সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদে মুখর গোটা দেশ। সকলেই দোষীর কড়া শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন। আর জি কর কাণ্ডের পর নারী নিগ্রহের মতো অপরাধের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে রাষ্ট্রপদী দ্রৌপদী মুর্মু। আর জি কর-সহ গোটা দেশে ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধর্ষণ রুখতে ফাঁসির সাজার দাবি জানিয়েছেন তিনি। এই অবস্থায় প্রশ্ন ওঠে, ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় ধর্ষণের অপরাধে ঠিক কোন কোন সাজার বিধান দেওয়া হয়েছে?
অধুনা বিলুপ্ত IPC-র ৩৭৬ ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হত অপরাধীর। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ নম্বর ধারাতে একই শাস্তির বিধান দেওয়া হয়েছে। তবে শিশুকে (ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় যৌন অপরাধ লিঙ্গ নিরপেক্ষ। ফলে 'নাবালিকা'র বদলে 'শিশু' শব্দটিকে ব্যবহার করা হয়েছে) ধর্ষণ বা গণধর্ষণের ঘটনায় কড়া হয়েছে আইন। ১৬ বছরের কম বয়সি কাউকে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বনিম্ন ২০ বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে। অপরাধ বিবেচনা করে এই শাস্তি 'যাবজ্জীবন' কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট সময়কাল নয়, বরং আজীবন জেলবন্দি থাকতে হবে অপরাধীকে।
[আরও পড়ুন: ‘এনাফ ইজ এনাফ’, আর জি কর কাণ্ডে এবার ক্ষোভে ফেটে পড়লেন রাষ্ট্রপতি মুর্মু]
ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৫ নম্বর ধারায় আরও কড়া বিধান দেওয়া হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, ১২ বছরের কম বয়সি শিশুকে ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত হলে ২০ বছরের জেল হবে। অপরাধ বিবেচনা করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এমনকী মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। উল্লেখ্য, অধুনা বিলুপ্ত IPC-এর ৩৭৬ (D) ধারায় গণধর্ষণের মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে ২০ বছর পর্যন্ত জেল এবং জরিমানার বিধান ছিল। ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় একই বিধান রাখা হয়েছে। তবে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারা ৭০(২)-এর অধীনে শিশুকে গণধর্ষণের মামলায় দোষীর কমপক্ষে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। অপরাধ বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। জরিমানার বিধানও রয়েছে। শিশুর বয়স ১২ বছরের কম হলে সরাসরি মৃত্যুদণ্ডের বিধান দেওয়া হয়েছে।
[আরও পড়ুন: মুসলিম ঘেঁষা নামে ‘কাঁচি’! রাতারাতি ৮ স্টেশনের নাম বদল যোগীরাজ্যে]
এছাড়াও ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৯ ধারা যুক্ত করা হয়েছে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের মামলায়। এক্ষেত্রে বিয়ে, চাকির বা পদোন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোনও নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করলে সর্বোচ্চ সাজা ১০ বছরের কারাদণ্ড। সঙ্গে জরিমানাও হতে পারে দোষী ব্যক্তির। পরিশেষে উল্লেখ্য, অধুনা বিলুপ্ত IPC ধারায় শুধুমাত্র ধর্ষণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড নয়, বরং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডই ছিল সর্বাধিক শাস্তি। ন্যায় সংহিতাতেও সাজার এই বিধান বদলায়নি। তবে ধর্ষণ এবং খুনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা ছিল মৃত্যুদণ্ড। যা এখনও অপরিবর্তিত। তবে আর জি করে কাণ্ডের পরে দাবি উঠছে, কেবলমাত্র ধর্ষণের ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ সাজা হোক মৃত্যুদণ্ড।