ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: হার্ট ডান দিকে। তা-ও নয় মেনে নেওয়া গেল। কিন্তু হৃদয়ের জায়গায় যে স্তূপাকৃত নাড়িভুঁড়ি! এগারো বছরের বকুল অধিকারীকে পরীক্ষা করে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন বাঁকুড়া জেলা হাসপাতালের ডাক্তারবাবু। ঘাড় নেড়ে বলেছিলেন, ‘‘খুব জটিল রোগ। লিখে দিচ্ছি, ছেলেকে নিয়ে সোজা পিজি হাসপাতালে (SSKM) যান।’’ অসুস্থ ছেলের হাত ধরে বাবা শুধোন, ‘‘পিজির কোথায় যাব? সেটা তো লিখে দিন।’’ জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক লেখেন, ‘‘সিটিভিএসের (কার্ডিওথোরাসিক ভাসকুলার সার্জারি) ডাক্তারবাবুকে দেখাবেন। দেরি করবেন না।’’
বাবা দেরি করেননি। জ্বর-বমিতে কাবু বালককে নিয়ে গত রবিবার সকালে হাজির হয়েছিলেন পিজির কার্ডিওলজির ইমার্জেন্সিতে। বকুলের টেস্ট রিপোর্ট দেখে চমকে ওঠেন জুনিয়র ডাক্তার। বুকের বাঁদিকে যার থাকার কথা, সেই হার্ট রয়েছে ডানদিকে। আবার পেট অস্বাভাবিক রকমের ছোট। পরীক্ষা করে দেখা গেল, পেটে কিছুই নেই, বেবাক ফাঁকা! নাড়িভুঁড়ি, পাচনতন্ত্র বলতে কিছু নেই, সে সব গিয়ে জমা হয়েছে বুকের খাঁচায়! রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়। কাগজপত্র তৈরি করতে যতটুকু সময়।
[আরও পড়ুন: মে মাসেই প্রাথমিকে ১২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ! বিরাট ঘোষণা শিক্ষামন্ত্রীর]
সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ, ইঞ্জেকশন। অস্ত্রোপোচারের প্রস্তুতি শুরু। মঙ্গলবার সকাল দশটা নাগাদ বকুলকে ওটিতে ঢোকানো হয়। সকাল দশটা থেকে সন্ধে ছ’টা পর্যন্ত আট ঘণ্টার অপারেশন। বুকের বাঁদিক কেটে দেখা যায়, সেখানে সব নাড়িভুঁড়ি স্তূপাকৃত হয়ে আছে। হার্টে আবার একটা ছিদ্রও। ইতিমধ্যে নাড়িভুঁড়িতে সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। ‘‘পেট কেটে বুকের ছিদ্র দিয়ে সব নাড়িভুঁড়ি পেটে নামানো হল।’’ অপারেশন সেরে জানান ডা. দত্ত।
[আরও পড়ুন: শিয়ালদহ থেকে বিদায় নিচ্ছে টিনের শেড, ছাদজুড়ে তৈরি হচ্ছে ‘রুফ প্লাজা’]
শান্তনুবাবু ছাড়াও অস্ত্রোপচার টিমে ছিলেন ডা. অভিজিৎ মিত্র, ডা. রমিতা পাল, ডা. রিধিকা মজুমদার ও ডা. সুরজিৎ সরকার। ছিলেন দুই অ্যানাস্থেটিস্ট। কিন্তু জন্মগতভাবে বকুলের পেট ছোট থাকায় নাড়িভুঁড়ি পেট থেকে উপচে বাইরে বেরিয়ে আসছিল। আপাতত কৃত্রিমভাবে নাড়িভুঁড়ি আটকে বকুলকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছে। নজর রাখা হয়েছে, যাতে ফের সংক্রমণ না হয়।
ডা. শান্তনু দত্তের কথায়, ‘‘ভেন্টিলেটর থেকে বার করা হলেই ওর নাড়িভুঁড়ির কিছু অংশ কেটে বাদ দিয়ে পেট জুড়ে দেওয়া হবে। আপাতত ছেলেটি সংক্রমণ মুক্ত। তবে স্নায়ুর সমস্যার জন্য নিউরোলজি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। প্রয়োজনে শরীরে সব রক্ত বাদ দিয়ে নতুন রক্ত সঞ্চালন করে সুস্থ করা হবে।’’ বুধবার সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ জ্ঞান ফিরেছে ছোট্ট বকুলের। নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত বকুল ও ডাক্তারবাবুরা।