দুলাল দে: সময়টা সত্যিই ভাল যাচ্ছে না নেইমারের। ছিল শুধু গোড়ালিতে চোট। এবার সঙ্গে জুড়ল সামান্য জ্বর।
সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে জিতলেও ম্যাচের পর থেকেই তারকা স্ট্রাইকারের অভাবটা যেন আরও বেশি করে অনুভূত হচ্ছে ব্রাজিলিয়ান শিবিরে। পাছে টিম স্পিরিটে কোনও সমস্যা হয়, কোচ তিতে তাই প্রকাশ্যে নেইমারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কিছু বলছেন না। তবে ফুটবলাররা যেভাবে সুইজারল্যান্ড ম্যাচের পর নেইমারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন, তাতে গ্রুপের একটা ম্যাচ বাকি থাকতেই পরের রাউন্ডে চলে গেলেও, মাঠের মধ্যে নেইমারের অভাব কতটা অনুভূত হচ্ছে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।
[আরও পড়ুন: মেয়ের ডাক্তারিতে সুযোগ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন, এবার সুকান্তকে আইনি নোটিস শান্তনুর]
নাসার প্রযুক্তিসম্পন্ন জুতো ব্যবহার করে নেইমারের চোট এখন অনেকটাই ভালর দিকে। তবুও নকআউটের আগে তাঁকে খেলানোর ব্যাপারে কোনওরকম ভাবনাচিন্তা করতেই রাজি নন তিতে। বরং তাঁর ভাবনায় রয়েছে, গ্রুপের শেষ ম্যাচে ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে রিজার্ভ বেঞ্চের ফুটলারদের একবার দেখে নেওয়া। তাতে নকআউটে চূড়ান্ত একাদশ গড়তে সুবিধে হবে।
গ্রুপের প্রথম দু’ম্যাচে ২৬ জনের স্কোয়াডের ইতিমধ্যে ১৯ জনকে খেলিয়ে দেখে নিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান কোচ। এবার দেখার ভাবনা বাকিদের। দানি আলভেজ, পেদ্রো, ফাবিনোদের এখনও মাঠে দেখার সুযোগ পাননি তিতে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে যেহেতু ফলাফলের আর গুরুত্ব নেই, তাই তাঁর ইচ্ছে, ক্যামেরুন ম্যাচে দলে বেশ কয়েক জন নতুন মুখ আনার। তবে তিতে মুখে বলছেন, ‘‘ব্রাজিল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছাড়া কিছু ভাবছে না। আর আমাদের রিজার্ভে যারা আছে তারাও ম্যাচের ফলাফল বদলে দিতে পারে।’’
[আরও পড়ুন: গোলের পর রোনাল্ডোর মতো সেলিব্রেশন ফডেনের, বির্তক পিছনে ফেলে নকআউটে USA]
একটা সময় নেইমার ভেবেছিলেন, চোট নিয়েই মাঠে যাবেন। তারপর সোমবার সকাল থেকেই দেখা গেল সামান্য জ্বর এসেছে। তাই দলের ম্যাচ দেখতে স্টেডিয়ামে না গিয়ে টিম হোটেলের টিভিতেই চোখ রেখেছিলেন নেইমার। পরে তা ইনস্টাগ্রামে পোস্টও করেন। দেখা যাচ্ছে টিভিতে ম্যাচ দেখার সময় তাঁর পায়ে সেই বিশেষ জুতোটি পরা আছে। আর ম্যাচ শেষ হওয়া মাত্র নিজের সোশ্যাল সাইটে লেখেন, ‘ক্যাসেমিরো হচ্ছে এই মুহূর্তে বিশ্বের এক নম্বর মিডফিল্ডার।’
সুইজারল্যান্ড ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে তিতেকে এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাও করা হয়। ব্রাজিলিয়ান কোচ সঙ্গে সঙ্গে বলেন, ‘‘আমি কোনওদিন কারও মতামতকে অসম্মান করি না। আবার কারও মতের উপর নিজের মতামত দেওয়া পছন্দও করি না। তবে কাসেমিরো নিয়ে নেইমার যা বলেছে, তার সঙ্গে আমি একশো ভাগ সহমত।’’
ম্যাচ শেষে মিক্সড জোন দিয়ে একের পর এক ফুটবলার বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। আর তখনই বেশি করে ফুটে উঠছিল, নেমারকে কেন্দ্র করে সকলের আক্ষেপটা। সবার আগেই ছিলেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। তিনিই দিলেন নেইমারের জ্বর আসার খবরটা। ‘‘সামান্য জ্বর। চিন্তার কিছু নেই। না হলে হয়তো মাঠে আসলেও আসতে পারত। এই অবস্থায় নেইমারের পুরোপুরি বিশ্রাম নেওয়াটা খুবই জরুরি। কারণ, ওকে আমাদের দলে দরকার।।’’
নেইমার চোট পেয়ে মাঠের বাইরে থাকায় বোধহয় সবচেয়ে বেশি মন খারাপ রিচার্লিসনের। ম্যাচ জিতে পরের রাউন্ড চলে যাওয়ার পরও নেইমারের প্রসঙ্গ উঠতেই হতাশ হয়ে বললেন, ‘নম্বর ‘দশ’ মাঠের বাইরে থাকলে, মাঠের ভিতর নম্বর ‘নয়’ তো সমস্যায় পড়বেই। বললেন, ‘‘নেইমারের সঙ্গে মাঠের ভিতর যে বোঝাপড়াটা তৈরি হয়ে গিয়েছিল, না থাকায় একটু হলেও সমস্যায় পড়ছি। নকআউটে নেইমারের দলে ফিরে আসাটা ভীষণই জরুরি।’’
ফিরে আসা বললেই তো আর ফিরে আসা যায় না। কিছুদিন আগে নেইমারের চোট নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করার পর টিমের ডাক্তারের তরফেও আর কোনও সরকারি বিবৃতি আসছে না। যেটুকু খবর আসছে, তা সেই ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিকদের সূত্রে। তাতে যা জানা যাচ্ছে, ক্যামেরুন ম্যাচটা ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ হলে নেইমারকে হয়তো স্কোয়াডে রেখে দিতেন তিতে। কিন্তু এখন নাকি নকআউটের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে নেইমারকে। কারণ, দলটা হয়তো জিতছে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে নেইমার ছাড়া গতি নেই। হক কথাটা বলেছেন দলের অধিনায়ক থিয়াগো সিলভা। ‘‘ভালভাবেই আমরা পরের রাউন্ডে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে নেইমারকে চাই। ও হচ্ছে আমাদের চ্যাম্পিয়ন ফুটবলার। দলের বাইরে থাকলে বোঝা যায়, ওকে কতটা মাঠের ভিতর দরকার,’’ বলেছেন তিনি।
পুরো দল যেভাবে নেইমারের মাঠে ফেরার অপেক্ষায়, তাতে বোঝাই যাচ্ছে, পুরো টিম ম্যানেজমেন্ট কতটা সচেষ্ট হয়ে উঠেছে চোট সারিয়ে নেমারকে মাঠে ফেরাতে। এখন শুধু অপেক্ষা, তিতের সিদ্ধান্তের। কবে তিনি জানাবেন, নেইমার প্রথম একাদশে। শুধু এই সিদ্ধান্তটুকুর দিকেই তাকিয়ে বিশ্বজোড়া ব্রাজিলিয়ান ফ্যানরা।