সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চিন-পাকিস্তানের রক্তচাপ বাড়িয়ে ফের পরীক্ষায় সফল হল ভারতের পরমাণু অস্ত্রবহনে সক্ষম দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি-৫। অগ্নি সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মধ্যে অগ্নি-৫ এর পাল্লা সবচেয়ে বেশি। এর মারণক্ষমতার সর্বোচ্চ পাল্লা পাঁচ হাজার কিলোমিটার। অর্থাৎ চিনের শতকরা ৮০ শতাংশ এলাকা, ইউরোপ ও আফ্রিকার বেশিরভাগ অংশ অগ্নি-৫ এর নাগালের মধ্যে পড়ছে।
[‘গণতন্ত্র বাঁচানোর লড়াই’, মহাজোটের বৈঠক শেষে এককাট্টা বিরোধীরা]
ভারত এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া না জানালেও স্বাভাবিকভাবেই রক্তচাপ ও দুশ্চিন্তা বেড়েছে চিন ও পাকিস্তানের। যদিও চিনা সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্তারা এবং চিনের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বেশ কয়েক মাস আগেই দাবি করেছিলেন, ভারতের অগ্নি-৫ এর পাল্লা আসলে আট হাজার কিলোমিটার। ভারত কৌশলগত কারণেই তা কমিয়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটার বলছে। অর্থাৎ অর্ধেক দুনিয়া বা পূর্ব গোলার্ধের বেশিরভাগ ভূখণ্ডই ভারতের এই পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লার মধ্যে পড়ছে। যুদ্ধ ও কূটনীতিতে অবস্থানগতভাবে সুবিধাজনক জায়গায় থাকতেই ভারত সরকার ও ভারতীয় সেনা অগ্নি-৫ এর পাল্লা কমিয়ে বলছে। চিনা বিশেষজ্ঞদের মতো একই অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন কয়েকজন মার্কিন যুদ্ধ বিশেষজ্ঞও। যদিও আমেরিকা মনে করে, চিনা ক্ষেপণাস্ত্রগুলির পাল্লা অন্তত ১০ বা ১২ হাজার কিলোমিটার। তবে উত্তর কোরিয়ার আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রগুলির (আইসিবিএম) পাল্লা চিন, আমেরিকা বা রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মতো নয়। তার থেকে অনেক কম। কিন্তু নিজের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি জাহির করতেই উত্তর কোরিয়া বরাবরই নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্রগুলির পাল্লা বাড়িয়ে বলে থাকে।
[বিশৃঙ্খল অর্থনীতিকে শৃঙ্খলায় ফিরিয়েছেন উর্জিত, প্রশংসা মোদি-জেটলির]
ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, সোমবার ওড়িশা উপকূলে ডঃ আবদুল কালাম দ্বীপের পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে সম্পূর্ণ ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি অগ্নি-৫ এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ সফল হয়েছে। এর পুরো কৃতিত্ব প্রতিরক্ষা গবেষণা কেন্দ্র (ডিআরডিও)-র বিজ্ঞানীদের। ইন্টিগ্রাল টেস্ট রেঞ্জের চার নম্বর লঞ্চ প্যাড থেকে দ্রুতগামী মোবাইল রকেট লঞ্চারের মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণ করা হয়। বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে সেটি আঘাত হানে। ২ মিটার চওড়া, ১৭ মিটার লম্বা অগ্নি-৫ দেড় টন পরমাণু অস্ত্র বা নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বহনে সক্ষম। গোটা পরীক্ষাটি হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কম্যান্ডের অধীনে।
[আজ থেকে আরও দামি তাজমহলের টিকিট]
প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, অগ্নি-৫ এর আগে ছয়টি পরীক্ষা সফল হয়েছিল। এটি ছিল সপ্তম দফার ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। তাতেও সফল হওয়ায় বেশ খুশি সেনাবাহিনী এবং ডিআরডিও। ২০১২, ২০১৩, ২০১৫, ২০১৬ সালে পর পর পরীক্ষা সফল হয়েছিল। এরপর চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি এবং ৩ জুন ফের অগ্নি-৫ এর পরীক্ষা সফল হয়। শেষ পরীক্ষাটি চালানো হল ৯ ডিসেম্বর। উল্লেখ্য, অগ্নি-১ এর পাল্লা ৭০০ কিলোমিটার, অগ্নি-২ এর পাল্লা দুই হাজার কিলোমিটার, অগ্নি-৩ এবং অগ্নি-৪ এর পাল্লা আড়াই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার। অগ্নি-৫ হল আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র এবং এর পাল্লা অন্তত ৫ হাজার কিলোমিটার। গুণমানে ও মারণক্ষমতায় এটি রুশ, মার্কিন ও চিনা ক্ষেপণাস্ত্রগুলির সমতুল। এটি অন বোর্ড কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত, পুরোপুরি ডিজিটাল নিয়ন্ত্রিত, ভয়েস কম্যান্ডে কাজ করতে পারে। শেষ মুহূর্তেও এর দিক নিয়ন্ত্রণ করে টার্গেট বদল করা যায়। বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে এলে বাতাসের সঙ্গে সংঘর্ষে ক্ষেপণাস্ত্রের ধাতব খোলসের তাপমাত্রা হয় চার হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু ভারতীয় বিজ্ঞানীদের নিজস্ব প্রযুক্তি ও কারিগরির দৌলতে অগ্নি-৫ এর অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রির মধ্যে থাকে। ফলে ক্ষেপণাস্ত্রের নিজস্ব নেভিগেশন এবং জটিল প্রযুক্তি অক্ষত থাকে। জানা গিয়েছে, সোমবার বিকেলে পরীক্ষাটি চালানো হলেও তা নিয়ে প্রচারমাধ্যমে যাতে বেশি হইচই না হয় সেজন্য আগাম সংবাদমাধ্যমকে কিছু জানানো হয়নি।
The post চিন-পাকিস্তানের রক্তচাপ বাড়িয়ে পরীক্ষায় সফল অগ্নি-৫ appeared first on Sangbad Pratidin.