সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রূপকথা, নাকি কঠোর কঠিন বাস্তব? কথা হচ্ছে আফগানিস্তান ক্রিকেটের (Afghanistan Cricket) ঐতিহাসিক সাফল্য নিয়ে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে (T20 World Cup 2024) নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া আর বাংলাদেশ, শিকারের তালিকা নেহাত হালকা নয়। এবার সেমিফাইনাল। সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা। জিতবে কিনা পরের কথা, কিন্তু যে পথ পার করে এসেছেন মহম্মদ নবিরা, তা কুর্নিশযোগ্য। আর সেখানে নীরব সাহায্য রয়েছে ভারতের।
২০১৭ সালে আইসিসি-র পূর্ণ সময়ের সদস্য হয় আফগানিস্তান। আর সেখান থেকে ২০২৪-এ বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল। সাম্প্রতিক সময়ের তালিবানি শাসনের কথা ভুলে গেলেও চলবে না। আর তাই হয়তো 'রূপকথা' শব্দটা পুরোপুরি খাটে না। লড়াই, ত্যাগ, একরোখা মানসিকতা সেগুলোকে বাদ দিলে তো চলবে না। আর সেখানে তাদের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় 'বন্ধুর' নাম ভারত। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে বিসিসিআই (BCCI)।
তার জন্য পিছিয়ে যেতে হবে অনেকটা আগে। ২০১৫ সালে গ্রেটার নয়ডার শহীদ বিজয় সিং পাঠক স্পোর্টস কমপ্লেক্সকে আফগানিস্তানের অস্থায়ী হোম গ্রাউন্ড হিসাবে ব্যবহার করার সুযোগ দেয় বিসিসিআই। ভারতের বিশ্ব মানের ক্রিকেট কোচিং ব্যবস্থাপনা নিঃসন্দেহে আফগান ক্রিকেটাররা তাঁদের দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ পান। ২০১৮ সালে দেরাদুনে হয়েছিল আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের সিরিজ। তিন ম্যাচের সেই টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে গ্রেটার নয়ডায় হোম সিরিজ খেলেছিলেন রশিদ খানরা। টেস্ট খেলা দেশ হিসেবে স্বীকৃতির পর ভারতেই টেস্ট খেলতে এসেছিল তারা। সেই ম্যাচে অজিঙ্ক রাহানের উদার আচরণ কে ভুলতে পারে! কাকতালীয় হলেও, বিশ্বকাপের পর জুলাই মাসে ফের গ্রেটার নয়ডায় 'ঘরের মাঠ'-এ সিরিজ খেলবে আফগানিস্তান। প্রতিপক্ষের নাম? বাংলাদেশ।
[আরও পড়ুন: বিশ্বকাপে ইতিহাস রশিদ খানদের, আফগান রাজপথে আবেগের বিস্ফোরণ]
শুধু কি মাঠের ব্যবস্থা করে দেওয়া? উল্লেখ করতে হয়, লালচাঁদ রাজপুত, মনোজ প্রভাকর, অজয় জাদেজাদের। ক্রিকেটের বিপুল অভিজ্ঞতা নিয়ে তাঁরা সমৃদ্ধ করেছেন আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের। জাদেজার ঘটনা তো একেবারেই সম্প্রতি। ২০২৩-র বিশ্বকাপে মেন্টর ছিলেন তিনি। এমনকী, অর্থের বদলে চেয়েছিলেন রশিদরা যেন মাঠে গিয়ে ভালো পারফর্ম করেন।
আইপিএলই বা বাদ যায় কেন? তালিবানি শাসনের পর নানা নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার কারণে বেশ কিছু বিদেশ সফরে যাওয়ার অনুমতি পায় না আফগানিস্তানের জাতীয় দল। খেলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আফগান ক্রিকেটারদের অনেকেই দেশ ছেড়ে আরব আমিরশাহিতে থাকেন। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার একমাত্র উপায় আইসিসি ফিউচার টুরস প্রোগ্রাম। আর বাকি থাকে আইপিএল-সহ নানা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। যা অনুপ্রাণিত করে দেশের নতুন প্রজন্মকে। রশিদ খান নিজেও বলেছিলেন, বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করে অনেক কিছু শিখেছেন তাঁরা।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে হারাতে চোটের ‘অভিনয়’! সেমিতে উঠেও প্রবল সমালোচনার মুখে আফগানিস্তান]
সেটারই নমুনা দেখল ক্রিকেটবিশ্ব। না, আফগানদের কৃতিত্ব কমছে না কোনওভাবেই। ইতিহাস গড়ার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব রশিদ খানদেরই। ভারত শুধু পাশে ছিল। বন্ধুর মতো, সতীর্থর মতো। চারদিকের অন্ধকারের মধ্যেও এগিয়ে আসে যার বিশ্বাসের হাত। বাকি লড়াইটা আফগান ক্রিকেটাররা নিজেরাই লড়ে নেবেন।