সৈকত মাইতি, তমলুক: রসগোল্লা? আছে। ক্ষীরকদম্ব, জলভরা তালশাঁস, সুগার ফ্রি সন্দেশ কিংবা রাজভোগ। সবই থরে থরে সাজানো। কিন্তু কিস্তিমাত করছে পাটিসাপটা। পুলি। দুধপুলি। গোকুল পিঠে। মিষ্টির দোকানের শোকেসে থরে থরে সাজানো। গ্রামীণ মেলার স্টলেও তাই। বিক্রিও হচ্ছে নিমেষে। গ্রামবাংলাতেও এ এক অন্য ট্রেন্ড! মাসি, পিসি, ঠাকুমার হাতের ছোঁয়ায় তৈরি আদর মাখা শীতের পিঠেপুলি (Pithe-puli) এখন হট কেক এবং বদলে যাওয়া অর্থনীতিও।
দুই মেদিনীপুর (Midnapore) জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। স্বভাবতই মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে গ্রামবাংলা জুড়ে ঘরে ঘরে এখনও পিঠে-পুলি উৎসবে মেতে ওঠেন সকলেই। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই যেন সেই ছবিটা একটু একটু করে বদলাতে শুরু করেছে শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও। চাহিদা বাড়তে থাকায় মিষ্টির দোকানগুলিতেও জায়গা করে নিয়েছে হরেক স্বাদের পিঠে। দেদার বিকোচ্ছে দুধপুলি, মালপোয়া, গোকুল পিঠে। কিস্তিমাত করছে চালগুড়ি, মালাই, বাটার দুধের ক্রিম, কাজু এবং নলেন গুড়, ক্ষীরের তৈরি পাটিসাপটা। সদর শহর তমলুকেই (Tomluk) বিভিন্ন মিষ্টির দোকানগুলিতে সাইজ অনুযায়ী দেদার বিকোচ্ছে ১৫ থেকে ২৫ টাকা পিস দরে। তবে এই পাটিসাপটার পাশাপাশি বাঙালির রসনা তৃপ্তিতে সংযোজন ঘটিয়েছে গুড় পিঠে অর্থাৎ মালপোয়া থেকে শুরু করে দুধে সেদ্ধ পুর পিঠেও। রয়েছে হরেক আইটেম। কিনতে লাইন গ্রামীণ মেলায়।
[আরও পড়ুন: ঘন কুয়াশায় পথকুকুরকে বাঁচাতে গিয়ে দুর্ঘটনা, মৃত্যু জলপাইগুড়ির পুলিশ আধিকারিকের]
তমলুকের মানিকতলায় এক মিষ্টান্ন দোকানের কারিগর মোহন মাইতি বলেন, “পাকা কলা, সুজি, চাল গুড়ির সঙ্গে নলেন গুড়, ক্রিম বাটার, ক্ষীর, দুধ, এলাচ, পানমৌরি মিশিয়ে গাওয়া ঘিয়ে ভাজা মালপোয়া সত্যিই জিভে জল এনে দেয়। প্রতি পিস দাম ১০ টাকা। দাম নাগালের মধ্যে থাকায় মকর সংক্রান্তির উৎসব ঘিরে দেদার বিকোচ্ছে সেগুলি।” তবে বছরের এই একটা দিনেই পিঠেপুলির কেনাকাটার হিড়িক বেশি বলে দাবি অধিকাংশ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীর।
যদিও মানিকতলা বাজারেই মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সুকুমার সামন্ত দাবি করে বলেন, “নলেন গুড়, নারকেল এবং ক্ষীরের পুরের তৈরি দুধে সেদ্ধ পিঠে অল্প সংখ্যক বিক্রি হলেও প্রায় পাঁচ হাজার পিস বিক্রি হয়েছে পাটিসাপটা, মালপোয়া। যেগুলি আবার শীতের মরশুম জুড়ে বিক্রি হচ্ছে মিষ্টির দোকান থেকেই।” এদিকে তমলুক, কোলাঘাট, কাঁথির পাশাপাশি জেলার শিল্প শহর হলদিয়া টাউনশিপের বহু পরিচিত মিষ্টি প্রস্তুতকারক সংস্থা ক্রেতা সাধারণের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন বাহারি পিঠের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। খোয়া ক্ষীর, গুড়, এলাচ, মালাই, দুধের সর, কাঁচা গোল্লার পুর মিশিয়ে বিশেষ পাটিসাপটা তৈরি করেছেন। ম্যাঙ্গোক্রাঞ্চ, আমসত্ত্ব মিশিয়ে ম্যাঙ্গো পাটিসাপটাও নজর কেড়েছে। গোকুল পিঠে, দুধে সেদ্ধ পিঠে তো আছেই।
[আরও পড়ুন: কুয়াশায় দিল্লি বিমানবন্দরে বিপর্যস্ত পরিষেবা, নতুন নির্দেশিকা জারি ডিজিসিএ-র]
অনেকে ঘরে পিঠে তৈরি না করলেও পিঠে কিনেই স্বাদ মিটিয়েছেন। মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী অভয়ানন্দ পাত্র জানান, “মূলত মিষ্টির ব্যবসা থাকলেও পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে প্রতি বছর আমরা রকমারি পিঠে প্রস্তুত করে থাকি। ক্রেতাদের খুশি করতে বিভিন্ন ধরনের পিঠে থাকে। ব্যবসার পাশাপাশি বাঙালি সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে এমন আয়োজন করা।”