shono
Advertisement

‘দিনে চার ঘণ্টা স্কুপ মারত, লোকে বলত বেসবল খেলছে’, সূর্য-তেজের রহস্য ফাঁস করলেন মেন্টর

উইকেটের পিছনেও 'V' থাকে, দেখিয়ে দিয়েছেন সূর্যকুমার।
Posted: 08:57 AM Nov 10, 2022Updated: 08:57 AM Nov 10, 2022

কৃশানু মজুমদার: পারথে গ্লেন ম্যাকগ্রার মতো ভয়ংকর বোলারকে স্কুপ শট মেরে অবলীলায় বাউন্ডারিতে পাঠিয়েছিলেন জিম্বাবোয়ের ডগলাস মারিলিয়ার। সে অবশ্য অনেক আগের কথা। এখনও অনেকে প্রশ্ন করেন মারিলিয়ার কি স্কুপ শটের আবিষ্কর্তা?

Advertisement

শ্রীলঙ্কার তিলকরত্নে দিলশান স্কুপ মেরে রান করতেন প্রচুর। তাঁর স্কুপের নামই হয়ে গিয়েছিল দিলস্কুপ। সেও অনেক দিন আগের ঘটনা। স্কুপ শটকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন ভারতের সূর্যকুমার যাদব (Surya Kumar Yadav)। চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে (ICC T-20 World Cup) তাঁর স্কুপ শট নিয়ে জোর চর্চা হচ্ছে সর্বত্র। যাঁকে নিয়ে এত আলোচনা, সেই সূর্যকুমার যাদব বলছেন রবার বলে খেলে এই ধরনের শট শিখেছেন। তাঁর কোচ বিনায়ক মানে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে বলছেন, ”দিলশানকে দেখেছে স্কুপ মারতে। সেটাকেই একটু এদিক-ওদিক করে এখন নিয়মিত স্কুপ মারছে আমাদের সূর্য।” 

[আরও পড়ুন: ৯২-এর পুনরাবৃত্তির স্বপ্নে বিভোর পাকিস্তান, ফাইনালে ভারতকেই চাইছেন পাক কোচ]

অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে মুম্বইয়ের পারসি জিমখানা ক্লাবে তিন-চার ঘণ্টা করে স্কুপ শট অনুশীলন করতেন সূর্যকুমার যাদব। সেই সময়ে নেটে অনেকেই সূর্যকুমার যাদবকে উদ্ভাবনী শট খেলতে দেখে অবাক হয়ে বলতেন, ”এটা কি ক্রিকেট হচ্ছে নাকি বেসবল?” ভারতের ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ সূর্যকুমার যাদবকে হাতের তালুর মতো চেনেন খোদাদাদ ইয়াজদেগারদি। পারসি জিমখানা ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট তিনি। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে তিনি বললেন, ”আমাদের সূর্য তো ক্রিকেট ম্যানুয়ালটাই বদলে দিয়েছে। অনেকেই সামনে মেরে রান করে। সূর্য তো উইকেটের পিছনে মেরেও এখন রান করেছে। উইকেটের সামনে যেমন ভি আছে, পিছনেও একটা ভি আছে। সেই ভি ফাইন লেগ থেকে থার্ড ম্যান পর্যন্ত বিস্তৃত।”

খোদাদাদ ইয়াজদেগারদি সূর্য কুমার যাদবের মেন্টরও বটে। অস্ট্রেলিয়ায় এখন মধ্যগগনে সূর্য খেলা করছে। উইকেটের চারপাশে তাঁর হরেকরকমের শট দেখে বিস্মিত হয়ে যাচ্ছেন প্রাক্তন ক্রিকেটাররা। রবি শাস্ত্রী পর্যন্ত প্রশ্ন করেন, ‘‘অফস্টাম্পের বাইরে প্রায় ষষ্ঠ বা সপ্তম স্টাম্পের বল পা ভাঁজ করে বসে বাঁ কানের ৫-৬ ইঞ্চি পাশ দিয়ে উইকেটকিপারের মাথার ওপর দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠাও কী করে?’’ সূর্য হাসেন। বলেন, ”আমার অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। এই সব শট খেলতে আমার কোনও অসুবিধে হয় না। আমি যখন রবার বল ক্রিকেট খেলতাম, তখন এই সব অদ্ভূত ধরনের শট মারা প্র্যাকটিস করতাম।”

সূর্যের কোচ বিনায়ক মানে হাসতে হাসতে বলছিলেন, ”সূর্য বলে ও আগে রবারের বলে খেলত। তখন থেকে এই ধরনের অদ্ভুত সব শট খেলত বলেই শুনেছি। মুম্বইয়ের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৯ খেলার সময়তেও ওকে উইকেটের পিছনে মারতে দেখেছি। এখন তো রীতিমতো স্কুপ শটে বিশেষজ্ঞ হয়ে গিয়েছে।” সূর্যের মেন্টর খোদাদাদ অবশ্য একদমই বিস্মিত নন। তিনি বলছেন, ”ভারতীয় ক্রিকেটের মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রি সূর্য কুমার যাদব।” ভারতের এই বিস্ফোরক ব্যাটসম্যানের প্রশংসা করেছেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ক্রিকেটার মন্টি পানেসার। ২০০৭-এর যুবরাজকে তিনি দেখতে পাচ্ছেন সূর্যের মধ্যে। বিরাট কোহলিও প্রশংসা না করে পারেননি। ঘরোয়া ক্রিকেটে সূর্যকুমার যাদবের নাম স্কাই। খোদাদাদ বলছেন, ”স্কাই ইজ লিমিটলেস।”

তাঁর প্রিয় সূর্য কুমার লম্বা রেসের ঘোড়া। পারসি জিমখানা ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলছেন, ”আমি সূর্যকুমারের বাবার মতো। আমাকে মাঝরাতেও ফোন করেছে ও। সূর্যর খারাপ সময়ে ওর পাশে দাঁড়িয়েছি। ওর মনে সাহস জুগিয়েছি। ওকে পরামর্শ দিয়ে বলেছি, তোমাকে আরও অনেক দূর যেতে হবে।”

স্কাই মানে আকাশ। সূর্যের আকাশও মেঘলা ছিল একসময়ে। একটা সময়ে জাতীয় দলে ডাকই পেতেন না তিনি। জাতীয় দল ঘোষণা হত। হতাশ সূর্য খোদাদাদকে ফোন করে বলতেন, ”দল ঘোষণা হয়েছে। এবারও আমি ডাক পাইনি।”

সেই সব দিনের প্রসঙ্গ উত্থাপ্পন করে সূর্যের মেন্টর বলছিলেন, ”আমি বলতাম বর্ষাকালে কখন বৃষ্টি হবে আমরা কেউই জানি না। কিন্তু বর্ষাতি বা ছাতা নিয়ে বেরলে বৃষ্টি হলে আমরা অন্তত ভিজব না। তাই যেটা আমাদের হাতে আছে সেটাই কর। তুমি রান করতে পার, সেটাই করে যাও। একদিন নিশ্চয় তোমার জন্য দরজা খুলবে। আর দরজা যদি না খোলে, তাহলে দরজা ভেঙে ঢুকবে।”

টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ পাওয়ার পরে সূর্যকুমার তাঁর মেন্টরকে বলেছিলেন, ”স্যর আমার স্বপ্নপূরণ হয়েছে।” তাঁকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে খোদাদাদ বলে উঠেছিলেন, ”তোমাকে আরও এগতে হবে। স্বপ্ন দেখা ছেড়ো না। ওয়ানডে, টেস্ট ম্যাচ খেলা এখনও বাকি।” সূর্য স্বপ্ন দেখছেন। স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।

রবি শাস্ত্রী ইতিমধ্যেই বলেছেন, টেস্ট ক্রিকেটে পাঁচ নম্বর পজিশন সূর্যকুমারের জায়গা। তাঁর কোচ বিনায়ক মানে মনে করেন টেস্ট ক্রিকেটে সুযোগ পাওয়ার আগে ছাত্রের তূণে যেন সব ধরনের অস্ত্র মজুত থাকে। বিনায়ক বলছিলেন, ”যে ধরনের শট সূর্য খেলে থাকে, তা টেস্ট ক্রিকেটে কেউ মারবে না। কিন্তু ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফিল্ডিংয়ে বিধিনিষেধ থাকার জন্যই এই ধরনের শট খেলতে হয় ব্যাটসম্যানকে। তবে এখন দিন বদলাচ্ছে। ঋষভ পন্থও রিভার্স সুইপ মারে। আমি বলি সব শটই শিখে রাখা ভাল। তার প্রয়োগ যেন ঠিকঠাক হয়।”

সূর্যকুমার স্কুপ মেরে বাউন্ডারিতে বল পাঠাচ্ছেন। ফিল্ডারের মাথার উপর দিয়ে বল পাঠাচ্ছেন গ্যালারিতে। দেখতে ভাল লাগলেও এই শট খেলা যে দারুণ ঝুঁকিপূর্ণ। বিপজ্জনকও বটে। ঠিকঠাক টাইমিং না হলে মুখে বা গলায় এসে বল লাগতে পারে। এক-আধবার হেলমেটেও বল আছড়ে পড়েছিল সূর্যকুমারের। বিনায়ক বলছিলেন, ”দেড়শো কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা বলের লাইন থেকে অনেক ব্যাটসম্যানই সরে যেতে চায়। বলের মারাত্মক গতি ভয়ের উদ্রেক করে। কিন্তু সূর্যের বুকের খাঁচাটা অনেক বড়। তাই ও নিজের শরীর বলের লাইনে নিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত বলের উপরে নজর রাখে। তার পরে শট মারে।” আর সেই অদ্ভুত শট দেখে আমরা চমকে উঠি। মনে মনে প্রশ্ন করি, কীভাবে পারে?

এবারের বিশ্বকাপে তাঁর উদ্ভাবনী শট থামাতে পারেননি প্রতিপক্ষের কোনও বোলারই। সেমিফাইনালের আগে ইংল্যান্ডের ক্যাপ্টেন জস বাটলার বলেছেন, সূর্যকে আউট করতে এক বল লাগবে। সূর্যও নিশ্চয় শুনেছেন তাঁর কথা। আজ তাঁর গাণ্ডীবের দিকে নজর গোটা দেশের। অ্যাডিলেডে কি সূর্যের তেজ দেখা যাবে? আর কয়েক ঘণ্টা বাদেই মিলবে উত্তর।

[আরও পড়ুন: ‘সূর্যের মধ্যে যুবিকে পেয়েছে ভারত, ফ্লিনটফকে মিস করছে ইংল্যান্ড’, বললেন মন্টি]

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement