বিক্রম রায়, কোচবিহার: প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে ধানের ক্ষতি ঠেকাতে সুধা পদ্ধতিতে ধানের চারা রোপন করতে পারেন চাষিরা। এই পদ্ধতিতে ধানের বীজ ২০ দিনের বদলে ৫০ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত চারা হিসাবে রেখে দেওয়া সম্ভব। উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হলে সেখানে এই পদ্ধতিতে তৈরি করা বীজবপন করলে ভাল ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। ধান হওয়ার ক্ষেত্রে সময় প্রায় একই লাগে। ফলে নিচু জমিতে জল জমে যাওয়া বা নির্দিষ্ট সময়ে বর্ষা না হওয়ার ক্ষেত্রেও চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়বেন না। সুধা পদ্ধতিতে ধান চাষে এবার আগ্রহ বাড়াচ্ছে রাজ্য কৃষি দপ্তর কোচবিহার জেলা সহ কৃষি অধিকর্তা (প্রশিক্ষণ) রজত চট্টোপাধ্যায় এ খবর জানান। তিনি এই পদ্ধতিতে চাষে করণীয় সে সম্পর্কে সবিস্তারে জানান।
বীজ বপনের পদ্ধতি: এক বিঘা জমিতে ধানের চারা লাগানোর জন্য দু’কাঠা জমিতে চারা তৈরি করতে হবে। তবে সাধারণ পদ্ধতিতে প্রায় পাঁচ থেকে ছ’কেজি ধান বীজ তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে এক্ষেত্রে প্রায় দু’কেজি ধানের বীজ তৈরি করলেই যথেষ্ট। ধানের চারা তৈরির আগে বীজ ধান লবণ জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এর ফলে দুর্বল ও অপুষ্ট ধান বাদ পড়ে যায়। শুধু তাই নয়, কিছুক্ষণ জিংক সালফেটে এই বীজ ডুবিয়ে রাখতে হবে। এতে বীজ শুধুমাত্র শক্তিশালীই নয়, ভাল বীজ অঙ্কুরিত হবে। বীজতলা তৈরির ২০ থেকে ২১ দিনের মধ্যে সেগুলি তুলে চারা হিসাবে লাগিয়ে দিতে হয়। তবে সুধা পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করলে সেটা প্রযুক্ত পরিবেশ তৈরি হওয়া পর্যন্ত ৫০ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত একই স্থানে রেখে দেওয়া সম্ভব।
[ আরও পড়ুন: ভাল ফসল পেতে ভরসা মাটি, জেনে নিন স্বাস্থ্যরক্ষার প্রণালী]
সার প্রয়োগ: বীজ লাগানোর সময় প্রতি দু’কাঠায় ফসফেট এক থেকে দেড় কেজি, পটাশ ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম এবং ইউরিয়া ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম দিতে হবে। পরে প্রতি ১৫ দিন পর পর অনুখাদ্য হিসেবে এক লিটার জলের অর্ধেক গ্রাম চিলেটেড জিংক মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
জলসেচ: মাটি যাতে না শুকিয়ে যায় সেদিকে সব সময় কঠোর নজর রাখতে হবে। মাটিতে জলের ভাগ কমে যাচ্ছে বুঝতে পারলেই নিয়মিত উপযুক্ত পরিমাণে জল দিতে হবে।
[ আরও পড়ুন: রাসায়নিক নয়, ভাল ফলন পেতে কৃষকের ভরসা কেঁচো সারই]
সুবিধা: সাধারণ ক্ষেত্রে রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় বন্যাপ্রবণ। প্রবল বর্ষার জেরে নিচু এলাকায় জল জমে যায়। সেক্ষেত্রে জলের মধ্যে চারা লাগিয়ে দিলে ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সুধা পদ্ধতিতে চারা তৈরি করে উপযুক্ত সময় ধান লাগানো সম্ভব। এই পদ্ধতিতে যে চারা তৈরি হয় তার গুণগতমান অনেকটাই বেশি থাকায় ফলন ভাল হয়। এতে চাষিরা ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে লাভবান হতে পারবেন।
ছবি: দেবাশিস বিশ্বাস
The post প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধানের ক্ষতি ঠেকাতে ভরসা ‘সুধা’ পদ্ধতি appeared first on Sangbad Pratidin.