সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একটানা জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্তির কথা বহুবার বলেছেন ক্রিকেটাররা। বায়ো বাবলে থেকে হতাশ হয়ে একসময়ে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের ফিজিও। জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকার ক্লান্তির কথা বললেন এবার দেশের প্রাক্তন গোলকিপার সন্দীপ নন্দীও (Sandip Nandy)। তিনি এখন মহামেডান স্পোর্টিংয়ের (Mohammedan Sporting Club) গোলকিপার কোচ।
বৃহস্পতিবার আই লিগে (I league) সাদা-কালো শিবিরের সামনে আইজল। ঠিক তার আগেই সন্দীপ বলছেন, ”একসময়ে নিজে ফুটবল খেলেছি। এখন আমি কোচ। আমার নিভৃতবাস পর্বই কাটেনি এখনও। নিজেকে দিয়েই প্লেয়ারদের অবস্থা বুঝতে পারছি। ওরা তো অনেকদিন ধরে বায়ো বাবলে রয়েছে। কড়া বিধিনিষেধের মধ্যে থাকতে হচ্ছে ছেলেদের। ব্রেকফাস্ট করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ে, নিজের মন মতো ঘোরা যাবে না, হোটেলে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে আসা যাবে না যখন তখন, নিয়ম লঙ্ঘন হলে শাস্তির ভয় রয়েছে। কত যে কঠিন তা, বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারবে না। এত প্রবল বাধানিষেধের মধ্যে কি আর ভাল ফুটবল খেলা যায়?”
[আরও পড়ুন: আইসিসি টি-২০ ক্রমতালিকার প্রথম দশেও রইলেন না কোহলি, উন্নতি শ্রেয়সের]
২৬ ডিসেম্বর শুরু হয়েছিল এবারের আই লিগ। কিন্তু করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের চোখরাঙানিতে স্থগিত হয়ে যায় টুর্নামেন্ট। সাময়িক বন্ধ থাকার পরে আগামিকাল থেকে ফের আই লিগের বল গড়াচ্ছে।
সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে হবে খেলা। ফোকলা স্টেডিয়ামে খেলার কষ্ট বোঝেন খেলোয়াড়রাই। দর্শক, সমর্থক, ভক্তদের শব্দব্রহ্ম থাকে না। নীরব স্টেডিয়াম ফুটবলারদের শরীরে বাড়তি অ্যাড্রিনালিনও ঝরায় না। ”সমর্থন ছাড়া কি ভাল ফুটবল খেলা সম্ভব?”, প্রশ্ন তুলছেন আশিয়ান কাপ জয়ী ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন গোলকিপার। তিনি বলছিলেন, ”করোনার জন্য আমরা অনেক কষ্ট পেয়েছি। অনেক প্রাণহানি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। কিন্তু আগের থেকে এখন অনেক ভাল অবস্থা। চিকিৎসকরাও বলছেন, এখন আর পরিস্থিতি আগের মতো ভয়ংকর নয়। সংক্রমণ হলেও তা আর প্রাণঘাতী নয়। একসময়ের ভয়াবহ ভাইরাস এখন সাধারণ ফ্লুয়ে পর্যবসিত হয়েছে। সামান্য সর্দি কাশিতেই তা সীমাবদ্ধ থাকে। ফলে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের কাছে আমার অনুরোধ ধীরে ধীরে যখন সবই স্বাভাবিক হচ্ছে, তখন ফুটবলারদের উপরে এই বিধিনিষেধ শিথিল করলে ভাল হয়। তাহলে ফুটবলাররাও ভাল মনে খেলতে পারবে।”
বায়ো বাবলে থাকলে সমস্যা কী? কেন তা ভাল ফুটবলের অন্তরায় বলে মনে করছেন মহামেডান স্পোর্টিংয়ের গোলকিপার কোচ? সন্দীপ বলছেন, ”যখনই বড় দলের হয়ে কেউ প্রতিনিধিত্ব করে, তখন বাইরে থেকে ভাল পারফরম্যান্স করার একটা চাপ থাকে। পারফরমাররা যদি মানসিক দিক থেকে সুস্থ না থাকে, হাসিখুশি না থাকে, তাহলে মাঠে নেমে কী করে ভাল ফুটবল তুলে ধরা সম্ভব?”
তাঁর একার অনুরোধে কি এই কড়া বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে? সন্দীপ বলছেন, ”আমি অনুরোধ করতে পারি। ফুটবলারদের কথা ভেবে, ফুটবলের কথা ভেবে যদি বিবেচনা করা হয়, তাহলে উপকৃত হবে ফুটবলই।” সংক্রমণ এখন কম আছে ঠিকই। কিন্তু বিধিনিষেধ তুলে দিলে তা আবার বুমেরাং হবে না তো? সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মহিলাদের এএফসি টুর্নামেন্টে দল নামাতে পারেনি ভারত। টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যেতে হয় ভারতের মেয়েদের। সন্দীপ বলছেন, ”আমি অনুরোধ করছি মাত্র। আমার মতোই অন্য দলগুলোরও নিশ্চয় একই উপলব্ধি। সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনেরও নিশ্চয় অনেক সমস্যা রয়েছে। সবাইকে সুস্থ রেখে টুর্নামেন্ট শেষ করার চাপ রয়েছে। তবে জৈব বলয়ের ভিতরে থেকে ভাল ফুটবল খেয়ে যাওয়া কঠিন কাজ।”
এবারের আই লিগের প্রথম ম্যাচে সুদেভাকে হারিয়ে শুরুটা ভালই করেছিল সাদা-কালো ব্রিগেড। কিন্তু করোনার চোখরাঙানিতে শুরুতেই বন্ধ করে দেওয়া হয় আই লিগ। আবার নতুন করে অভিযান শুরু করতে হবে সব দলগুলোকে। সন্দীপ বলছেন, ”একরকম ভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। তারপর টুর্নামেন্ট বন্ধ হয়ে যায়। আবার নতুন করে এখন শুরু হচ্ছে। ছন্দ নষ্ট হয়ে যায়। নতুন করে আবার ছন্দ পেতে অনেক সময় লাগে।” সেই ছন্দের খোঁজেই আই লিগে নামছে মহামেডান স্পোর্টিং।