shono
Advertisement

Breaking News

‘লাইক বাড়াতে আসে, কেউ খিদের খবর নেয় না’, অকপট রানাঘাটের ‘লতাকণ্ঠী’রানু মণ্ডল

প্রচারের আলোকবৃত্তে থেকেও রাণু মণ্ডলের এখন দু’মুঠো খাবার জোটে না।
Posted: 11:32 AM May 10, 2022Updated: 02:08 PM May 11, 2022

(প্রথম পর্ব)

Advertisement

অভিরূপ দাস: ওঁর সব আছে। দুনিয়াজোড়া প্রচার আছে, বাড়িতে সর্বক্ষণ উৎসাহী অনুরাগীর ঢল আছে, লাইভ ভিডিও আছে, তা ভাইরাল হওয়া আছে, ইউটিউবে লক্ষ লক্ষ লাইকও আছে। নেই শুধু একটাই জিনিস। খাবার। হ্য়াঁ। চোখধাঁধানো প্রচারের আলোকবৃত্তে থেকেও ‘লতাকণ্ঠী’ রাণু মণ্ডলের এখন দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোটে না। সকাল থেকে বড়জোর এক কাপ লিকার চা, সঙ্গে ন্যাতানো দুটো মারি বিস্কুট। কোনও কোনও দিন মধ্যাহ্নভোজ বলতে পাঁচটাকার এক প্যাকেট চাউমিন সেদ্ধ। বেশিরভাগ রাতে পেটে কিল মেরে পড়ে থাকা। ভাঁড়ার যে ঠনঠন!

তিন বছর আগে রানাঘাট স্টেশনে বসা এক ভবঘুরে প্রৌঢ়ার গলায় লতা মঙ্গেশকরের হিট গানের ভিডিও তাঁকে কোটি কোটি মানুষের কাছে ভাইরাল করে দিয়েছিল। আক্ষরিক অর্থেই ‘সেনসেশন’ হয়ে যান রাণু মণ্ডল (Ranu Mondal)। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই গগনচুম্বী প্রচার তাঁকে ক্ষণিকের সেলিব্রিটি করে তুললেও আখেরে আরও নিঃস্ব করে দিয়েছে। দু’মুঠো অন্ন তো দেয়ইনি, উল্টে সম্মানের বেড়া খাড়া করেছে। কারণ? চাইলেও তিনি এখন আর স্টেশনে বাটি হাতে বসতে পারেন না। তিনি যে রাণু মণ্ডল! যাঁর কিনা বাড়ির বাইরে পা ফেলাই দায়। চারদিক থেকে অনুরোধের স্রোত, “ও দিদি গান শোনান না।”

[আরও পড়ুন: নিজে চিনি না খেয়েও সুগার ড্রিংকের বিজ্ঞাপনে কেন? তীব্র কটাক্ষের মুখে আলিয়া]

একেই বাড়িতে চুলো জ্বলে না। তার উপর এই ঠুনকো খ্যাতির বিড়ম্বনায় জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে পড়েছেন প্রৌঢ়া। তিতিবিরক্ত কণ্ঠে তারই প্রতিফলন, “গান শোনার শখ! সারাক্ষণ বাড়িতে ভিড়। কিন্তু কোনও জানোয়ার একটু খাবার আনে না! শুধু ভিডিও করে লাইক বাড়ানোর ধান্দা।” পরক্ষণে আকুল স্বরে ছুড়ে দেন অসহায় প্রশ্ন, “খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করে, গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোবে কী করে?”

ফেসবুক, ইউটিউবের দৌলতে আসমুদ্র হিমাচল যাঁকে চেনে, তিনি অনাহারে রয়েছেন, এর চেয়ে মর্মান্তিক কী হতে পারে? রাণু মণ্ডল এখন কেমন আছেন? কী করছেন? তা জানতে পা রাখা রানাঘাটের বেগোপাড়ায়। রানাঘাট স্টেশন থেকে মিনিট পঁয়তাল্লিশের হাঁটাপথ। টোটোয় গেলে কুড়ি মিনিট। বছর তিনেক আগের কথা। বেগোপাড়ার এই ‘ভিখিরি’ গান গেয়েছিলেন মুম্বইয়ের হিমেশ রেশমিয়ার সঙ্গে। সেই থেকেই ‘বিখ্যাত’। ঠিকানা বদলায়নি যদিও। সরু গলির গলি তস্য গলি দিয়ে ঢুকে এক প্রান্তের রঙচটা একটা বাড়ি। জায়গায় জায়গায় বেরিয়ে পরেছে ইটের কঙ্কাল। ভাঙা জানালার পাল্লাকে ঠেকনা দেওয়া হয়েছে থান ইট জড়ো করে। জোরে গাড়ি গেলেও বুঝি ধসে পড়বে চাল। এমনই লঝঝড়ে বাড়িতে বাস লতাকণ্ঠী রাণু মণ্ডলের।

বাথরুম নেই বাড়ির মধ্যে। জোড়াতালি দেওয়া মাথা গোঁজার ঠাঁই থেকে কিছুটা দূরে একটা চালহীন একচিলতে ঘর। পায়খানা প্রস্রাব করার জায়গা। জলের সংস্থান বলতে বাড়ির বাইরে একটা মরচে পড়া টিউবওয়েল। তাতাপোড়া গরমে সেখান থেকে দু’ঘটি জল খাবেন তারও জো নেই। গেট খুললেই মোবাইল নিয়ে ঢুকে পড়ে ইউটিউবাররা। রাণুর কথায়, “জানেন, ওদের জ্বালায় রোজ স্নান করতেও পারি না।” চব্বিশ ঘণ্টা গেটে তালা মেরে রাখেন। সবসময় যে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেন তাও নয়। ইউটিউবারদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে ঝাঁটা নিয়ে তেড়ে যান। থুতু দিয়ে দেন গায়ে। সব দেখেশুনে পড়শিরা ভাবেন, ‘মানসিক ভারসাম্য ঠিক নেই।’ আড়ালে-আবডালে তাঁকে পাগল বলেন।


গুটিকয়েক মানুষ তাঁর এহেন অবস্থা দেখে বলছেন, খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে কাল হল তার গরু কিনে। পলেস্তারা খসা দেওয়ালে ঝুলছে কাঠের যিশুখ্রিস্ট। সেদিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করেন রাণু। বলেন, “উনিই মালিক। আমাকে বিশ্বের কাছে চিনিয়েছেন উনি। ওঁর ভরসাতেই রয়েছি।” একশোটা কথা বললে, নিরানব্বইটাই অভিযোগ। সে তালিকায় রয়েছে বাণিজ্যনগরীও। যে শহরে গান গেয়ে ‘ফেমাস’ হয়েছেন রাতারাতি। “মুম্বই থেকে কী পেয়েছেন?” বাড়ির ছন্নছাড়া হাল দেখিয়ে রাণুর চিৎকার, “দেখে বুঝতে পারছেন না কী পেয়েছি? যারা মুম্বই নিয়ে গিয়েছিল তাদের গিয়ে জিজ্ঞেস করুন।” তাঁর রেডিও নেই। টিভি, স্মার্ট ফোন তো কোন ছার। কখনও সখনও বন্ধ ঘরের মধ্যে থেকে ভেসে আসে, “তেরি মেরি.. তেরি মেরি…।” তবে সে কার গলা? পাড়ার গুটিকয় মানুষ শুনেছেন রাতে। 

[আরও পড়ুন: কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে ব্রাত্য শ্রীলেখার ছবি, লবিবাজির অভিযোগে সরব অভিনেত্রী ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement