সুকুমার সরকার, ঢাকা: টানা দীর্ঘ লকডাউন (Lockdown)। মাঝে ইদের জন্য সামান্য ছাড় ছিল। রবিবার থেকে ফের এক সপ্তাহের লকডাউন জারি হয়েছে বাংলাদেশে (Bangladesh)। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষজনের ফের পেটে টান। কাজকর্ম না থাকায় দু’বেলা দু’মুঠো আহার জোগাড় করাই কঠিন হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই অবস্থায় তাঁদের জীবনে প্রায় ‘দেবদূত’ হয়ে এসেছে শিশু-কিশোরদের সংস্থা ‘শৈশব’। রোজ রান্না করা খাবার (Food) এই মানুষদের হাতে তুলে দিচ্ছে তারা। শরিয়তপুর উপজেলায় তাদের এই উদ্যোগে শামিল হতে কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসনও। চাল এবং অন্যান্য কাঁচা সামগ্রীর জোগান দেওয়া হচ্ছে। আর খাবার রান্নার দায়িত্ব ‘শৈশব’-এর স্বেচ্ছাসেবীদের। এরপর ছোট, বড় সদস্যদের হাত দিয়ে খাবার বিতরণ করানো হচ্ছে। তাতেই খিদের জ্বালা মেটাচ্ছেন কর্মহারা মানুষজন।
‘শৈশব’-এর সদস্যরা কেউ এখনও স্কুলে পড়ে, কেউ বা সবে স্কুল পেরিয়ে কলেজে প্রবেশ করেছে। সংগঠনের হাল তাদের হাতেই। একসময়ে সাহিত্যচর্চা, লেখালেখিতে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখলেও পরবর্তীতে একাধিক সামাজিক কার্যকলাপেও ঝাঁপিয়েছে তারা। এখন এটাই তাদের নিয়মিত কাজ। করোনা কালে সেই দায়িত্ব আরও বেড়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষজনের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছে ‘শৈশব’। কিন্তু শিশু, কিশোর বা সদ্য কৈশোর পেরনো সদস্যদের মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ। পর্যাপ্ত অর্থ নেই। কিন্তু নিজেদের সীমিত সামর্থ্য দিয়েই শ্রমজীবী মানুষদের বিনামূল্যে খাবার বিতরণ শুরু করে তারা। এরপর তাদের এই মহৎ উদ্যোগ দেখে জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান পাশে এসে দাঁড়ান। তাতে পরিষেবা আরও মসৃণ হয়ে ওঠে।
[আরও পড়ুন: বাড়ছে লকডাউন, বাংলাদেশে আরও পিছিয়ে গেল স্কুল-কলেজ খোলার দিনক্ষণ]
এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই এই কাজে ব্রতী হয়েছে ‘শৈশব’। শরিয়তপুর জেলা প্রশাসনের তরফে কিনে দেওয়া চাল ও অর্থের বিনিময়ে বাজার হচ্ছে। তা রান্নার পর খাবার প্যাক করে শ্রমজীবী মানুষের কাছে প্রতিদিন বিকেলে পৌঁছে দিচ্ছে ‘শৈশব’-এর শিশু,কিশোর স্বেচ্ছাসেবীরা। শরিয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাড়িতে খাবার রান্না করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনদীপ ঘরাইয়ের বক্তব্য, ”কিশোরদের উদ্যোগে শত শত মানুষের জন্য খাবার তৈরি করে তা বিতরণ করা হয়। এটা আনন্দ ও তৃপ্তি দেয়। রান্না করা খাবারের প্যাকেট হাতে পেয়ে কর্মহীন শ্রমজীবী মানুষজনের মুখে যখন হাসি ফুটে ওঠে, তখন আমরাও আপ্লুত হই।’’ছোটদের এই কাজে উৎসাহিত হয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলায় একই উদ্যোগ নিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তনভির আল নাসিফও। ফলে আরও ছড়িয়ে পড়ছে ‘শৈশব’-এর এই কর্মযজ্ঞ।