ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: তৃণমূল সুপ্রিমোর নেতৃত্বে বৈঠক মানে প্রতিটা মুহূর্ত চূড়ান্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর কথা মন দিয়ে শোনা, তাঁর দিক নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে তা মনের মধ্যে গেঁথে নেওয়া – এসব ছাড়া অন্য কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়ই না। নবীন থেকে প্রবীণ প্রজন্মের তৃণমূল সদস্য – সকলের মন বাঁধা থাকে ওই নেত্রীর শব্দের সুতোয়। কিন্তু শুক্রবারের দিনটা ব্যতিক্রম হয়ে গেল। সম্ভবত, এমন ব্যতিক্রমী বৈঠকের ছবি আগে কখনও দেখেননি কেউ। ঘটনা আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) আচমকা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়া। এবং সেইসঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা, দলের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী সুব্রত বক্সির কান্নাভেজা মুখ। বৈঠক থেকে যা বার্তা নেওয়ার, তা নেওয়ার পর এই ছবি সকলের মনে জায়গা করে নিল হয়তো চিরস্থায়ীভাবেই।
ঘটনা ঠিক কী? অন্দরের খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বৈঠকের মাঝে উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠেন ”কেউ কেউ আমার জায়গাটা নিতে চাইছে। সেটা তো আমার মৃত্যুর পরেই সম্ভব। অর্থাৎ সে আমার মৃত্যু কামনা করছে। কিন্তু আমার মৃত্যু তো আমার হাতে নেই, ঈশ্বরের হাতে।” দলনেত্রীর এই বক্তব্য শোনার পর নিজেকে আর সামলে রাখতে পারেননি দলের রাজ্য সভাপতি তথা বর্ষীয়ান নেতা সুব্রত বক্সি (Subrata Bakshi)। তিনি নিজের ভাষণ দিতে উঠে কেঁদে ফেলেন। কান্নাভেজা গলাতেই বলেন, ”আপনি কখনও এমন কথা বলবেন না। আপনি থাকবেন। আপনি শতায়ু হবেন। আমরা কেউ আপনার মৃত্যু কামনা করি না। দীর্ঘ আন্দোলনের অভিজ্ঞতা আপনার। সেই লড়াইয়ে আমরা সঙ্গে আছি আপনার। আপনার নেতৃত্বে বাংলা ভাল আছে। আপনিই আমাদের পথ দেখাবেন। আপনার নেতৃত্বে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।” তাঁকে এভাবে ভেঙে পড়তে দেখে মমতাও খানিক থমকে যান। তারপর সুব্রত বক্সিকে আশ্বস্ত করে জলের গ্লাস এগিয়ে দেন। বলেন, ”আপনি কাঁদবেন না। শান্ত হোন।” তাতে কিছুটা কাজ হলেও, বৈঠকের বাকি সময়টা সুব্রত বক্সিকে খুবই বিমর্ষ লাগছিল বলে ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: রাজভবনে শোভন-বৈশাখী, কলেজের সমস্যায় ফিরহাদের ‘সাম্প্রদায়িক’ মন্তব্য নিয়ে নালিশ]
বৈঠক শেষে আপাতত আলোচনার কেন্দ্রে সুব্রত বক্সির এই কান্না। এমনিতে অত্যন্ত শক্তপোক্ত, কঠোর চরিত্রের মানুষ বলে পরিচিত সুব্রত বক্সি। সারাটা জীবন সংগ্রামের পথে থাকা অভিজ্ঞ মানুষটিকে কেউ কখনও সামান্য নরম হতেও দেখেনি। কিন্তু আজ তেমনই অভূতপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী রইলেন দলের সকলে। মনে প্রশ্ন, কী এমন হল যে তাঁর চোখে জল?
[আরও পড়ুন: ‘কেউ দলবিরোধী কাজ করলে এখনই বের করে দিন’, শিশির অধিকারীকে নির্দেশ মমতার]
আসলে, মমতা মানে তো শুধু দলনেত্রী কিংবা মুখ্যমন্ত্রী নন। মমতা এক আন্দোলনের নাম। যে আন্দোলনের পথ ধরে হেঁটেছেন, হাঁটছেন দলের বহু সদস্য। সেই আন্দোলনের প্রতিভূ যখন নিজমুখে নিজের মৃত্যুর কথা বলেন, তখন অনুগামীদের আবেগে ধাক্কা লাগাই স্বাভাবিক। মৃত্যু এমনই বিষয়, যার মুখোমুখি না হলেও শব্দটি উচ্চারণের অভিঘাতও তো কম নয়। তা সহজে সামলে ওঠা সহজ কথা নয়। তাই লৌহকঠিন মানুষের নরম হৃদয়ও কেঁদে ওঠা স্বাভাবিক ঘটনাই হয়ত। তবে ব্যতিক্রমী, নিঃসন্দেহ।