কৃশানু মজুমদার: ”আমি চাই ইংল্যান্ড দুশো রান করুক। আর কম রানে পাকিস্তানকে বেঁধে রাখুক। ওয়ানডের পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটাও জিতে নিক ইংল্যান্ড।”
জস বাটলারদের নিয়ে আশার কথা শোনাচ্ছেন তিনি। রবিবার বাটলার-হেলসরা যে মাঠে বিশ্বজয়ের জন্য নামবেন, তিরিশ বছর আগে এই মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডেই তাঁর স্বপ্ন ভেঙেছিল।
ওয়াসিম আক্রম (Wasim Akram) নামের এক বাঁ হাতি বোলার দু’ বলে ম্যাচের গতিপ্রকৃতি বদলে দিয়েছিলেন। প্রথম বলে অ্যালান ল্যাম্ব। ঠিক তার পরের বলেই ক্রিস লুইসের উইকেট নাড়িয়ে দিয়েছিলেন আক্রম। সেই ক্রিস লুইস (Chris Lewis) সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে লন্ডন থেকে বললেন, ”ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হোক, এটা আমার আশা। বাট ইউ ক্যান নেভার বি সিওর। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে (T-20 Cricket) নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। আর প্রতিপক্ষ যদি হয় পাকিস্তান, তাহলে তো কোনও ভবিষ্যদ্বাণী করাই সম্ভব নয়।” তাঁর থেকে ভাল এই সত্য আর কে জানেন!
[আরও পড়ুন: বিশ্বকাপের সেরা ৯ তারকার নাম ঘোষণা আইসিসির, তালিকায় ভারতের দুই]
ফাইনালে পাকিস্তানের ২৪৯ রান তাড়া করতে নেমে নিল ফেয়ারব্রাদার আর অ্যালান ল্যাম্ব ৬৯ রান যোগ করে ফেলেন। ১৬ ওভারে দরকার আর ১১০ রান। জেতার সমীকরণ খুব একটা কঠিন ছিল না ইংল্যান্ডের জন্য। ঠান্ডা মাথায় খেলতে পারলে কাপ উঠবে গ্রাহাম গুচের হাতেই।
তখনও ক্রিস লুইস, ডারমট রিভ, ডেফ্রিটার্সের মতো অলরাউন্ডারদের ব্যাট করা বাকি। লুইস বলছেন, ”বিধ্বংসী আক্রম পরপর দু’ বলে অ্যালান আর আমাকে ফেরত পাঠিয়ে ম্যাচ নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসে। ফাইনালে নিজের জাত চিনিয়েছিল ওয়াসিম। হোয়েন চিপস আর ডাউন, হি ক্যান প্রোডিউস দ্যাট সট অফ আ কোয়ালিটি।” এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলছিলেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অলরাউন্ডার।
পাকিস্তানের কিংবদন্তি বাঁ হাতি বোলার পরবর্তীকালে বলেছিলেন, ওই দুটো উইকেট নেওয়ার পরিকল্পনা আগেই করা হয়েছিল। ল্যাম্বকে ফেরানোর পরে অধিনায়ক ইমরান তাঁর সেরা অস্ত্রকে বলেছিলেন, ”ক্রিস লুইস কিন্তু অনুমান করছে তুমি ওকে ইয়র্কার দেবে।”
লুইস বলছেন, ”নব্বইয়ের দশকে রিভার্স সুইং খেলা খুব কঠিন ছিল। আর ওয়াসিম সব অর্থেই রিভার্স সুইংয়ের পতাকাবাহক ছিল। দুটো বলে ওয়াসিম দেখিয়ে দিয়েছিল ওর কোয়ালিটি। অ্যালান যে বলটায় আউট হয়েছিল, সেটা অফে পড়ে ওর অফস্টাম্প নাড়িয়ে দিয়েছিল।পরবর্তী বলটা আমি কাট করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ব্যাটে লেগে বল আমার লেগস্টাম্পে আঘাত করেছিল। আমি নিজের মনে মনে বলছিলাম, কী করলে এটা? আসল সময়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তুলে ধরেছিল এক দুর্দান্ত বোলার।”
আক্রমের ওই স্পেলটার প্রশংসা করে সেদিন ধারাভাষ্যকার রিচি বেনো বলছিলেন, ”আমার মনে হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষ পাকিস্তানের রাস্তায় দারুণ আনন্দে নাচতে শুরু করে দিয়েছে।”
তার পরে উলটপুরাণ। গ্রুপের তিনটি ম্যাচ লাগাতার জিতে, শেষ চারে নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালের ছাড়পত্র জোগাড় করে নেয় পাকিস্তান। ৯২ সালেও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লিগের খেলায় ৭৪ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। বরুণদেবের কল্যাণে ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ায় পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়ে যায় দু’ দলের মধ্যে। বিপন্ন পাকিস্তান দারুণ ভাবে ফিরে আসে। ফাইনালে আসল সময়ে জ্বলে ওঠে। লুইস বলছিলেন, ”এভাবেও যে বিশ্বকাপ জেতা যায় তা কল্পনা করা যায় না। আই অ্যাম নট সিওর ইউ ক্যান এভার বি লাকি টু উইন আ ওয়ার্ল্ড কাপ। দিনটা সব অর্থেই পাকিস্তানের ছিল।”
এবারের প্রতিযোগিতায় ভারতকে শেষ চারের লড়াইয়ে দাঁড়াতেই দেয়নি ইংল্যান্ড। বাটলার ও হেলসের মারমুখী ব্যাটিংয়ে দশ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় তারা। লুইস বলছেন, ”আমার মনে হয় এবার ইংল্যান্ডের দারুণ সুযোগ রয়েছে। গত চার-পাঁচ বছরে সাদা বলের ক্রিকেটে ইংল্যান্ড অন্যতম সেরা দল। পঞ্চাশ ও কুড়ি ওভারের ম্যাচে ওরা দারুণ পারদর্শী। সেটাই প্রমাণ করে চলছে।” বেন স্টোকসদের প্রতিপক্ষ সম্পর্কে প্রাক্তন অলরাউন্ডারের মূল্যায়ন, ”নির্দিষ্ট দিনে পাকিস্তান খুবই বিপজ্জনক প্রতিদ্বন্দ্বী। ক্রিকেটের সব বিভাগেই প্রতিপক্ষকে টেক্কা দিতে পারে।”
রবিবাসরীয় যুদ্ধের আগে ফুটছে পাক-মুলুক। পঞ্চাশ ওভারের মতোই কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপ জিততে মরিয়া ইংল্যান্ড। পঞ্চাশোত্তীর্ণ প্রাক্তন তারকা ক্রিস লুইসের চোখে ভিড় জমাচ্ছে তিরিশ বছর আগের সব স্মৃতি। কে বলে সময় সব ভুলিয়ে দেয়। সময় তো ফিরিয়েও দেয় অনেক কিছু।