সুদীপ রায়চৌধুরী: পড়ুয়াদের পাঠানো ভিডিও ক্লিপে উপচে পড়ছে ‘সরস্বতীর সেরা স্কুল’-এর মেলবক্স। সে সব বাছাই করতে বসে গান গাওয়া আপাতত মাথায় ওঠার জোগাড় গায়ক সুরজিতের। শীত মরসুমে চারদিকে জলসা আর অনুষ্ঠানের হিড়িক চলছে। যে আসরে চিরকালীন হিট ‘বারান্দায় রোদ্দুর’ গাওয়ার জন্য বায়নাও আসছে অনবরত। কিন্তু গিটার-বাঁশি নিয়ে জলসায় যাবেন কি, সুরজিত এখন কচিকাঁচাদের তোলা ভিডিওয় মজে দিনরাত।
আর কী ঝক্কাস সেসব ভিডিও! কোনটা নাচের, কোনটা গানের, কোনওটা স্কুলে টিফিন পিরিয়ডে হুটোপুটি-দুষ্টুমির, কোনওটা আবার নির্ভেজাল কমেডি। ভাবনা, বৈচিত্র, বিষয়বস্তু, আবহে যা রীতিমতো চমকে দিচ্ছে ঝানু ফিল্মবোদ্ধাকেও। যেমন নিউ টাউন থেকে সেভেনের এক ছাত্রী পাঠিয়েছে। বাড়ির পিছনের মাঠ ধরে প্যাঁক প্যাঁক করে হেলতে দুলতে চলছিল একপাল হাঁস। সেই হাঁস মিছিলকে বাবার মোবাইলবন্দি করে, সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে সরস্বতী পুজোর অঞ্জলি স্তোত্র। জানুয়ারি সকালের মিঠে রোদ, সোনা রঙা সে রোদে ঝকঝকে সবুজ ঘাসজমির বুকে ধবধবে সাদা হাঁস বাহিনীর জল কে চল, আবহসংগীতে প্যাঁক প্যাঁক ধ্বনি, নাম না জানা পাখির কুজন, দূর থেকে ভেসে আসা গাড়ির হর্ন, নগর জীবনের হরেক শব্দছন্দ এবং সরস্বতী মন্ত্র-সব মিলে ভিডিও চিত্রে যেন ‘ম’ ‘ম’ করছে বসন্ত পঞ্চমীর চেনা গন্ধ।
[আরও পড়ুন: সরস্বতী পুজোর দিন দশ কেজি ফুলের রঙ্গোলিতে সাজবে নব নালন্দা]
পৌষ পেরিয়ে বাংলার গায়ে এখন মাঘের আমেজ। স্কুলে স্কুলে বাণী বন্দনার প্রস্তুতি তুঙ্গে। অন্যবারের মতো এবারও ‘সংবাদ প্রতিদিনে’র উদ্যোগে বসেছে ‘সরস্বতীর সেরা স্কুল’ প্রতিযোগিতার আসর। দাঁতচাপা সেই যুদ্ধে এবারের নয়া আকর্ষণ পড়ুয়াদের ‘শর্ট ভিডিও কনটেস্ট’। থিমের নামটাও বেশ-‘ভাবনারা তোমার সঙ্গী, ক্যামেরাতে করো বন্দি’। যেখানে ম্যাক্সিমাম তিন মিনিটের ভিডিও ক্লিপ পাঠাতে পারবে পড়ুয়ারা। পাঠাতে হবে অবশ্য স্কুলের মাধ্যমে, নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে, এমপি ৪ ফরম্যাটে। ই-মেল পাঠানোর শেষ তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি। কেমন হবে সে ভিডিও, তা বোঝাতে ‘রেডিও মির্চি’-তে বাজছে জিঙ্গল। সেরা তিন ভিডিও নির্বাচনের বিচারক গায়ক সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়। পুরস্কার মূল্য ১০ হাজার টাকা।
কেন এই প্রতিযোগিতা? উদ্যোক্তাদের কথায়, “এখন মোবাইলে ছবি তোলাটা ছোটদের প্রিয় নেশা। মোবাইলে আস্ত ফিল্ম পর্যন্ত বানিয়ে ফেলছে অনেক খুদে পরিচালক। বিদেশে, আমাদের দেশেও ছোটদের তোলা এ ধরনের শর্ট ফিল্ম নিয়ে প্রতিযোগিতা-ফেস্টিভ্যাল হচ্ছে। ছোটদের শিল্পীসত্তাকে উৎসাহিত করতেই আয়োজন। আজ অবধি যা হয়নি কখনও বাংলায়।” আর সুরজিৎ বলছেন, “যেভাবে ভিডিও জমা পড়া শুরু হয়েছে, তাতে ভিরমি খাচ্ছি। কাকে ছেড়ে কাকে বাছি, সেটাই চিন্তার।”