সুধীর গৌতম: ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় থেকে আমি শচীন তেণ্ডুলকরের (Sachin Tendulkar) ভক্ত। ক্রিকেটে আমার আগ্রহই জন্মেছিল শচীন স্যরকে দেখে। স্কুলে আমি ভালই ক্রিকেট খেলতাম। পরের দিকে আন্তঃকলেজ টুর্নামেন্টে এলএস কলেজের জন্য নির্বাচিতও হই। কিন্তু আমাকে খেলার কখনও সুযোগ দেওয়া হয়নি। উলটে একজন অন্তঃপ্রাণ ভক্ত হিসেবে শচীন স্যরের সঙ্গে দেখা করতে চাই বলায়, আমাদের গেমস টিচার একবার আমাকে উপহাসও করেছিলেন।
যাক গে। মাস্টারকে আমি প্রথম দেখি ২০০২ সালে। কিনান স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে খেলতে এসেছিলেন উনি। তার পর ২০০২ সালের জানুয়ারি মাসে ইডেন গার্ডেন্সে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাস্টারের খেলা আমি দেখি। একই সিরিজে কানপুরের গ্রিন পার্কে আবার চতুর্থ ওয়ান ডে-টাও আমি দেখি। তখন থেকেই শচীন স্যরের সঙ্গে আমার সফরের শুরু।
[আরও পড়ুন: ‘আমার লেগ গার্ড শচীনকে দিয়েছিলাম’, প্রিয় ‘তেণ্ডলা’র কৈশোরের কথা সুনীল গাভাসকরের মুখে]
প্রথম মাস্টার দর্শন
অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং ভারতকে নিয়ে ২০০৩ সালের ত্রিদেশীয় টিভিএস কাপে মুম্বই গিয়েছিলাম। ওয়াংখেড়েতে চতুর্থ ওয়ান ডে দেখতে। ট্রাইডেন্ট হোটেলে শচীন স্যরের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়। উনি আমাকে বলেছিলেন, ওঁর বাড়ি যেতে। যাওয়ার পর উনি আমাকে বাড়ির ভেতর নিয়ে যান, জুস দেন খেতে। শুধু তাই নয়, শচীন স্যর আমাকে একটা জার্সির সঙ্গে খেলা দেখার জন্য ম্যাচের একটা টিকিটও দেন।
পরের ম্যাচটাই ছিল নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। কটকে। আমি মাঠের ভেতরে লাফিয়ে ঢুকে ওঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম করেছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীরা মাঠে ঢুকে আমাকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। শচীন স্যর নিরাপত্তারক্ষীদের বলেন যে, আমাকে না মারতে।
পরের দিকে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে আরও একটা ম্যাচে শচীন স্যর সেঞ্চুরি করেছিলেন। আমি আবার লাফিয়ে মাঠের মধ্যে ঢুকে ওঁর সঙ্গে দেখা করতে যাই। কিন্তু সে বার ধরা পড়ে যাই আমি। পুলিশ আমাকে সেকেন্দ্রাবাদ থানায় নিয়ে যায়। রাতে ছাড়ার আগে ভাল রকম মারধরও করে। যার পর আমি ইডেনে ফাইনাল দেখতে যেতে পারিনি। আমি ফের মুম্বই যাই। শচীন স্যরের সঙ্গে দেখা করতে। এবার উনি আমাকে বেশ বকুনি দিয়ে বলেন যে, মাঠের মধ্যে লাফিয়ে না ঢুকে পড়তে।
[আরও পড়ুন: ‘চিরকালই পাশের বাড়ির ছেলে শচীন’, মাস্টার ব্লাস্টারের স্মৃতি রোমন্থনে গ্র্যান্ডমাস্টার]
শরীরে রং করিয়ে তেণ্ডুলকরের ১০ নম্বর লেখা…
পড়াশোনা করতাম যখন, একমাথা চুল ছিল আমার। কিন্তু জামশেদপুর গিয়ে শারন শর্মার সঙ্গে আমার দেখা হয়। যে কি না মাথা ভরতি চুল রেখেও ভারতের ম্যাপ তাতে ডিজাইন করেছিল। আমি ঠিক করি, উলটোটা করব। চুল কামিয়ে ভারতের ম্যাপ আঁকাব, আর তাতে রং করব। আর প্রথম যখন আমি মুম্বইয়ে মাস্টারের সঙ্গে দেখা করতে যাই, পুরো শরীর রং করিয়ে গিয়েছিলাম। যাতে ‘তেণ্ডুলকর ১০’ লেখা ছিল। আগে আমি শুধু পিঠে ‘তেণ্ডুলকর ১০’ লিখতাম। কিন্তু ২০০৬ সালের পর সামনেও লেখা শুরু করি। ভারতের ম্যাপও তখন থেকে আমার সঙ্গে ছিল, যা কি না ধীরে ধীরে আমার পরিচয়পত্র হয়ে গেল।
২০১১ বিশ্বজয়ের পর ভারতীয় ড্রেসিংরুমে আমন্ত্রণ…
২০১১ সালের ২ এপ্রিল আমরা বিশ্বকাপ জিতলাম যখন, নিরাপত্তারক্ষীরা গ্যালারিতে আমার কাছে চলে এসেছিল। ভাবছিলাম, আবার কী ভুল করলাম আমি? নিরাপত্তারক্ষীরা আমাকে ড্রেসিংরুমের সামনে নিয়ে গেল। দেখলাম, শচীন স্যর আমাকে ড্রেসিংরুমের সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসতে বলছেন! প্রথমে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারিনি। শচীন স্যর আমাকে ডাকছেন! জাহির ভাই (জাহির খান) আমাকে সে দিন বলেছিলেন, বিশ্বকাপ ট্রফিটা তুলতে! শচীন স্যর এসে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আমার সঙ্গে ছবি তুলেছিলেন! সেটা সম্ভব হয়েছিল, একমাত্র শচীন স্যরের জন্যই।