সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নারদ মামলায় (Narada case) খানিকটা পিছু হঠে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করেছে সিবিআই। বলা ভাল প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, মঙ্গলবারের সওয়াল-জবাবে সিবিআইয়ের আইনজীবীদের রীতিমতো কঠিন প্রশ্নবাণের মুখে পড়তে হয়েছে শীর্ষ আদালতে (Supreme Court)। দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআইয়ের আইনজীবীদের এমন কিছু প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন, যার যোগ্য জবাব সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতার কাছেও ছিল না। ঠিক কী হল মঙ্গলবারের সওয়াল জবাবে?
“ব্যক্তি স্বাধীনতা সর্বাগ্রে বিচার্য”
মঙ্গলবার বিচারপতি বিনীত শরণ এবং বিচারপতি বিআর গাভাইয়ের ডিভিশন বেঞ্চ শুরুতেই সিবিআই (CBI) আইনজীবীদের জানিয়ে দেয়, এক্ষেত্রে অভিযুক্তদের ব্যক্তি স্বাধীনতা সবার আগে দেখা হবে। তাই আপনাদের উচিত এখনই মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া। পালটা সলিসিটর জেনারেল সওয়াল করার চেষ্টা করেন, এই অভিযুক্তরা প্রভাবশালী। খোদ মুখ্যমন্ত্রী ওঁদের জন্য ধরনা দিয়েছেন। রাজ্যের আইনমন্ত্রী আদালত চত্বরে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। কিন্তু তাঁকে দুই বিচারপতির বেঞ্চ জবাব দেয়, অন্য কেউ যদি আইন হাতে তুলে নেয়, তার শাস্তি অভিযুক্তরা পেতে পারে না। এক্ষেত্রে অভিযুক্তদের ব্যক্তি স্বাধীনতাই বিচার্য।
[আরও পড়ুন: রাজনৈতিক হিংসায় ভিন রাজ্যে আশ্রিত ব্যক্তিদের জন্য কী ব্যবস্থা? রাজ্যকে ‘সুপ্রিম’ নোটিস]
“রায়ের নোটিস নয় কেন?”
বিচারপতি গাভাই (BR Gavai) সিবিআইয়ের আইনজীবীদের কাছে জানতে চান, ১৭ মে কলকাতা হাই কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল, তার আগে কি অভিযুক্তদের নোটিস দেওয়া হয়েছিল? জবাবে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা (Tushar Mehta) স্বীকার করে নেন, যে অভিযুক্তদের কোনও নোটিস দেওয়া হয়নি। ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ তখন সলিসিটর জেনারেলকে বলেন,”অভিযুক্তকে নোটিস না দেওয়ার অর্থ তাঁর ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।”
“অন্য কেউ আইন হাতে নিলে অভিযুক্তরা কেন শাস্তি পাবে?”
নোটিস নিয়ে বিচারপতিরা প্রশ্ন তুললে সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটর জেনারেল জানান, এই মামলাটির অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সওয়াল জবাব হয়েছে। জবাবে ফের কটাক্ষ শুনতে হয় তাঁকে। এবারে বিচারপতিরা বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে দিতে চাই, যে কোনওরকম ধরনা আমরাও সমর্থন করি না। কিন্তু যদি মুখ্যমন্ত্রী বা আইনমন্ত্রী আইন হাতে তুলে নেনও, তাহলেও অভিযুক্তরা শাস্তি কেন পাবে? আপনাদের যদি মনে হয়, যাঁরা আইন হাতে তুলে নিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করুন।”
“নজরবন্দি থাকলে সিবিআইয়ের সমস্যা কোথায়?”
সওয়াল জবাব চলাকালীন বিচারপতিরা সিবিআই আইনজীবীদের কাছে প্রশ্ন তোলেন, অভিযুক্তরা তো বাড়িতে নজরবন্দিই আছেন, তাহলে আপনারা চাইছেনটা কী? আমাদের কাছে আপনারা কী ধরনের স্বস্তি চাইছেন? আমরা আগে দেখেছি, মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষার্থে বিশেষ বেঞ্চে শুনানি হয়েছে। সম্ভবত এটাই প্রথমবার ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করার জন্য বিশেষ মামলার শুনানি হয়েছে।
[আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্ট থেকে মামলা প্রত্যাহার, নারদ কাণ্ডে পিছু হঠল সিবিআই]
“আপনিই তো আজ শুনানি চাইলেন”
সলিসিটর জেনারেল সওয়াল করেন, বাংলায় বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। আমরা দেখেছি অভিযুক্তকে বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রী থানায় ছুটে যান। তুষার মেহেতার দাবি ছিল, “এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ মামলা। শুধু নোটিস দেওয়া হয়নি বলে, এভাবে মামলাটা ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া ঠিক হবে না।” এরপরই সলিসিটর জেনারেল মামলাটি শুক্রবার পর্যন্ত স্থগিত করার আরজি জানান। কিন্তু বিচারপতিরা তাতে রাজি হননি। বিচারপতি শরণ বলেন,”আপনাদের অনুরোধেই তো মামলাটির আজ শুনানি হচ্ছে।”
“একজন বিচারপতির আপত্তি থাকলেও জামিন হওয়া উচিত”
শুনানি চলাকালীন বিচারপতি সরাসরি সিবিআই আইনজীবীকে বলেন, আমি গত ১৮ বছর ধরে বিচারপতি হিসেবে কাজ করছি। সাধারণত, বেঞ্চের একজন বিচারপতি জামিনে আপত্তি জানালেও জামিন দেওয়া হয়। যতদিন না আরও বড় বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি হচ্ছে। তাছাড়া, হাই কোর্টের ৫ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে তো মামলাটি দেখছেই। তাহলে আপনারা কেন এই মামলা থেকে তাঁদের বঞ্চিত করছেন? ডিভিশন বেঞ্চ সলিসিটর জেনারেলকে মনে করিয়ে দেন, সংবিধান রক্ষার ক্ষেত্রে হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট একই ভূমিকা নেয়।
“রাজনীতিবিদ আর ব্যক্তিকে গুলিয়ে ফেললে হবে না”
আদালতের কটাক্ষের মুখে সলিসিটর জেনারেল আরও একবার বোঝানোর চেষ্টা করেন, এই মামলাটি কোনও সাধারণ মামলা নয়। তাতে ডিভিশন বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দেয়, “কোনও রাজনীতিবিদের বেআইনি কাজের সঙ্গে কোনও ব্যক্তির স্বাধীনতা গুলিয়ে ফেললে চলবে না। এখানে একটি বিষয়ই দেখার। অভিযুক্তদের জামিন দেওয়া যায় কিনা। বাকি সব এই সম্পর্কিত অন্য কোনও মামলায় দেখা হবে।” এরপরই সিবিআইয়ের আইনজীবীকে মামলা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানায় দুই বিচারপতির বেঞ্চ।