রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: স্কুলে ছাত্রছাত্রী অনেক, তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা কম। তাও আবার মাঝেমধ্যেই বদলি হচ্ছেন কেউ কেউ। তাঁদের বদলে নতুন কোনও শিক্ষক আসছে না। ফলে পড়াশোনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শনিবার স্কুলের কয়েকশো ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা ফেলে বিক্ষোভ দেখাল। ছাত্রছাত্রীদের মুখে স্লোগান শোনা গেল- ‘পড়তে চাই, নিয়োগ চাই।’ নজিরবিহীন বিক্ষোভের সাক্ষী নদিয়ার (Nadia) তেহট্টের সাদিপুর উচ্চ বিদ্যালয়।
থানারপাড়া থানার সাদিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১২০০। হিসেব অনুযায়ী সেখানে থাকার কথা ৩০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার। কিন্তু বর্তমানে স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র ১৪। তার মধ্যে থেকে ‘উৎসশ্রী’ প্রকল্পে একজন শিক্ষিকার বদলির আদেশ এসেছে। তিনি চলে গেলে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা দাঁড়াবে ১৩ জন, যা তুলনা খুবই কম। যে কারণে বিভিন্ন বিষয়ের একাধিক শিক্ষকের দাবিতে এবং শিক্ষক শিক্ষিকাদের বদলি আটকাতে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা দুপুর বারোটা থেকে দু’টো পর্যন্ত বিক্ষোভ (Agitation) করে। অবশেষ স্কুল পরিচালনমণ্ডলীর ভেবে দেখার আশ্বাসে ছাত্রছাত্রীরা এদিনের মতো বিক্ষোভে ইতি টানে।
[আরও পড়ুন: রথযাত্রার পরদিনই ‘অঘটন’! পুরীর গুণ্ডিচা মন্দিরে দুষ্কৃতী হামলা, ভাঙচুর ২০টি উনুন]
স্কুলের পড়ুয়া আরজুনা খাতুন, রিয়াজ মণ্ডলদের কথায়, ”দীর্ঘদিন লকডাউনে (lockdown) স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আমাদের। লকডাউন শেষে স্কুল খোলার পরে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুল থেকে বদলি নিয়ে নিজেদের পছন্দের স্কুলে চলে যাচ্ছেন। এমনকি লকডাউনের মধ্যেও শিক্ষক-শিক্ষিরা ট্রান্সফার হয়ে চলে গিয়েছেন। যিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা আছেন তিনিও বদলি নিয়ে চলে যাচ্ছেন। এর ফলে স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা দাঁড়াবে ১৩ জন। স্কুলে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে ৮ টি ক্লাস, একেকটি ক্লাসে এ বি সি সেকশন মিলে ক্লাসের সংখ্যা চব্বিশ, যেখানে শিক্ষক-শিক্ষিকা ১৩ জন। এই ১৩ জন শিক্ষক ১৩ টি ক্লাসে গেলে বাকি ক্লাসগুলিতে পড়াশোনা বন্ধ থাকছে। এমত অবস্থায় স্কুলের পঠনপাঠনের হাল খুবই খারাপ। যে কারণে স্কুলে বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে আমাদের এই বিক্ষোভ।”
অভিভাব মোস্তাক রাজা বিশ্বাস জানান, একজন শিক্ষক স্কুল থেকে বদলি হয়ে তাঁর পছন্দের স্কুলে যেতেই পারেন। কিন্তু তাঁর পরিবর্তে কোন শিক্ষককে তো আসতে হবে, স্কুল থেকে শুধু চলেই যাবে কেউ আসবে না, তা তো হয় না। স্কুলটিতে যেখানে কমবেশি ৩০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার দরকার সেখানে রয়েছে মাত্র ১৩ জন, যার ফলে অনেক ক্লাসে শিক্ষক-শিক্ষিকরা ক্লাস নিতেই পারেন না। ছাত্রছাত্রীদের এই বিক্ষোভ ন্যায়সংগত, একজন অভিভাবক হিসেবে পঠন পাঠনের স্বার্থে ছাত্রছাত্রীদের এই বিক্ষোভকে আমরা নৈতিকভাবে সমর্থন করছি।
[আরও পড়ুন: বিনা যুদ্ধে হার মানা নয়, স্পিকার নির্বাচনে শিণ্ডেদের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিল উদ্ধব সেনা]
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সৌমি কুণ্ডুর বক্তব্য, ”শেষ এসএসসি হয়েছে ২০১৬ সালে। আজ ২০২২ সাল। এখনও পর্যন্ত একজনও নিয়োগ হচ্ছে না কেন। নিয়োগ না হওয়ার ফলে শিক্ষক শিক্ষিকার ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁরা তো তার নিজের এলাকায় পছন্দের কোন স্কুলে যে শিক্ষকের প্রয়োজন সেই স্কুলে তাঁরা বদলি নিচ্ছেন। আমি নিজেও ১৭ বছর এই স্কুলে কাজ করছি। আমার বাড়ি কলকাতা। প্রত্যেকদিন আমাকে ২৮০ কিলোমিটার আপডাউন করতে হচ্ছে। রাজ্য সরকারের উৎসশ্রী প্রকল্পে আমার ট্রান্সফার হওয়াটা নৈতিক অধিকার। ঠিকই সেই দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ নেই এটাও মানতে হবে, যার ফলে শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব দেখা দিচ্ছে। নিয়োগ শুরু হলেই সমস্যা মিটে যাবে।”
দেখুন ভিডিও: