shono
Advertisement

পুরুষ হলেও গলার আওয়াজ ‘মেয়েলি’, নদিয়ার যুবককে স্বাভাবিক স্বর দিল SSKM

প্রতি এক লাখে একজন পুরুষ এই অসুখে আক্রান্ত।
Posted: 02:18 PM Jul 06, 2023Updated: 02:18 PM Jul 06, 2023

অভিরূপ দাস: নামে, চেহারায় দিব্যি পুরুষ। কিন্তু বন্ধুরা তাঁকে ডাকত ‘কাকিমা’ বলে। গলা শুনলে বোঝার উপায় ছিল না তা ছেলের। দাড়ি-গোঁফ আবৃত মুখে ঠোঁট খুললেই যুবতীর কণ্ঠস্বর! বাস্তব জীবনের সঙ্গে রুপোলি পর্দার ফারাক বিস্তর। বলিউডের ‘ড্রিম গার্ল’ চলচ্চিত্রে নিজের মেয়েলি কণ্ঠ ব্যবহার করে রোজগার করতেন নায়ক আয়ুষ্মান খুরানা। তেমন কপাল ছিল না নদিয়া (Nadia) জেলার বাদকুল্লার বাসিন্দা মিঠুন দাসের। পুরুষ হয়েও এমন সুরেলা মেয়েলি গলা! কম লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়নি তাঁকে। স্কুলে বন্ধুরা পিছনে লাগত এমন স্বর নিয়ে। পাড়ার আড্ডায় জুটত টিটকিরি। অপমানে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন বছর কুড়ির এই যুবক। অবশেষে এসএসকেএম হাসপাতালে এসে শাপমুক্তি।

Advertisement

এসএসকেএম হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মৈনাক মৈত্র জানিয়েছেন, পুরুষ হয়েও নারীদের মতো কণ্ঠস্বর আদতে এক অসুখ। চিকিৎসা পরিভাষায় তার নাম ‘পিউবারফোনিয়া’।

[আরও পড়ুন: ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে বীরভূমে খুন বিজেপি কর্মী, জলপাইগুড়িতে চলল গুলি]

বাংলায় এমন অসুখে আক্রান্ত রোগী কম নয়। তবু সরকারি হাসপাতালের আউটডোরে এই রোগীর দেখা প্রায় মেলেই না। মৈনাকের কথায়, ‘‘এমন অসুখে যাঁরা আক্রান্ত তাঁরা মারাত্মক হীনমন্যতায় ভোগেন। মেয়েদের মতো গলা হওয়ার জন্য ছোটবেলা থেকে একটি ছেলেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে হেয় করা হয়। বড় হয়ে চিকিৎসকের কাছে আসার সাহসটাই আর তার থাকে না।’’ চিকিৎসক জানাচ্ছেন, সেই সাহসটাই দেখিয়েছেন মিঠুন। সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে সকলের গলার স্বর ভারী হয়। কিন্তু এই রোগে আক্রান্তদের তা হয় না।

গ‌্যাটজম্যান প্রেশার টেস্টের মাধ্যমে ধরা পড়ে এই অসুখ। সে টেস্ট করা হয়েছিল বছর কুড়ির যুবকেরও। থাইরয়েড কার্টিলেজগুলি দু’আঙুলে ধরে চিকিৎসক দেখেন আঙুল দিয়ে কার্টিলেজ চাপলেই আটকানো যাচ্ছে মেয়েলি স্বর। বোঝা যায়, অস্ত্রোপচার ছাড়াই মেরামত করা যাবে কণ্ঠস্বর। তবে তার জন্য প্রয়োজন নিবিড় স্পিচ থেরাপির। বেসরকারি ক্ষেত্রে এই থেরাপির খরচ বিপুল। এসএসকেএম হাসপাতালে মাত্র দু’টাকায় এই থেরাপির সাহায্য পান মিঠুন। সময় লেগেছে ৭ দিন।

[আরও পড়ুন: ভোটের আগে অগ্নিগর্ভ মুর্শিদাবাদ, বেলডাঙায় বোমা বাঁধতে গিয়ে মৃত যুবক, জঙ্গিপুরে CPM প্রার্থীকে গুলি]

এসএসকেএম হাসপাতালের স্পিচ প্যাথলজিস্ট শাহিদুল আরেফিন আস্তে আস্তে সারিয়ে তুলেছেন মেয়েলি গলা। সে পদ্ধতিও চমকপ্রদ। ভোকাল কর্ড কম্পনের ফলেই আওয়াজ বেরোয় গলা থেকে। শাহিদুল জানিয়েছেন, ‘‘দেখা যায় মিঠুনের ভোকাল কর্ড টানটান। যার ফলে তাঁর গলার স্বরের ফ্রিকোয়েন্সি বেশি। তাই যা শোনাত নারীদের কণ্ঠস্বরের মতো। ধীরে ধীরে ভোকাল কর্ডকে বাইরে থেকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শিথিল করা হয়। অনেকটা টেপ রেকর্ডারের নবের মতো! এই পদ্ধতির নাম ডিজিটাল ম্যানিপুলেশন অফ ভোকাল কর্ড।’’

প্রতি এক লাখে একজন পুরুষ এই অসুখে আক্রান্ত। চিকিৎসকরা বলছেন, অনেক সময় মেয়েদের গলাও ছেলেদের মতো ভারী ও কর্কশ হয়। চিকিৎসা পরিভাষায় তাকে বলা হয় ‘অ্যান্ড্রোফোনিয়া’। তাও সারানো সম্ভব অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। নতুন কণ্ঠ পেয়ে আপ্লুত মিঠুন। তাঁর কথায়, “এখন ফোনে আমার পুরুষালি কন্ঠ শুনে অনেকেই বিশ্বাস কর‍তে পারছে না এটা আমিই!”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement