শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: একটি পায়রা ও পায়ে বাঁধা রহস্যময় আংটি। সেই আংটিতে আবার খোদাই করা ফোন নম্বর! নয়ের দশকের জনপ্রিয় হিন্দি সিনেমা ‘ম্যায়নে পিয়ার কিয়া’র গানে এবং সিনেমার শেষাংশে বার্তাবাহক কবুতরের উপস্থিতি মন ছুয়ে গিয়েছিল দর্শকদের। ইতিহাসেও উল্লেখ রয়েছে কবুতর বা পায়রার ব্যবহার ও তার গুপ্তচর বৃত্তির গল্প। সেই রকমই একটি পায়রা ও তার পায়ে বাঁধা আংটিকে কেন্দ্র করে এবার রহস্য দানা বেঁধেছে জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) প্রাধান পাড়ায়। পায়রাটির পায়ে বাঁধা আংটিতে লেখা রয়েছে নাম ও মোবাইল নম্বর। সেটি ঘিরেই যত রহস্য। গুপ্তচর বৃত্তির গল্প ডানা মেললেও সেই সন্দেহ উড়িয়ে দিয়ে এখন পায়রাটির সুস্থ হওয়ার অপেক্ষায় পুলিশ।
গত শনিবার জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বোয়ালমারির প্রধানপাড়ায় রহস্যজনক এই পায়রাটি নজরে পড়ে বাসিন্দাদের। স্থানীয় বাজারে এক ব্যবসায়ীর দোকানের টিনের চালে বসেছিল সেটি। দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় বসে থাকতে দেখে অসুস্থ বলে সন্দেহ হয় ব্যবসায়ীদের। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী দুলাল সরকার এগিয়ে যেতে সহজেই তাঁর হাতে ধরা দিয়ে দেয়। পায়রাটিকে হাতে পেয়ে চোখ চড়কগাছ হয়ে যায় দুলালবাবুর। পায়রাটির পায়ে জড়ানো রয়েছে একটি আংটির মতো বস্তু। তাতে লেখা রয়েছে নাম ও মোবাইল নম্বর। দুলালবাবু জানান, নম্বরটি হিমাচল প্রদেশের এম ডি বাবর নামে কোনও এক ব্যক্তির। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কোনওভাবেই যোগাযোগ করতে পারছেন না তাঁরা।
[আরও পড়ুন: মণীশ কোঠারির কোটি টাকার জমির যৌথ মালিক পুরপ্রধান ও TMC নেতা! বোলপুরে চাঞ্চল্য]
এলাকায় যাঁরা পায়রা চেনেন তাঁরা জানান, এটি গিরিরাজ প্রজাতির পায়রা। এই ধরনের পায়রা এক সময় গুপ্তচর বৃত্তিতে ব্যবহার হত। পায়রার পায়ে ও পাখনার আড়ালে লুকোনো থাকত তথ্য। স্থানীয়দের সন্দেহ, পায়রাটিকে হয়তো তথ্য পাচারের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গোপন তথ্য পৌঁছে দেওয়ার আগে মাঝপথে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ধরা পড়ে যায়। যদিও আংটিতে লেখা নাম ও নম্বর ছাড়া কোনও তথ্যই খুঁজে পাননি তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা পরিমল বিশ্বাস জানান, পায়ে জড়ানো আংটির গায়ে এম ডি বাবর নামে এক ব্যক্তির নাম ও নম্বর রয়েছে। মোবাইল নম্বরটির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ফোন যাচ্ছে না। নম্বরটি যেহেতু হিমাচল প্রদেশের দেখাচ্ছে, স্থানীয়দের সন্দেহ, পায়রাটি হিমাচল প্রদেশ থেকে উড়ে এসেছে। তবে ১২৪৫ কিলোমিটার পথ পায়রার মতো পাখির পাড়ি দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বাসিন্দাদের মনে।
যদিও তাতে আশ্চর্য হচ্ছেন না পাখি বিশেষজ্ঞ তথা জলপাইগুড়ি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক ডঃ রাজা রাউত। জানান, মোগল আমলে প্যাসেঞ্জার পিজিয়ন প্রজাতির পায়রাকে গুপ্তচর বৃত্তিতে ব্যবহার করা হত। এই প্রজাতির পায়রা আড়াই হাজার কিলোমিটার রাস্তা উড়ে যেতে পারত। আজ প্যাসেঞ্জার পিজিয়ন প্রজাতির পায়রা লুপ্ত হয়ে গিয়েছে। গিরিরাজ প্রজাতির পায়রা দেড় হাজার কিলোমিটার রাস্তা উড়ে যেতে পারে বলে জানান তিনি। তবে আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে পায়রাকে গুপ্তচর বৃত্তিতে ব্যবহার তাও আবার হিমাচল প্রদেশ থেকে জলপাইগুড়ি, এই ভাবনার পিছনে কতটা সত্যি লুকিয়ে রয়েছে তা নিয়ে অনেকটাই সন্দিহান ডঃ রাজা রাউত। তবে পুলিশ গোটা ঘটনা তদন্ত করে আসল রহস্য উদঘাটন করুক চান তিনি। গুপ্তচর বৃত্তির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেও সন্দেহজনক পায়রা উদ্ধারের ঘটনাকে অবশ্য হালকাভাবে নেয়নি কোতোয়ালি থানার পুলিশ। আইসি অর্ঘ্য সরকার জানান, পায়রাটি অসুস্থ, চিকিৎসা চলছে। যে নাম ও মোবাইল নম্বরটি উদ্ধার হয়েছে, সেই নম্বরে যোগাযোগ করে আসল রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা।