মহাযুদ্ধের আগে দুই ক্রিকেটীয় শক্তিকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। বলছেন, ”সিরিজ জেতার চেষ্টা করবে ভারত। অস্ট্রেলিয়াও মরণ কামড় দেবে। সব মিলিয়ে দারুণ এক ক্রিকেটযুদ্ধ হবে।”
দুই দেশের ধুন্ধুমার নিয়ে আলোচনা হবে অথচ ভিভিএস লক্ষ্মণ-রাহুল দ্রাবিড়ের মহাকাব্যিক ইনিংসের প্রসঙ্গ উঠবে না, তা আবার হয় নাকি! বিশ্বনাথ বলছিলেন, ”২০০১ সালের ইডেন টেস্ট অন্যতম সেরা। ভিভিএস লক্ষ্ণণ আর রাহুল দ্রাবিড়ের ইনিংস অমর হয়ে রয়েছে।স্টিভ ওয়ার অস্ট্রেলিয়া ফলো অন করিয়েছিল ভারতকে।আর ভারত সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে। টানটান উত্তেজনা ছিল। এটাই তো টেস্ট ক্রিকেটের মজা। সময়ের পরিবর্তন হলেও ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের তীব্রতা কিন্তু আগের মতোই রয়েছে।”
সময় এগিয়ে যায়। কালের নিয়মে পরিবর্তন আসে ক্রিকেটে। বদলে যায় নায়কদের মুখ। ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের স্বাদ, গন্ধ, বর্ণ একই থেকে যায়। এই ম্যাচ ফিরিয়ে দেয় হারিয়ে যাওয়া কোনও সময়কে। মিলিয়ে দিয়ে যায় অতীত ও বর্তমানকে।