অভিরূপ দাস: বুকের মাঝখান দিয়ে গেঁথে রয়েছে তিরের (Arrow) ধাতব ফলা। গলগল করে বেরিয়ে আসছে রক্ত। সেই অবস্থাতেই বাঁকুড়ার বাড়ি থেকে কলকাতার SSKM হাসপাতাল। বাড়ির লোক ভেবেছিলেন আশা শেষ। তবে হাল ছাড়েননি SSKM হাসপাতালের চিকিৎসকরা। বাঁকুড়ার দেউলি কিস্কুকে (৫০) নতুন জীবন দেয় শহরের সরকারি হাসপাতাল।
বাঁকুড়ার রায়পুরের কদমগড়ে বাড়ি দেউলির। পারিবারিক অশান্তির জেরে দিন দুই আগে আত্মীয়দের হাতে আক্রান্ত হন। শরিকি অশান্তিতে দেউলির বুক লক্ষ্য করে তির ছোড়া হয়েছিল। ধারাল তিরের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় দেউলির ‘ইন্টার কোস্টাল’ ধমনি। পাঁজরের গা-বেয়ে পেঁচিয়ে থাকে এই সরু ধমনি। বুকের খাঁচার প্রতিটি হাড়ে রক্ত সঞ্চালনের গুরুদায়িত্ব থাকে এদের কাঁধেই। ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল বুকের ভিতরের ‘চেস্ট ওয়াল’-এর ম্যামারি আর্টারি। এই সমস্ত আর্টারির মাধ্যমেই বুকের পাঁজরে রক্ত চলাচল হয়।
[আরও পড়ুন: করোনা পরিস্থিতির জের, ২০২২ সালের Higher Secondary’র পাঠ্যক্রমে কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত]
গত বৃহস্পতিবারের কথা। বুকে গেঁথে রয়েছে তির। অচৈতন্য দেউলিকে নিয়ে ওই অবস্থাতেই SSKM হাসপাতালে পৌঁছন তাঁর জামাই সুনীল হেমব্রম। ভাগ্যিস নিজের হাতে তিরটা খুলতে যাননি। SSKM -এর চিকিৎসক ডা. সন্দীপকুমার কর জানিয়েছেন, বুকে-পেটে কোনও কিছু ঢুকে গেলে তা নিজের হাতে বের না করাই শ্রেয়। টানাটানি করে বের করতে গেলে গুরুত্বপূর্ণ ধমনি জখম হতে পারে। ওই অবস্থাতেই রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা উচিত। অনেকটা রক্তক্ষরণ হয়ে গিয়েছিল। দ্রুত দেউলির অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে ছিলেন কার্ডিওথোরাসিক ভাস্কুলার সার্জন ডা. অংশুমান মণ্ডল। কার্ডিয়ো অ্যানাস্থেশিয়োলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সন্দীপকুমার কর। এছাড়াও ছিলেন, ডা. দেবযানী সাহা, ডা. অভিনন্দন মণ্ডল, ডা. সঞ্চিতকুমার মণ্ডল, কার্ডিওথোরাসিক ভাস্কুলার অ্যানাস্থেটিস্ট ডা. পবনকুমার ডাম্মালাপাতি।
জটিল সে অস্ত্রোপচারের নাম ‘অ্যান্টেরো ল্যাটেরাল থোরাকোটমি’। প্রায় ২০টি সেলাই পড়েছে দেউলি কিস্কুর। শুধু তির বের করাই নয়, ধাতব তির বুকের চামড়ার ভিতরে অনেক সূক্ষ্ম ধমনিতে ক্ষতি করেছিল। বুকের পাঁজরের তৃতীয় এবং চতুর্থ হাড়ের ইন্টারকোস্টাল ভেসেলে ক্ষত ছিল। সেই সমস্ত ক্ষতকেও সারিয়ে তুলেছেন চিকিৎসকরা। রোগীর কোভিড (COVVID-19) রিপোর্ট জানা নেই। তাই রোগীকে ICU-তে আর রাখা হয়নি। SSKM হাসপাতালের ICU নন-কোভিড। তাই আপাতত ট্রমা কেয়ার ইউনিটে রয়েছেন রোগী।