স্টাফ রিপোর্টার, হাওড়া: হাওড়া বঙ্গবাসী মোড়ের গুঁই টেন্ডার লেনের একটি নামী বেসরকারি ইংরাজি মাধ্যম স্কুলের দুই দল ছাত্রের মধ্যে হল ব্যাপক সংঘর্ষ। যাকে ঘিরে বুধবার দুপুরে উত্তপ্ত হল এলাকা। ওই স্কুলের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্ররা রীতিমতো লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্র নিয়ে একদল, অপরদলের উপর চড়াও হয়ে এলাকা দাপিয়ে বেড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দারা এই সংঘর্ষ থামাতে গেলে তাঁদের উপরও আক্রমণ করে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্ররা। নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে কয়েকজন ছাত্র আহত হয়। পরে হাওড়া থানা (Howrah PS) থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে কয়েকজন ছাত্রকে আটক করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। মোতায়েন করা হয় পুলিশ বাহিনী।
কিন্তু কী থেকে দু’দল ছাত্রের মধ্যে এই সংঘর্ষ? স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্কুলেরই এক ছাত্রীকে স্কুলের সামনে একটি পান সিগারেটের দোকানে নিয়ে গিয়ে জোর করে সিগারেট খাওয়ানোকে কেন্দ্র করেই এই সংঘর্ষ। একদল ছাত্র ওই ছাত্রীকে সিগারেট খাওয়াতে যায়। ওই ছাত্রী রাজি না হওয়ায় তাকে জোর করে সিগারেট খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়। তখন অপর একদল ছাত্র তাতে বাধা দেয়। আর তাতেই দু’দল ছাত্রের মধ্যে বাধে সংঘর্ষ। সোমা দে নামে প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘দুপুর ১টা নাগাদ স্কুলের সামনের রাস্তা গুঁই টেন্ডার লেন ও জয়নারায়ণ সাঁতরা লেনের ভিতরে হঠাৎ দেখি এক ছাত্রকে ২০ জন ছাত্র মিলে লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্র নিয়ে মারতে যাচ্ছে। ছেলেটি আতঙ্কে ছুটে পালাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা না আটকালে ছেলেটির প্রাণ চলে যেত।’’ বিকাশ দাস নামে স্থানীয় বাসিন্দা বললেন, ‘‘ছেলেটিকে মারছে দেখে আমরা বাঁচাতে গেলে উলটে আমাদের উপরই স্কুলের ওই ছাত্ররা লাঠিসোটা নিয়ে আক্রমণ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে আমরা পুলিশকে খবর দিই।’’
[আরও পড়ুন: রিজার্ভ ব্যাংকের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পরই নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত, সুপ্রিম কোর্টে জানাল কেন্দ্র]
এই ঘটনা প্রসঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল নেতা সুরজিৎ সাহা বলেন, ‘‘গত ৫ থেকে ৭ বছর ধরে এই স্কুলটির উঁচু ক্লাসের ছাত্ররা এলাকায় অশান্তি পাকাচ্ছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাঁজা টানা থেকে শুরু করে পথচলতি মেয়েদের টোন টিটকিরি করে এরা। তার উপর মাঝেমধ্যেই লাঠিসোটা অস্ত্র নিয়ে স্কুলের সামনে মারামারিও করে। এদিনও সেরকমই ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি মতো অবিলম্বে এই স্কুলটি বন্ধ হওয়া উচিত।’’
এদিনের এই ঘটনার জেরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ওই স্কুলের অন্যান্য ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবকরাও। আতঙ্কিত ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রের মা ঋতুপর্ণা চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘মাঝে মাঝেই একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্ররা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে। মাস ছয়েক আগে একদল ছাত্র অপরদল ছাত্রের উপর ছুরি চালিয়েছিল। শুনেছি, এদিন তার প্রতিশোধ নিতেই একদল আরেকদলের উপর লাঠিসোটা, অস্ত্র নিয়ে চড়াও হয়।’’ এই ঘটনা প্রসঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা অবশ্য এ ব্যাপারে কিছু বলতে অস্বীকার করেন। হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানালেন, কয়েকজন ছাত্রকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে কী থেকে এমন ঘটনা ঘটেছে তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।