সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিশ্বকাপে (T-20 World Cup) হাই ভোল্টেজ ভারত-পাক (India vs Pakistan) ম্যাচ। প্রথম দিকে পরপর উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা ভারতীয় দলকে টেনে তুললেন। গত বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে হারের শাপমুক্তি ঘটালেন। মাত্র ৫৩ বলে ৮২ রানের ইনিংস খেলার পরে বিরাট কোহলি জানিয়ে দিলেন, টি-টোয়েন্টি কেরিয়ারে এটাই তাঁর সেরা পারফরম্যান্স। ভারত-পাক ম্যাচে দলকে জেতানোর সামনে ফিকে হয়ে গেল আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে কোহলির (Virat Kohli) শতরানের ইনিংসও। ম্যাচের সেরার পুরস্কার নিতে এসে কিং কোহলি ধন্যবাদ দিলেন সমর্থকদেরও। অধিনায়ক রোহিতের গলায়ও বিরাটের জয়গান।
পাকিস্তানের ১৬০ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে মাত্র ৩১ রানে চার উইকেট হারায় ভারত। অতি বড় সমর্থকও ভাবতে পারেননি,এই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াবে রোহিত ব্রিগেড। কিন্তু ক্রিজে দাঁড়িয়ে থাকা বিরাট অন্যরকম ভেবেছিলেন। ম্যাচের শেষে তিনি জানিয়ে দিলেন, “দশ ওভার কেটে যাওয়ার পরে আমি আর হার্দিক ঠিক করে নিই, এবার পালটা মার দেওয়ার সময় এসে গিয়েছে।” কিন্তু সেই সময়ে বল হাতে আগুন ঝরাচ্ছেন শাহিন আফ্রিদি-হ্যারিস রউফরা। তাঁদের বোলিংয়ের বিষকে একেবারে অকেজো করে দিলেন কিং কোহলি।
ভারত-পাক ম্যাচের শেষ তিন ওভারে জেতার জন্য দরকার ছিল ৪৮ রান। ঠিক সেই সময়েই মেলবোর্নের মাঠে শটের আতসবাজি শুরু করলেন কোহলি। ১৮ তম ওভারে বল করতে এলেন শাহিন আফ্রিদি। তিনটে চার মেরে ওখানেই ম্যাচের সুর বেঁধে দিলেন কোহলি। তবে শেষের ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে খানিকটা চাপে পড়ে গিয়েছিল ভারত। কিন্তু ম্যাচের শেষে এসে বিরাট যেমনটা বললেন, “এটা মনে হচ্ছে হওয়ারই ছিল।” রুদ্ধশ্বাস ইনিংস খেলে দলকে জেতানোর পরে কথা হারিয়ে ফেলেছেন বিরাট। সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বারবার গলা বুজে এসেছে তাঁর।
[আরও পড়ুন: মেলবোর্নে লেখা হল প্রতিশোধের ইতিহাস, হার্দিক-কোহলি ম্যাজিকে পাক বধ ভারতের]
ম্যাচ জেতানোর পরে বিরাটকে জিজ্ঞাসা করা হয়, জীবনের সেরা টি-টোয়েন্টি ইনিংস কি এটাই? এক মুহুর্ত ভেবে তিনি বললেন, “২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও ৮২ রানের ইনিংস খেলেছিলাম। এতদিন ওটাই আমার টি-টোয়েন্টি কেরিয়ারের সেরা ইনিংস ছিল। কিন্তু আজকের ম্যাচের গুরুত্ব দেখে মনে হচ্ছে, এটাই আমার জীবনের সেরা টি-টোয়েন্টি ইনিংস।”
কেনই বা হবে না জীবনের সেরা ইনিংস? ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তো বিরাটের নেতৃত্বেই হার মানতে হয়েছিল ভারতীয় দলকে। খারাপ ফর্ম নিয়ে বারবার সমালোচকদের প্রশ্নে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গিয়েছেন ব্যাটার বিরাট। ক্রিকেট থেকে বিরতি নিয়েও বাঁকা কথা শুনতে হয়েছে। অবশেষে একবছর পরে সমস্ত কিছুর জবাব দিলেন কিং কোহলি। যে পিচে বাবর আজম, রোহিত শর্মাদের মতো খেলোয়াড়রা কিছুই করে উঠতে পারেননি, সেখানেই রানের ফুলঝুরি ফোটালেন বিরাট। অনবদ্য ইনিংস খেলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের জায়গায় নিজের নামও পাকা করে ফেললেন। দীপাবলির আগেই বিরাটের ব্যাটের রোশনাই আলো জ্বালিয়ে দিল ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে।
ম্যাচের শেষে বিরাটকে কোলে তুলে নিয়ে নেচে নিলেন অধিনায়ক রোহিত। দরাজ কন্ঠে বিরাটের প্রশংসা করে জানিয়ে দিলেন, “বিরাটের প্রচুর অভিজ্ঞতা। ও জানে কিভাবে এই ম্যাচ বের করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত হার্দিক আর বিরাট ক্রিজে ছিল, আমরা জানতাম ম্যাচ জেতার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।” পাকিস্তানকে হারিয়ে টুর্নামেন্ট যাত্রা শুরু ভারতের। কাপ নিয়ে ঘরে ফিরবেন, সেই আশাতেই বুক বাঁধছেন ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীরা। সেই স্বপ্নের সওদাগর, টি-টোয়েন্টি জীবনের সেরা ইনিংস খেলা বিরাট কোহলি।