বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: শুভেন্দু অধিকারীর পর সুকান্ত মজুমদার। রাজ্যে ৩৫৫ ধারা জারি করার দাবি ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। জানিয়ে দিলেন, আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। এখানে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করতে পারে না। অধিবেশন শুরু পর থেকেই শাহর সাক্ষাৎ পেতে মরিয়া ছিলেন সুকান্ত। কিন্তু তারমাঝেই দেখা করেন শুভেন্দু। রাজ্যের দুই শীর্ষনেতার সঙ্গে আলাদা আলাদা করে কেন বৈঠক করতে হচ্ছে শাহকে। জল্পনা শুরু হয়েছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে।
প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কী শুভেন্দুর দেওয়া তথ্য বিশ্বাসযোগ্য হয়নি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। তাই আলাদা করে সুকান্তর সঙ্গে কথা বলে সত্যতা যাচাই করে নিলেন তিনি। সেইসঙ্গে রাজ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কোন পর্যায়ে রয়েছে তাও দু’জনের মুখ থেকে আলাদা করে বুঝে নিতে চাইছেন গেরুয়া শিবিরের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’। যদিও বুধবার সংসদে অমিত শাহর সঙ্গে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ও সংগঠন নিয়ে কথা হয়েছে বলে জানান বিজেপির রাজ্য সভাপতি। এদিন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি।
[আরও পড়ুন: OMR শিটে বিস্তর গরমিল, SSC’র গ্রুপ ডি দুর্নীতিতে ED তদন্তের নির্দেশ হাই কোর্টের]
পূর্বাঞ্চলীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে আগেরদিন রাতেই মুরলীধর সেন লেনের রাজ্য কার্যালয়ে নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে শাহর দু’পাশে আলো করে বসেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বৈঠকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ও সংগাঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সংগঠনকে আরও মজবুত করার নির্দেশ দেন শাহ। এরপর সোমবার দলের সাংসদ ও রাজ্য নেতৃত্বকে নিয়ে দিল্লিতে কেন্দ্রীয়মন্ত্রী সুভাষ সরকারের বাসভবনে মধ্যরাত পর্যন্ত বৈঠক করেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। পরদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার সংসদে গিয়ে অমিত শাহর সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন শুভেন্দু। কিন্তু তার অনেক আগে থেকেই চেষ্ঠা করেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেখা পাননি সুকান্ত। শুভেন্দু কলকাতা ফিরে যেতেই বুধবার সংসদের নিজের দপ্তরে সুকান্তকে ডেকে নেন শাহ।
কিন্তু এখানেই প্রশ্ন, কেন দুই নেতার সঙ্গে আলাদা আলাদা করে বৈঠক করলেন তিনি। সূত্রের খবর, শুভেন্দু অধিকারী নিজের বিরুদ্ধে রাজ্যের করা এফআইআর ও মামলার তালিকা তুলে দেওয়ার পাশাপাশি শাহর কাছে আইনশৃঙ্খলার পাশাপাশি সংগঠন নিয়েও বেশকিছু অভিযোগ জানিয়েছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন। অনেক নেতার কাজকর্ম নিয়ে শাহর কাছে অভিযোগও জানান। যে অভিযোগ সকলের সামনে করতে পারছিলেন না। কিন্তু তখনই আরও প্রশ্ন ওঠে, শাহ-শুভেন্দুর বৈঠকের সময় সংসদে হাজির ছিলেন সুকান্ত। তাঁকে কেন এড়িয়ে গেলেন বিরোধী দলনেতা? সূত্রের খবর, বঙ্গ বিজেপিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কারওর অজানা নয়। নাড্ডার সঙ্গে সংসদদের বৈঠকের দিন তা স্পষ্ট করেন দলের সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে রাজ্য সভাপতি কী ভূমিকা নিয়েছেন তা জেনে নেওয়ার পাশাপাশি শুভেন্দুর অভিযোগের সত্যতাও জেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সেইসঙ্গে শাহ রাজ্য সংগঠনের প্রকৃত হাল জানতে চেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটের আগে মাস্টারস্ট্রোক রাজ্যের, ৯১ লক্ষ সুবিধাভোগী পেলেন ‘কৃষকবন্ধু’র টাকা]
যদিও বৈঠকের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে চাননি বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তিনি জানান, অনেকদিন ধরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করছিলাম। ব্যস্ততার কারণে তিনি সময় দিতে পারছিলেন না। এদিন নিজেই ডেকে পাঠান। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ও সাংগাঠনিক বিষয়ে কথাবার্তা হয়েছে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় প্রকল্প সম্পর্কে রাজ্যের মানুষ কতখানি ওয়াকিবহাল তাও জানতে চান বলে জানান তিনি। ৩০ জানুয়ারি রাজ্যে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা। দলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গেও যাতে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করেন সুকান্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সেই আবেদনও জানিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।