অভিরূপ দাস: নিশ্বাস নিতে পারছিল না একরত্তি। এলিয়ে পড়েছিল শরীর। বাড়ির লোক ভেবেছিলেন গলায় পেয়ারা আটকে। শেষমেশ এসএসকেএম এর ইনস্টিটিউট অফ অটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারে বেরোল বাদামের টুকরো। যা আটকেছিল চার বছরের নুর ইসলামের ফুসফুসে। আস্ত কাঁচা বাদাম ঠিকমতো চিবোতে পারেনি খুদে। গিলে খেতে গিয়েই বিপত্তি। বাদামের টুকরো ঢুকে পড়ে ফুসফুসে। স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছিল না মালদহের চাঁচলের বাসিন্দা ওই খুদে। কমছিল ফুসফুসের কার্যক্ষমতা। এভাবে চলতে থাকলে আরও বড় বিপদ হতে পারত বলছেন চিকিৎসকরা।
[আরও পড়ুন: মেডিক্যাল কলেজে আন্দোলের জেরে রোগীদের সমস্যা, হাই কোর্টে দায়ের মামলা]
মালদার স্থানীয় হাসপাতালে সিটি স্ক্যান হয় শিশুটির। তারা জানায় কিছু একটা আটকে আছে। এই বিষয়ে সেন্টার অফ এক্সেলেন্স কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ অটো রাইনোল্যারিঙ্গোলজি। ডিরেক্টর ডা. অরুণাভ সেনগুপ্তর তত্ত্বাবধানে সেখানে রয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্র। এসএসকেএম-এর ওই বিভাগে রিজিড ব্রঙ্কোস্কপির মাধ্যমে বের করা হয়েছে বাদামের টুকরো। মেডিক্যাল টিমের নেতৃত্বে ছিলেন ডা. সিদ্ধার্থ দাস। মেডিক্যাল টিমের অন্যান্য সদস্যরা হলেন ডা. সায়ন হাজরা, ডা. জিষ্ণু হোড়, ডা. তাপস, ডা. অনীক, অ্যানাস্থেশিয়ার দায়িত্বে ছিলেন ডা. ভাস্কর।
রিজিড ব্রঙ্কোস্কোপির মাধ্যমে বের করা হয় ডানদিকের ফুসফুসে আটকে পড়া বাদাম। শিশুর ফুসফুসে বাদাম আটকে হাসপাতালে আসার ঘটনা প্রথম নয়। চিকিৎসকরা বলছেন, অভিভাবকরা যথেষ্ট উদাসীন। আদৌ শিশু কী মুখে দিয়েছে তাই জানেন না। বলছেন পেয়ারা, বেরোচ্ছে বাদাম। অন্যদিকে সঠিক ফুড ট্রেনিংয়েরও অভাব রয়েছে। এসএসকেএমের অটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি বিভাগে চিকিৎসক ডা. সায়ন হাজরা জানিয়েছেন, ছ’মাস বয়স থেকেই বাচ্চারা সাধারণত কিছু কিছু খাবার হাতে ধরে মুখে দেওয়া চেষ্টা শুরু করে দেয়। বাচ্চার জামাকাপড় নষ্ট হওয়ার ভয় তখন মা বা পরিবারের কোনও সদস্য তাদের খেতে সাহায্য করেন। এক বছর বয়স থেকেই শিশুকে খাবার খাওয়ার প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। চিকিৎসক জানিয়েছেন, বাদামের মতো জিনিস সঠিকভাবে না চিবোলেই গন্ডগোল। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। দাঁত ওঠার পর থেকেই শিশুকে শেখাতে হবে কীভাবে খাবার চিবোতে হয়। ডা. সায়ন হাজরার কথায়, একদম ছোট বাচ্চারা খিচুড়ি, ডালিয়ার মতো অর্ধ তরল খাবার খায়। একটু বড় হলে তারা নিজে খেতে শিখতে সময় নেয়। প্রাথমিকভাবে শিশুদের হাতে আপেল, শশা, নাশপাতির টুকরো দিয়ে শেখাতে হবে কীভাবে তা চিবোতে হয়।