সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ক্যারিবিয়ান সাগরের পাড় ধরে কতগুলি ছোট ছোট দ্বীপ। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া। একটা সময় যার বাসিন্দাদের সিংহভাগের দিন গুজরান হত মূলত চিনি কলে বা অন্য কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে। অর্থনীতি পুরোপুরি আমেরিকা নির্ভর। পিছিয়ে পড়া, বঞ্চিত, অবদমিত কতগুলি দ্বীপ। একসময় যাঁদের প্রতিবাদের ভাষাই ছিল ক্রিকেট। সাদা চামড়ার দমন, পীড়নের জবাব খেলার মাঠেই দেওয়া শিখিয়েছিলেন স্যর ভিভ রিচার্ডস, কোর্টনি ওয়ালস, কার্টলি অ্যামব্রোজরা।
সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ (West Indies) ক্রিকেট আজ অবক্ষয়ের চরম সীমায়। ৪৮ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার ক্রিকেট বিশ্বকাপে (Cricket World Cup 2023) দেখা যাবে না ক্যারিবিয়ানদের। কিন্তু একসময় যারা বিশ্বক্রিকেটকে শাসন করেছে, তাদের এ হেন অবক্ষয়ের কারণ কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবক্ষয় রাতারাতি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে চলে আসা বেনিয়ম, আর্থিক অনটন আর মানসিকতার পরিবর্তন এর জন্য দায়ী।
[আরও পড়ুন: শুরুতেই সমস্যা, কলকাতা লিগে পিছোতে পারে ইস্টবেঙ্গলের প্রথম ম্যাচ!]
আসলে উইন্ডিজ ক্রিকেট (Windies Cricket) দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক অনটনে ভুগছে। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ মূলত আর্থিকভাবে আমেরিকার উপর নির্ভরশীল। আর আমেরিকায় ক্রিকেটের তেমন চল নেই, টাকা পয়সাও বিশেষ নেই। বরং অ্যাথলেটিক্স, বাস্কেটবলের মতো খেলায় আর্থিক স্বচ্ছলতা বেশি। তাই ক্রিকেট ছেড়ে ক্যারিবিয়ান ছেলেমেয়েরা এখন ঝুঁকছেন এই সব খেলার দিকে। যে কোনও দেশের ক্রিকেটীয় অবক্ষয়ের মূল কারণ ঘরোয়া ক্রিকেটের সঠিক পরিকাঠামো না থাকা। ব্যতিক্রম নয় উইন্ডিজ ক্রিকেটও। অর্থের অভাবে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের অধিকাংশ দেশেই ঘরোয়া ক্রিকেটের উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই।
[আরও পড়ুন: ২৭ বছর পর ডুরান্ড কাপে বিদেশি দল, এক গ্রুপে পড়তে পারে দুই প্রধান]
তবে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় শমন বোধ হয় বিশ্বের বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। নিজেদের দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে টাকা নেই। তাই সুনীল নারিন (Sunil Narin), আন্দ্রে রাসেলরা আর দেশীয় ক্রিকেটের তোয়াক্কা না করে চলে যান বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলতে। জাতীয় ক্রিকেটের প্রতি তাদের কোনওরকম দায়বদ্ধতা নেই। ক্রিস গেলের মতো ক্রিকেটার দেশের হয়ে না খেলে বিভিন্ন টি-টোয়েন্টি লিগে সময় দেন। পুরোটাই অর্থের কারণে। এইসব ক্রিকেটাররা বিভিন্ন লিগে দাপিয়ে খেললেও দেশের হয়ে খেলতে চান না। তারকাদের এই দায়বদ্ধতার অভাব ভোগাচ্ছে উইন্ডিজ ক্রিকেটকে। যে অল্পসংখ্যক তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার উঠে আসছেন তাঁরাও নারিন, রাসেলদের দেখাদেখি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলাটাকেই নিজেদের লক্ষ্য বানিয়ে নিচ্ছেন। ফলে মানসিকতা হয়ে যাচ্ছে টি-২০ ক্রিকেট খেলার, অনেক সময় সঠিকভাবে ক্রিকেটের ব্যকরণ শেখা হচ্ছে না তাঁদের।
মানসিকতার পরিবর্তনও ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ক্রিকেট সমর্থক যে নেই, সেটা বলা যাবে না। কিন্তু তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সত্যিই সেভাবে জায়গা করে নিতে পারেনি ক্রিকেট। এদের মধ্যে সেভাবে আবেগও কাজ করে না। কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ একটা দেশ নয়। অনেকগুলি ছোট দেশের সমাহার। মুশকিল হল, একটা দেশ থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি ক্রিকেটার নেওয়া যায় না। ফলে অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার সুযোগ পান না। তাছাড়া এক দেশের পতাকার নিচে না খেলায় এদের মধ্যে আবেগের বাঁধনও তৈরি হয় না।