সুনন্দন লেলে: শচীন আমার কাছে ঈশ্বর নন। বরং ঈশ্বরের সেই বরপুত্র, যিনি যেমন শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার তেমন শ্রেষ্ঠ মানুষও। তিন দশক ধরে ওঁকে দেখছি। দেখলাম সেদিনের সেই ছোট্ট চারাগাছ কেমন বনস্পতি হয়ে স্নিগ্ধ ছায়া দিল গোটা দেশকে। শচীন (Sachin Tendulkar) যে কত বড় মনের মানুষ, সে-কথাই বলি। সেবার ম্যাচ ছিল মোহালিতে। আমি শুনতে পেলাম, একজন মহিলা আমাকে ডাকছেন। তিনি শহিদ সেনাকর্মীর স্ত্রী। তাঁর ছেলে মেরুদণ্ডের এক বিরল অসুখে আক্রান্ত হয়ে হুইলচেয়ারে বন্দি। মহিলার একান্ত আশা যে, ছেলের সঙ্গে একবার শচীনের দেখা হোক। এরকম অনুরোধ তো অনেকেই করেন। সব কি আর রাখা যায়! তবু যখন আমি শচীনকে বললাম ছেলেটির কথা, ও এক কথায় দেখা করতে রাজি হল। শচীনের কথামতো, হোটেলে এসে দেখা করল ছেলেটি।
[আরও পড়ুন: একদিনে প্রণামী পড়ল ‘মোটে’ ২.৮৫ কোটি, গরিব হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মন্দির!]
সেদিন টিম মিটিং শেষ হতে একটু দেরি হচ্ছিল। শচীন খেয়াল করে, অতিথিদের জন্য কফির ব্যবস্থা করল। শচীন যখন সামনে এল, তখন তো ছেলেটির চোখেমুখে বিস্ময়। ছেলেটি কোনওক্রমে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল। আমি দেখতে পাচ্ছি, যন্ত্রণায় ওর মুখ কুঁকড়ে যাচ্ছে। সেই অবস্থায় সে শুধু বলতে পারল, শচীনই সেই মানুষ, যাঁকে দেখে সে জীবনে লড়াই করার সাহস পায়। ছেলেটির আবদার, তার হুইলচেয়ারের স্ট্র্যাপের উপর শচীন যেন অটোগ্রাফ দেন। শচীন কলম হাতে তুলে নিল, আর আমি দেখলাম, ওর হাঁত কাঁপছে। এই অনুভবী মানুষটির নামই শচীন। এরকম বহু ঘটনার কথাই বলা যায়।
আসলে একশোটা সেঞ্চুরি শচীনের সবথেকে বড় অর্জন নয়। দেশের মানুষ চান, শচীন নায়ক হয়ে উঠুন প্রতিবার, প্রতি ইনিংসে। সেই প্রত্যাশার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শচীন হয়ে ওঠাই ওর শ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব। একবার পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯৮ রানে আউট হওয়ার পরও দেখলাম, শচীন একেবারে শান্ত। প্রশ্ন করেছিলাম যে, কীভাবে এমন শান্ত থাকতে পারে? শচীন হেসে বলেছিল, সারা বছর কেউ পড়াশোনা না-করলে তার পরীক্ষায় ভয় থাকে। আমার ক্ষেত্রে সেরকম নয়। কঠিন প্রশ্ন আর আমাকে ভাবায় না। আমি শুধু ঠিক সময়ের অপেক্ষায় থাকি। পরিস্থিতি কেমন তা বিবেচনা করে ভয় পাই না। ভয় পাই শুধু তখনই যখন আমি প্রস্তুত থাকি না। নির্দ্বিধায় বলতে পারি, এই মানসিকতারই নাম শচীন তেণ্ডুলকর।