ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: ঘটনা ১, বছর সতেরোর ঝুমা দাস (নাম বদল)। মামাতো দাদার লালসার শিকার হয়ে গর্ভবতী। মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে কলকাতার এক সরকারি হাসপাতালে ঘুরে বেড়াতেন। আগামী সপ্তাহে কলকাতা পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হবেন। শারীরিক-মানসিক চিকিৎসার সঙ্গে আইনি সহায়তা পাবেন ঝুমা।
ঘটনা ২, বান্দোয়ানের গৃহবধূ রুমকি মাহাতোকে (৩২) ডাইনি অপবাদ দিয়ে বাড়িছাড়া করে স্বামী-শ্বশুর। মানসিক বিকারগ্রস্ত রুমকিও আসছেন কলকাতা পুলিশ হাসপাতালে। কাউন্সেলিং করে সুস্থ করার পর নিজের 'হক' ফিরে পেতে সব রকমের আইনি সাহায্য পাবেন বধূ।
বস্তুত, ৮-৮০ বছরের নাবালিকা ও প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাকে চিকিৎসা-মনরোগের কাউন্সেলিংয়ের পর আইনি সাহায্য দিতেই পিজির কলকাতা পুলিশ হাসপাতালে শুরু হচ্ছে 'ওয়ান স্টপ সেন্টার।' আপাতত ৫টি ঘর ৫০ শয্যার নিয়ে শুরু হচ্ছে এই চিকিৎসা ও আইনি সাহায্যকেন্দ্র।
[আরও পড়ুন: ‘পার্থ ভৌমিককে ভোট দিন’, রাজের সঙ্গে ভোটপ্রচারের গাড়িতে গলা ফাটালেন ‘মিঠাই’ সৌমিতৃষা!]
নবান্ন (Nabanna) সূত্রে খবর, রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে রাজ্য ভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কলকাতার (Kolkata) পর জেলাগুলিতে এমন কেন্দ্র তৈরি হবে। স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে নারী ও সমাজকল্যাণ এবং স্বরাষ্ট্রদপ্তর একযোগে এই কাজে যুক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, "পারিবারিক ও সামাজিকভাবে নিগৃহীত যে কোনও বয়সের মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসার পাশাপাশি আইনি সাহায্য দিতেই এই উদ্দোগ নেওয়া হয়েছে।" নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তরের এক সচিবের কথায়, "অভিযোগ পেলেই তিন দপ্তর একযোগে কাজ শুরু করবে। নিগৃহীতাকে আইনি সাহায্য দিতে ওয়ান স্টপ সেন্টারেই পরার্মশদাতা থাকবেন। বিজ্ঞপ্তি আগেই প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক ও আইনি পরার্মশদাতা পেতে বেশ কিছুটা সময় লেগেছে। আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করবে এসএসকেএমের ওয়ান স্টপ সেন্টার।"
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ১৮ বছরের কম মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা এবং অভিযুক্তকে খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা। পিজি (SSKM) হাসপাতালের 'ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি'র এক কর্তা বলেন, "কোনও নাবালিকা আতীয়-বন্ধু বা শিক্ষকের হাতে যৌন হেনস্তা হলে লোকলজ্জার ভয়ে প্রথমে বলতেই ভয় পায়। তাই এমন ঘটনা হলেই প্রথমেই পরিবারকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কলকাতা পুলিশ হাসপাতালে মেয়েটিকে নিয়ে আসতে হবে। পরের কাজগুলি সেন্টার থেকেই করা হবে। অভিযুক্তর বিরুদ্ধে এফআইআর এবং মেয়েটির চিকিৎসা সব দায়িত্ব সেন্টারের।" বস্তুত, ২০০০ সালের 'প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস'-আইনকে কঠোরভাবে লাগু করতেই ওয়ান স্টপ সেন্টার চালু হচ্ছে রাজ্যে। একেকটি ওয়ান স্টপ সেন্টারের জন্য গড়ে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।