সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারত ও পাকিস্তানের মহারণ (India vs Pakistan) মানেই আবেগের মহোৎসব। আর যদি তা হয় বিশ্বকাপের (T20 World Cup) আসর, তাহলে তো কথাই নেই। মেলবোর্নের লক্ষাধিক দর্শকের সামনে হাই ভোল্টেজ ম্যাচে শেষ মুহূর্তের জয়, বিরাট-হার্দিকদের দুরন্ত পারফরম্যান্স দীপাবলির আগেই এনে দিয়েছে আগাম দীপাবলি। রবিবাসরীয় এই ম্যাচজুড়ে দেখা গেল ক্রিকেটীয় নান্দনিকতার সঙ্গে আবেগের বিস্ফোরণের এক মহা সম্মেলন। এশিয়া কাপের হারের মধুর প্রতিশোধ নিলেন কোহলিরা। এর মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া হল সেরা ৫টি মুহূর্ত।
১) ম্যাচ তখনও শুরু হয়নি। টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন রোহিত শর্মা। খেলার ঠিক আগে দু’দলের খেলোয়াড়রা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে। শুরু হয়েছে জাতীয় সংগীত। এই সময়ই রচিত হল আবেগের এক আশ্চর্য মুহূর্ত। দেখা গেল রোহিতের চোখ বেয়ে নামছে জলের ধারা। আসলে দেশের জার্সিতে বিশ্বকাপের আসরে চির প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে লড়াই- সমস্ত খেলোয়াড়দের অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ যে একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকবে তা বলাই বাহুল্য। রোহিত সেই আবেগে ভেসেই জাতীয় সংগীত গাইতে গাইতে নিজেকে যেন হারিয়ে ফেললেন আবেগের বাষ্পে। এই একটি দৃশ্যই বুঝিয়ে দিয়ে গেল, যতই পেশাদারিত্বের আবরণ থাক জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নামাটা খেলোয়াড়দের কাছে আসলে কত বড় প্রাপ্তি।
[আরও পড়ুন: লাগাতার ধর্ষণ করেছে স্বামী, সৎ ছেলে! রাষ্ট্রপতির কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আরজি গৃহবধূর]
২) পাক ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বল। অর্শদীপের বলটা লেগ মিডলে পড়ে আছড়ে পড়ল বাবর আজমের প্যাডে। আবেদন করতেই আম্পায়ারের আঙুল শূন্যে। ওটাই ছিল বাবর আজমের ইনিংসের প্রথম বল। অর্থাৎ গোল্ডেন ডাক। রিভিউ নিলেও বাঁচতে পারলেন না পাক তারকা। রিপ্লেতে পরিষ্কার হয়ে গেল বল উইকেটেই লাগত। এরপর অর্শদীপের উল্লাস ও দর্শকদের উদযাপন বুঝিয়ে দিল ক্রিকেট এই মহান অনিশ্চয়তার খেলা। যে খেলোয়াড়টি এশিয়া কাপে এই পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই ক্যাচ ফসকে দলকে হারের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন, সেই তিনিই আজ বাবরকে এক বলে ফিরিয়ে ভারতকে শুরুতেই অ্যাডভান্টেজ এনে দিলেন। আগের ব্যর্থতার পরে ‘খালিস্তানি’ গঞ্জনাও শুনতে হয়েছিল। এদিন অর্শদীপ নতুন করে বুঝিয়ে দিলেন সাময়িক ব্যর্থতাকে ঝেড়ে ফেলে যিনি ফিরে আসতে পারেন তিনি সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন।
৩) শুরুর ধাক্কা সামলিয়েও তড়তড়িয়ে এগোচ্ছিল পাক ইনিংস। এই সময়ই এক ওভারে হার্দিক ফিরিয়ে দেন শাদাব খান ও হায়দার আলিকে। এই ধাক্কা সামলে পাকিস্তানের পক্ষে আর বড় স্কোর করা সম্ভব ছিল না। পরের ওভারেও তিনি পান মহম্মদ নওয়াজের উইকেট। নিঃসন্দেহে পাক ব্যাটিং লাইন আপের মেরুদণ্ডই যেন ভেঙে যায় এর ফলে।
[আরও পড়ুন: ‘প্রকৃত বন্ধু’, জিনপিংয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ পাকিস্তান, শুভেচ্ছা জানালেন পুতিন, কিমও]
৪) খেলা যত শেষদিকে গড়াচ্ছিল, ততই যেন রক্তচাপ বাড়ছিল দর্শক ও খেলোয়াড়, সকলেরই। কিন্তু তা সবচেয়ে কঠিন হয়ে যায় শেষ ওভারে। গোটা ওভারজুড়েই ‘নাটক’ অব্যাহত। যেন কোনও থ্রিলারের জমজমাট ক্লাইম্যাক্স। একবার এই পক্ষের হাতে রাইফেল উঠে আসছে, তো একবার ওই পক্ষের হাতে রিভলবার। ৬ বলে দরকার ছিল ১৬ রান। প্রথম বলেই নওয়াজের বল তুলে মারতে গিয়ে আউট হার্দিক। কিন্তু দু’বল পরে কোমরের উচ্চতার বলেও ডিপ স্কোয়ার লেগের উপর দিয়ে অনায়াসে ছয় মারলেন বিরাট। একে নো বল, তায় ছক্কা। যদিও ফ্রি হিটের বলে বোল্ড হন কোহলি। খেলার নিয়ম মেনেই আউট তো তিনি হলেনই না, উলটে বাই হিসেবে এল তিন রান। এরপরই ডিকে অর্থাৎ দীনেশ কার্তিক ফিরলেন স্টাম্পড হয়ে। কিন্তু অশ্বিনের ব্যাট থেকে জাদু শটটি আসতেই এল কাঙ্ক্ষিত জয়।
৫) নিঃসন্দেহে আজকের ম্যাচের সেরা মুহূর্ত কিন্তু তৈরি হল খেলার একেবারে শেষে। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের উড়ন্ত ড্রাইভ লং অফ দিয়ে সীমান্তের দিয়ে এগোতেই জয়ের রান পেয়ে গিয়েছে ভারত। বিরাট কোহলি হাঁটু মুড়ে বসে ঘুষি ছুঁড়ছেন উইকেটে। ডাগ আউট থেকে ছুটে এসে কোহলিকে জড়িয়ে ধরেছিলেন সূর্যকুমার যাদব। কিন্তু মুহূর্তটি সবচেয়ে রঙিন হল যখন দলপতি রোহিত কাঁধে তুলে দিলেন আজকের ম্যাচের সিকন্দরকে। কোলে নিয়ে নেচে নিলেন একটু। ম্যাচশেষে আবেগে ভেসে গেলেন কোহলিও। তাঁর চোখে ছিল জলের আভাস। আর শুধু কোহলি-রোহিতই তো নয়, ম্যাচশেষে ৭০ বছরের সুনীল গাভাসকরও শিশুর মতো উল্লাসে ভাসলেন। যা বুঝিয়ে দিল কেন এই ম্যাচকে ‘মাদার অফ অল ম্যাচ’ বলা হয়।