স্টাফ রিপোর্টার: গরমের ছুটিতে কলকাতার একটি বাংলা মাধ্যম স্কুলের ছাত্রীদের ইংরেজিতে কথা বলার পাঠ দিল লন্ডনের একটি স্কুলে দশম শ্রেণিতে পাঠরত এক কিশোরী। শিক্ষা মানুষকে স্বনির্ভর করে তোলে। আরাত্রিকা লাহিড়ী মাত্র ১৫ বছর বয়সেই বোঝে শিক্ষার গুরুত্ব। সেই উপলব্ধি থেকেই তিন সপ্তাহ ধরে ‘বড়িশা জনকল্যাণ বিদ্যাপীঠ ফর গার্লস’ স্কুলের পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রীদের ইংরেজিতে কথা বলতে শেখাল সে। জোগাল মাতৃভাষা ছাড়াও অন্য একটি ভাষায় সাবলীলভাবে একে অপরের সঙ্গে কথা বলার সাহস। আজ, শনিবার ফের লন্ডনের উদ্দেশে উড়ে যাচ্ছে আরাত্রিকা।
গরমের ছুটি কাটবে কলকাতায়। জানতে পেরে সেই সময়টা নষ্ট না করে কলকাতার কোনও স্কুলে শিক্ষকতা করা বা নিদেনপক্ষে শিক্ষাদানের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ে ইন্টার্নশিপ করার ইচ্ছা মাকে জানিয়েছিল আরাত্রিকা। সে নিজে ব্রিটিশ নাগরিক হলেও তার বাবা-মা ভারতীয়। সেই সূত্রে গোটা পরিবারেরই যাতায়াত রয়েছে কলকাতায়। মেয়ের ইচ্ছা শুনে মা অরুন্ধতী লাহিড়ী যোগাযোগ করেন তাঁর ছোটবেলার বন্ধু ও বর্তমানে বড়িশা জনকল্যাণ বিদ্যাপীঠ ফর গার্লসের প্রধান শিক্ষিকা শর্মিলা সেনগুপ্তর সঙ্গে। বাকিটা ইতিহাস। তিনমাস ধরে শর্মিলা সেনগুপ্তর পরামর্শে নিজেকে প্রস্তুত করে কলকাতায় এসেই শেখানো শুরু করে আরাত্রিকা। তার কথায়, ‘‘এই গরমের ছুটিতে আমি শেখাতে চাইছিলাম। আমার প্রধান লক্ষ্য ছিল, ওদের ইংরেজিতে কথা বলতে শেখানো। সেটা মাথায় রেখেই আমি শেখানো শুরু করি। এটা করতে গিয়ে ওরা লন্ডনের জীবনধারা সম্পর্কে জানে এবং আমিও ওদের জীবনধারা সম্পর্কে আরও গভীরে গিয়ে ভালভাবে জানতে পারি।’’ শেখাতে গিয়ে আরাত্রিকা বুঝতে পারে, বাংলা মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়াদের অধিকাংশের প্রধান সমস্যা, তারা ইংরেজি লিখতে পারে, পড়তে পারে। কিন্তু, সাবলীলভাবে বলতে পারে না। যদিও প্রায় ২০ দিন পর বদলে যায় সেই চিত্রটা। আরাত্রিকা বলে, ‘‘প্রথমে অনেকেই ইংরেজিতে নিজের পরিচয় দিতে পারছিল না। প্রায় তিন সপ্তাহে ওরা অনেকেই বেশ ভালভাবে ইংরেজিতে কথা বলতে পারছে।’’
[আরও পড়ুন: মারধরে যুবকের মৃত্যু! ক্লোজ সিভিক ভলান্টিয়ার-সহ গল্ফগ্রিন থানার ৩ পুলিশকর্মী ]
বড়িশা জনকল্যাণ বিদ্যাপীঠ ফর গার্লসের প্রধান শিক্ষিকা শর্মিলা সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘এটা খুব ভাল একটা প্রকল্প ছিল। আরাত্রিকা খুব চেষ্টা ও পরিশ্রম করেছে। আর একজন নেটিভ ইংরেজি বলা মানুষের সঙ্গে কথা বলে আমার স্কুলের মেয়েদের মধ্যেও কনফিডেন্স তৈরি হয়েছে। বাংলা মাধ্যমের বাচ্চারা এটা সাধারণত পায় না।’’
আরাত্রিকা ফিরে যাচ্ছে লন্ডনে। তবে, শেষ হবে না তার শেখানোর প্রচেষ্টা। শর্মিলাদেবী বলেন, ‘‘ও লন্ডনে ফিরে গিয়ে নিজের বন্ধুবান্ধবদের রাজি করাবে এবং তারপর আমরা অনলাইনে এই ইংরেজিতে কথা বলার ক্লাসটা চালিয়ে যাব। তাতে আমার স্কুলের মেয়েরা অংশগ্রহণ করবে।’’
আরাত্রিকার মা অরুন্ধতী লাহিড়ীর মতে, এই ধরনের প্রচেষ্টায় কলকাতার স্কুলগুলি আরও বেশি সাড়া দিলে ভাল হবে। বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা একটু ওপেন হলে এই ধরনের প্রোগ্রাম করা যেতে পারে। তাতে বাচ্চারা বেশ উপকৃত হবে।’’