অভিরূপ দাস: কেকে মৃত্যু-বিতর্কের রেশ আছড়ে পড়ল আমগেরস্তের নেমন্তন্ন বাড়িতেও। যেখানে ওই বিতর্কের জের টেনে বিনা প্ররোচনায় অপমান করা হল বিশিষ্ট গায়িকা স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্তকে (Swagatalakshmi Dasgupta)। অভিযোগ, এক মহিলা তাঁকে অনাবশ্যক রূঢ় ভাষায় বলেন, “হু ইজ স্বাগতালক্ষ্মী? বেরিয়ে যান এখান থেকে।”
প্রসঙ্গত কেকে (Singer KK) সম্পর্কে গায়ক রূপঙ্করের বিতর্কিত মন্তব্য, ‘হু ইজ কে ম্যান?’ ঘিরে এই মুহূর্তে বঙ্গসমাজ তোলপাড়। বাঙালি শিল্পীদের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও ট্রোলিং তুঙ্গে উঠেছে। রূপঙ্করের মন্তব্যের অনুকরণে তাঁর প্রতি এহেন কুবাক্য শুনে স্বাগতালক্ষ্মীর একটাই প্রতিক্রিয়া, “ওই মহিলা কি রূপঙ্করের ভিডিওটি দেখে প্রভাবিত হয়েছেন!” শিল্পী অবশ্য এই নিয়ে কোনও আইন আদালতের পথে যেতে চান না। তাঁর কথায়, “এগুলো তো মানুষের বুদ্ধি-বিবেচনার বিষয়। আশা করব, ওঁর শুভবুদ্ধির উদয় হবে।”
[আরও পড়ুন: কেকে’কে কটাক্ষ করে মিও আমোরের বিজ্ঞাপন খোয়াতে পারেন রূপঙ্কর!]
গত বুধবার স্বর্ণাশিস মুখোপাধ্যায়ের বউভাতে নিমন্ত্রিত ছিলেন শিল্পী। নাগেরবাজার এলাকায় সেই অনুষ্ঠানে শিল্পী যেতেই হুড়োহুড়ি পড়ে যায় আমন্ত্রিতদের মধ্যে। শিল্পীর ছাত্র-ছাত্রীরা জানাচ্ছেন, স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্তর মাপের শিল্পীর জন্য এমন ঘটনা অত্যন্ত স্বাভাবিক। সম্প্রতি টানা ১৬৬ দিন একের পর এক গান ইউটিউবে আপলোড করে বিশ্বরেকর্ড করেছেন তিনি। গীতবিতানের সবকটি গান গেয়ে নজির তৈরি করেছেন আগেই। রবীন্দ্রসংগীতে স্বাগতালক্ষ্মীর ‘দখল’ প্রশ্নাতীত। এমন শিল্পীকে নিয়ে মাতামাতি হবে তাতে আশ্চর্য কী? প্রশ্ন শিল্পীর ছাত্র-ছাত্রীদের। জানান, অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের অনেকেই শিল্পীর সঙ্গে ছবি তুলতে চান। হাত মেলাতে চান তাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বউভাতে উপস্থিত পাত্রীর মা।
অভিযোগ, বিশিষ্ট গায়িকার দিকে আঙুল তুলে চিৎকার করে তিনি বলেন, “হু ইজ স্বাগতালক্ষ্মী?” শিল্পীকে বেরিয়ে যেতে বলেন ওখান থেকে। অপমানিত শিল্পী দ্রুত অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ ছেড়ে বেরিয়ে যান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত গায়িকার ভক্তরা তৎক্ষণাৎ পুলিশে অভিযোগ করতে চেয়েছিলেন। সংগীতশিল্পী তাতে বাধা দেন। তাঁর কথায়, “ঘটনাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ওই মহিলা বয়সে যথেষ্ট প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ। ফলে এটাকে শিশুসুলভ ঘটনাও বলা যায় না।”
তবে কি রূপঙ্করের জন্যই অপমান হজম করতে হল তাঁকে? শিল্পীর কথায়, “হতে পারে। আমি রূপঙ্করের গায়কীর ভক্ত। ও ভাল গায়ক। কিন্তু কে কে সম্বন্ধে ও যেটা বলেছে সেটা আমি সমর্থন করছি না।” স্বাগতালক্ষ্মীর বক্তব্য, “রূপঙ্কর ওই আত্মঘাতী ভিডিওটা না করলেই পারত।” স্বাগতালক্ষ্মী একাই নন, এই আবহে যে সমস্ত বাঙালি গায়করা রূপঙ্করের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তাঁদেরও চূড়ান্ত অপমানের শিকার হতে হচ্ছে। বাংলা পক্ষ সংগঠনের শীর্ষ পরিষদ সদস্য ডা. অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, “কেকে’র মৃত্যুতে আমরা সকলে শোকাহত। কিন্তু তাঁর পাশে দাঁড়াতে এটা যেটা হচ্ছে সেটা হিন্দি আগ্রাসন। নিজে বাঙালি হয়ে অকারণে একজন বাঙালি গায়ককে অপমান করা চূড়ান্ত নিন্দনীয়।”