অর্ণব আইচ: ২০১২ সালের টেট পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিপুল টাকা নিয়েও চাকরি দিতে পারেননি অয়ন শীল। সেই কারণেই অয়নের এক এজেন্ট ও তাঁর ছেলে একসঙ্গে আত্মঘাতী হন। গ্রেপ্তারির পর নিয়োগ দুর্নীতির ‘গুরু’ অয়ন শীলের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলেন ‘শিষ্য’ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। আদালতে পেশ হওয়া এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের চার্জশিটে উঠে এসেছে এই তথ্য।
২০১৪ সালের সঙ্গে সঙ্গে ২০১২ সালের টেট পরীক্ষার জন্যও যে বিপুল টাকা তোলা হয়েছিল, চার্জশিটে তা উল্লেখ করেছে ইডি। ইডির দাবি, শান্তনু জেরায় জানান, অয়ন শীলের সংস্থা এবিএস ইনফোজোনের নামে ২০১৭-১৮ সালে অয়নেরই এজেন্ট ‘গুরুদা’ ও তাঁর ছেলে ২০১২ টেটের চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তোলেন। ‘গুরুদা’ ও তাঁর ছেলে সুইসাইড নোটে লেখেন, অয়ন শীল চাকরিও দেননি, ফেরত দেননি টাকাও। তার ফলে প্রার্থী ও তাঁদের পরিবারের লোকেরা তাঁদের বাড়ির সামনে টাকা চেয়ে বিক্ষোভ দেখেন। আত্মসম্মান রাখতেই তাঁরা আত্মঘাতী হন। পরে অয়নের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করে হুগলি জেলা পুলিশ।
[আরও পড়ুন: আগামী মরশুমের জন্য ‘সেকেন্ড স্ট্রাইকার’ পেয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল, ক্লেটনের সঙ্গে জুটি বাঁধছেন কে?]
শান্তনুর দাবি, ২০১২ ও ২০১৪ টেট পরীক্ষার আগে অয়ন শীল (Ayan Sil) বিপুল টাকা চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে কুন্তল ঘোষ ও আরও এক মাথা বেহালার সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়কে দেন। সন্তু গঙ্গোপাধ্যায় নামে ওই ব্যক্তি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ। কুন্তলের সঙ্গে সন্তুও অয়ন ও শান্তনুর ‘সেতু’ হিসাবে কাজ করতেন। অয়নের সংগ্রহ করা বিপুল টাকা কুন্তল ও সন্তুর মাধ্যমেও পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের কাছে যায়। আবার ইডির কাছে অয়নের দাবি, কুন্তলের নির্দেশেই এক হাজার চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে তোলা ৪৫ কোটির মধ্যে ২৬ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা তিনি বেহালার সন্তুকে দেন। ফের কুন্তলের কথায় নিয়োগ দুর্নীতির দ্বিতীয় দফায় ৬০ লক্ষ টাকা অয়ন সন্তুকে দেন। প্রার্থীদের তালিকায় এজেন্টদের ‘কোড নাম’ ব্যবহার করা হয়।
শান্তনু ও অয়নের দাবি, ২০১২ ও ২০১৪ সালের টেটের আগে কুন্তলের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী অরবিন্দ রায় বর্মন জানতেন যে, কীভাবে কুন্তল চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে বিপুল টাকা তুলছেন। এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে অরবিন্দকে একাধিকবার তলব করা হলেও তিনি ইডির হাজিরা এড়িয়ে গিয়েছেন। ইডির কাছে কুন্তলের পালটা দাবি, শান্তনু প্রভাবশালী ও তাঁর সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) ও মানিক ভট্টাচার্যর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে জেনেই তিনি শান্তনুর সাহায্য নেন। আবার শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁরই কেয়ারটেকার সুপ্রতিম ঘোষের নামে চারটি ফ্ল্যাট অয়ন শীলের সংস্থা থেকে কেনেন বলে দাবি ইডির। তদন্তে ইডির হাতে উঠে এসেছে ৩৪৬ জন প্রার্থীর তালিকা। সেটি পাওয়া যায় কুন্তল ঘোষের সঙ্গী বীরভূমের সুখেন রানা ও মুর্শিদাবাদের সুজল আনসারির বাড়ি থেকে। দেখা গিয়েছে, ১৭টি জেলার চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তোলা হয়েছে। এর মধ্যে বীরভূমের ১৪৮ প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা তোলা হয়।
[আরও পড়ুন: অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর কাছে ফেরা হল না, ভিড়ের চাপে ট্রেন থেকে পড়ে মৃত যুবক]
এছাড়াও মুর্শিদাবাদের ৬৭ জন, মালদহের ২৬ জন, কোচবিহারের ১৮ জন, বর্ধমানের ১৫ জন, এমনকী কলকাতার তিনজনের কাছ থেকেও নিয়োগ দুর্নীতির টাকা তোলা হয় বলে জানিয়েছে ইডি।