সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কেশসজ্জা শিল্পীর আত্মহত্যার চেষ্টাকে কেন্দ্র করে কার্যত দ্বিধাবিভক্ত টলিউড। ইতিমধ্যেই টলিউডের 'থ্রেট কালচার' নিয়ে সরব হয়েছে ডিরেক্টর্স গিল্ড। অভিযোগ, কর্মক্ষেত্রে হয়রানির জন্যই কেশসজ্জা শিল্পীর আত্মহত্যার চেষ্টা। এই অভিযোগ নস্যাৎ করে ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের পালটা প্রশ্ন, 'একটানা ২৭-২৯ ঘণ্টা কাজ কি অমানবিক নয়?' বুধবার সকালে ফেডারেশনের পাশে দাঁড়িয়ে নিন্দুকদের একহাত নিয়েছে হেয়ার স্টাইলিস্ট গিল্ড। এবার ডিরেক্টর্স গিল্ডের মতোই ফেডারেশনের সমালোচনায় মুখর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অফ টেলিভিশন প্রোডিউসার্স (WATP)।
টেলি প্রযোজকদের সংগঠনের বক্তব্য, কেশসজ্জা শিল্পীর আত্মহত্যার ঘটনাকে বিক্ষিপ্ত কোনও ঘটনা ভাবলে ভুল ভাবা হবে। সংগঠনের দাবি, শিল্পী আত্মহত্যার চেষ্টা করেননি বরং বলা ভালো করতে বাধ্য হয়েছেন। অভিযোগ হিসেবে লেখা হয়েছে, 'এর জন্য হেয়ার ড্রেসার গিল্ডের আইনবিরুদ্ধ দাদাগিরি এবং তাদের মাথার উপর বসে থাকা ফেডারেশনের থ্রেট কালচারের সামনে মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়েছেন।'
প্রযোজকদের সংগঠনের আরও অভিযোগ, শুধু এই এক কেশসজ্জা শিল্পী নন, অনেক কলাকুশলী, ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারীরা 'থ্রেট কালচার' ও দুর্নীতার শিকার। প্রতিমুহূর্তে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার 'থ্রেট'-এর মধ্যে থাকতে হয়। টেলিকাস্ট বন্ধ হলে বিপুল আর্থিক ক্ষতির ভয় থাকে। সাংবিধানিক অধিকারের কথাকে এখানে হাসিতে উড়িয়ে দেওয়া হয়।
এর পরই লেখা হয়, 'নিয়োগকারী প্রোডাকশন কোম্পানি হিসেবে আমাদের ভূমিকা অনেকটা কাঠের পুতুলের মত। কোন কাজ কাকে দিয়ে করানো যাবে, তিনি কতটা কাজ করার পর চাপ অনুভব করবেন, কোন কাজে হাত দিতে পারবেন বা কোন কাজে পারবেন না, কত টাকা পাবেন, কটা অবধি কাজ হবে, কোন গাড়িতে শুটিং অবধি পৌঁছাবেন, একদিন কেউ না এলে তার পরিবর্তে কে আসবেন, ইত্যাদিসব তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেন। একটা সৃজনশীল ক্ষেত্রে, নিয়োগকর্তা কাকে দিয়ে কাজ করাতে চান, কী নিয়ম মেনে তাঁর ছুটি হবে, কার পরিবর্তে কে কাজ করবেন, এইটুকু সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারও তাঁদের হাতে নেই। তাই স্বভাবতই কাজের জন্য যোগ্যতার থেকে অনেক বেশি জরুরি হয়ে দাঁড়ায় স্বজনপোষণ ও আর্থিক দুর্নীতি। যাঁরা সেই দলবাজিতে থাকেন, তাঁরা ফুলে ফেঁপে ওঠেন, আর বাকিরা মুখ বুজে মানতে মানতে আর অপমান সহ্য করতে করতে একটু একটু করে (কেশসজ্জা শিল্পীর নাম)দের রাস্তার এগিয়ে চলেন। আজ একজনের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে বলে হয়তো বিষয়টি খানিকটা হলেও সামনে আসছে। ভবিষ্যতে যদি এমন বাকি (কেশসজ্জা শিল্পীর নাম)রা চাপের কাছে মাথা নুইয়ে হার মেনে নিয়ে চরম পথটি বেছে নেন, আমরা তখনও নিজেদের ক্ষমা করতে পারব তো?'
এর সঙ্গেই প্রযোজকদের সংগঠনের বক্তব্য, 'চরম কিছু হওয়ার আগে তার একাধিক ইঙ্গিতকে এড়িয়ে যাওয়াটাই বোধহয় আমাদের অভ্যেস হয়ে গেছে। কিন্তু আর নয়। অন্ততঃ চলচ্চিত্র, ধারাবাহিক, বিজ্ঞাপন ও OTT প্রযোজনা সংস্থা হিসেবে আমাদের এবার সামনে এগিয়ে এসে সত্যি কথাটা বলতে হবে। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। থ্রেট কালচারে আমাদের আর চুপ করিয়ে রাখা যাবে না। আইন মেনে, সংবিধান মেনে কাজ হবে। মানষু শুধুমাত্র মেধার ভিত্তিতেই কাজ পাবেন। বাধা এলে জনস্বার্থ মামলা হবে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ - বিষয়টি একটু তলিয়ে দেখা হোক। যেকোন মুহূর্তে আলোচনায় যেতে আমরা রাজি। শুধু আমাদের নির্ভয়ে আইন মেনে কাজ করার পরিবেশ এনে দিন। আমরাও কথা দিচ্ছি, চলে যাওয়া বিনিয়োগ আমরা ফিরিয়ে আনবই। কোন অনুগ্রহ আমরা চাই না। যেভাবে সারা দেশে, বাকি রাজ্যে কাজ হয়, এখানেও সেভাবেই কাজ হোক। আপনাদের সমর্থন থাকলে টলিউডকে কেউ দুর্নীতির আঁতুড়ঘর বানাতে পারবে না। তাই আশা করছি আপনারা সবাই আমাদের পাশে থাকবেন।' বিবৃতির শেষে 'ধন্যবাদান্তে' হিসেবে টলিউডের একাধিক প্রযোজনা সংস্থার নাম লেখা হয়।