সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: টেস্ট ফাইনালের (WTC Final) চতুর্থ দিনের শেষে ভারতের স্কোর ৩ উইকেটে ১৬৪। জয়ের জন্য দরকার আরও ২৮০ রান। হাতে মাত্র ৭ উইকেট এবং একটা গোটা দিন। অতএব, এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া যে এখনও ভারতের মাথায় উপর উঠে নেত্য করছে সেটা বোঝার জন্য ক্রিকেট বোদ্ধা হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। অথচ অনায়াসে এই ছবিটা অন্যরকম হতে পারত। অনায়াসে দিনের শেষে ভারতের স্কোর এক বা দুই উইকেটে ২০০ রানের কাছাকাছি হতে পারত। কিন্তু অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) এবং চেতেশ্বর পূজারার ‘নির্বুদ্ধিতা’ ফের পাহাড়প্রমাণ চাপের মধ্যেই ফেলে দিল টিম ইন্ডিয়াকে (Team India)।
ওভালের পিচে আর কোনও জুজু নেই। যা কিছু ছিল লন্ডনের ৩০ ছুঁইছুঁই তাপমাত্রা সব শুষে নিয়েছে। পিচে যে কোনও জুজু নেই, সেটা বোঝা গিয়েছিল যখন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অ্যালেক্স কেরি এবং মিচেল স্টার্ক ব্যাট করছিলেন। ভারতীয় বোলাররা এদিন দিব্যি ভাল বল করেছেন। কিন্তু ইনিংসের শেষদিকে এসে এই দুই বাঁহাতি ভারতীয় পেসারদের কার্যত তুলোধোনা করলেন। ফলস্বরূপ, দিনের শুরুটা খারাপ করার পরও অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে সাড়ে চুরাশি ওভারে ৮ উইকেটে ২৭০ রান তুলে দিল। কেরি ৬৬ এবং স্টার্ক মাত্র ৫৭ বলে ৪১ রানের ইনিংস খেললেন। ভারতের মাথায় চাপল ৪৪৪ রানের বোঝা।
[আরও পড়ুন: রামেশ্বরমে চুনাপাথরের ভূখণ্ড কি সত্যিই রামসেতু? আজও মেলেনি উত্তর]
পিচে যে কোনও জুজু নেই সেটা বোঝা গিয়েছিল ভারতের ব্যাটিংয়ের শুরুতেও। রোহিত শর্মা যখন অনায়াসে শর্ট বলে পুল মেরে মাঠের বাইরে ফেলছিলেন বা অন দ্য রাইজ ড্রাইভ খেলে দিচ্ছিলেন। ৪১ রানের মাথায় গিলের বিতর্কিত আউট বাদ দিলে ভারতের (Indian Cricket Team) ইনিংস চলছিল একেবারে রকেট গতিতে। রানের গড় কখনও পাঁচ-কখনও ছয়। মনেই হচ্ছিল না যে আরও আস্ত একটা দিন ভারতীয় দল সময় পাবে অজিদের রানের পাহাড়ে পৌঁছাতে। রোহিতরা যেন সুযোগ পেলেই বাউন্ডারি মেরে দেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। আর সেটাই কাল হল দিনের শেষে। টি-২০ হ্যাংওভার থেকেই অহেতুক নাথান লিয়নকে সুইপ মারতে গেলেন রোহিত। আসলে লিয়ন রাউন্ড দ্য উইকেট বল করছিলেন শুধু LBW পাওয়ার জন্যই। ওই অ্যাঙ্গেল থেকে সুইপই ছিল সবচেয়ে বিপজ্জনক শট। অথচ অহেতুক দুটো রানের জন্য সেই বিপজ্জনক শটটিই খেললেন ভারত অধিনায়ক। যার কোনও দরকারই ছিল না সেসময়। দিব্যি রান আসছিল সোজা ব্যাটে খেলে। রোহিত নিজেও মাঝে মাঝেই বাউন্ডারি পাচ্ছিলেন। অথচ রানের লোভে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনলেন তিনি। রোহিতের সেই ভুল থেকে শিক্ষা না নিয়ে উলটে আরও বড় ভুল করলেন পূজারা। চেতেশ্বর পূজারা, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে, ভারত যেখানে ৪৪৪ রান তাড়া করছে, সেখানে চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে এসে আপার কাট খেলতে গিয়ে আউট হলেন। যে বলটি হয়তো ১০০ বারের মধ্যে ৯৯ বার ছেড়ে দিতেন তিনি নিজেই। কিন্তু অধুনা যাকে ভারতীয় ক্রিকেটার দ্য ওয়াল হিসাবে ধরা হয়, তিনি ওই বলটিতে ব্যাট ছুঁয়ে বিদায় নিলেন। এটাকে নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কোনওভাবে বোধ হয় ব্যাখ্যা করা যায় না।
[আরও পড়ুন: শ্বশুরবাড়িতে একরাত কাটিয়েই স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ‘আইনের অপব্যবহার’, বলল আদালত]
অতএব, যে ভয় ছিল সেটাই হল। ঝকঝকে শুরুটা করার পরও ভারত দাঁড়িয়ে গেল ৯৩ রানে ৩ উইকেটে। সুতরাং সেখান থেকে আবার ইনিংস গড়া শুরু। দায়িত্ব গেল বিরাট কোহলি এবং অজিঙ্কা রাহানের ঘাড়ে, তাঁরা লড়লেন, খেললেন, রানও করলেন, শুধু ভুল করলেন না। অহেতুক রানের লোভে ভুল শট খেললেন না, টি-২০ মানসিকতার শট খেললেন না। ভারতের সামান্য যে আশার আলো এখনও টিমটিম করে জ্বলছে, সেটা ওই বিরাট আর রাহানের ৭১ রানের ‘নির্ভুল’ জুটির উপর ভর করেই। পঞ্চম দিনও যদি বিরাটরা এমন নির্ভুল ক্রিকেট খেলে যেতে পারেন, তাহলে কে বলতে পারে, কোনও মিরাক্যাল হবে না? অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ফাইনাল জেতার আশা যদি বিরাটকে আরও খানিকটা মরিয়া করে তোলে, তাহলে কে বলতে পারে তাঁর ব্যাট থেকে মহানায়কোচিত কিছু ঘটে যাবে না? হোক না লক্ষ্য অনেক দূর, ভুলে গেলে চলবে না এখনও রবীন্দ্র জাদেজা নামের এক ব্যাটার আছেন সাজঘরে, আগের ইনিংসের নায়ক শার্দূলও আছেন। সুতরাং, ভারতীয় সমর্থক, সিটবেল্ট ভাল করে বেঁধে ফেলুন। পঞ্চম দিন বহু লড়াই বাকি।