স্টাফ রিপোর্টার: মণীশ হত্যাকাণ্ডের (Manish Shukla Murder Case) পরিকল্পনা ছকে ফেলা হয়েছিল তিন মাস আগেই। অপারেশন নিখুঁত করতে বার কয়েক এলাকার রেইকিও করে ফেলছিল শুট্যাররা। অনেক আগে থেকেই গোপনে ‘টার্গেট’-এর উপর চলছিল নজরদারি। শুধু অপেক্ষা ছিল সঠিক জায়গা ও সময়ের। সেটাই মিলে যায় রবিবার। অপারেশন এতটাই নিখুঁত ছকা হয়েছিল, যে গুলি চালিয়ে মোটরবাইকে করে কোনওরকম বাধা ছাড়াই চম্পট দিতে পেরেছিল শার্প শুট্যাররা। বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লা তদন্তে নেমে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য-প্রমাণ হাতে এসেছে গোয়েন্দাদের।
সিআইডি (CID) আধিকারিকদের অনুমান, এতবড় ঘটনা ঘটানো কোনও ছোটখাটো দুষ্কৃতীর কাজ নয়। অপারেশনের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করা থেকে শুট্যার জোগাড় করা, অপারেশন শেষ করে কিভাবে বেরিয়ে যেতে হবে, তার পরিকল্পনা করা, সব মিলিয়ে এর পিছনে কে বা কারা রয়েছে, সেটা জানার চেষ্টা চলছে। তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, বারাকপুর পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ পঞ্চাননতলার নির্মীয়মাণ একটি আবাসনের দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে ঘটনার কয়েকদিন আগে থেকে থাকতে শুরু করেছিল চার যুবক। স্থানীয়দের থেকে একথা জানার পর সেই ফ্ল্যাটেও হানা দেন গোয়েন্দারা। মঙ্গলবার রাতেই ফ্ল্যাটটি সিল করে দেওয়া হয়। এলাকাবাসীর দাবি, ওই আবাসন তৈরির সময় থেকেই সেখানে মিস্ত্রিরা থাকতেন। স্বভাবতই বাসিন্দারা ভেবেছিলেন ওই চার যুবকের দল রাজমিস্ত্রিদের সঙ্গেই আছেন। তবে যে চারজন ওই ফ্ল্যাটে ঘাঁটি গেড়েছিল তারা কখনওই একসঙ্গে বের হত না। করোনা আবহে তারা সব সময় মুখে মাস্ক পরে থাকত। ফলে তাদের মুখও পুরোপুরি কখনও দেখেননি স্থানীয়রা। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাতে সেখানে হানা দেয় গোয়েন্দাদের একটি দল। সে সময় ফ্ল্যাটের ভিতর একজন ছিল। পুলিশ অনেক ডাকাডাকির পরও দরজা না খোলায় দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন তদন্তকারীরা। আটক করা হয় ওই ব্যক্তিকে। ফ্ল্যাটটি সিল করার পর সেখানে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।
[আরও পড়ুন: পুজোর আগে ঊর্ধ্বমুখী রাজ্যের করোনা গ্রাফ, দৈনিক সংক্রমণে ফের শীর্ষে কলকাতা]
সিসিটিভি ফুটেজে খতিয়ে দেখে পুলিশ জানতে পেরেছে, বারাকপুর পেরিয়ে টাটা গেটের দিক থেকে দুষ্কৃতীরা মোটরবাইকে চেপে টিটাগড়ের দিকে এসে মণীশের উপর গুলি চালায়। এই ফ্ল্যাটে বসেই অপারেশনের আগে সব কিছু চূড়ান্ত করা হয়েছিল বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা। এখানে বসেই অপারেশনের গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পরই মনীশকে খতম করে দিয়ে পালিয়ে যায়। কার কথায় ওই ফ্ল্যাটে খুনিদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল? কে চূড়ান্ত ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেয়? কোন রুটে চম্পট দেয় আততায়ীরা? এমনই একাধিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা। ওই আবাসনের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। স্থানীয়দের থেকেও তথ্য জোগাড় করছেন গোয়েন্দারা। বুধবার অকুস্থল পরিদর্শনে আসেন ফরেন্সিক টিমের সদস্যরা। খুনের জায়গা থেকে বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করেন তাঁরা। খড়দহ পুরসভার সামনের সিসিটিভি ফুটেজ পুরসভার কাছ থেকে সংগ্রহ করেন তদন্তকারীরা। অন্যদিকে, সিআইডির ৫ জন তদন্তকারী অফিসারদের একটি দল ধৃত খুররমকে নিয়ে সারারাত তল্লাশি চালায় ক্যানিংয়ের বিভিন্ন এলাকায়। সূত্রের খবর, ক্যানিং ও বাসন্তী থেকে দুই ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিআইডি।