২৪ ডিসেম্বর সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে ‘টনিক’ (Tonic Film)। নতুন ছবি মুক্তির আগে প্রাণখোলা আড্ডায় দেব (Dev)। সঙ্গী শম্পালী মৌলিক।
সম্প্রতি দেখলাম উলুবেড়িয়ার এগারো বছরের ঝিলিকের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। শয্যাশায়ী বাবাকে নিয়ে সাহায্যের আশায় ঝিলিক ভ্যান চালাচ্ছে। কীভাবে পাশে দাঁড়াতে চান?
ঝিলিকের বাবার চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক ভাবে টাকাপয়সার দরকার, যতটা পারব দেওয়ার চেষ্টা করব। এই খবর প্রকাশ্যে আসার পর, দিল্লিতে যে আমার সেক্রেটারি, সে বলল, দাদা আমিও পাঁচ হাজার টাকা দেব। ওইটুকু ঝিলিকের জন্য অনেক। এইভাবেই আমাকে দেখে হয়তো চার-পাঁচজন এগিয়ে আসবে। এটা বলব যে, এই বয়সটা ঝিলিকের স্কুলে যাওয়ার সময়। সেইখানে মেয়েটি প্রত্যেকদিন ভ্যান নিয়ে অর্থ জোগাড় করছে বাবার জন্য। সত্যিই খুব দুঃখজনক। আমি চাই না কারও জীবনে এমন ঘটুক। অসুখ তো কারও হাতে নেই, যতটুকু পারব আমাদের সকলের চেষ্টা করা উচিত।
এই অতিমারীতে আপনি বিভিন্নভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। একটা ছবি হিট করার আনন্দ, না কি মানুষের পাশে ভরসা হয়ে ওঠার আনন্দ– এখন আপনাকে কোনটা বেশি তৃপ্তি দেয়?
এটা তো অস্বীকার করতে পারব না যে, ছবি হিট না করলে কোনও মানুষকে সাহায্যও করতে পারব না। দিনের শেষে অর্থের একটা বিরাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে জীবনে। আজকে যতই ঝিলিকের পাশে দাঁড়াব বলে ইমোশনাল সাপোর্ট দিই, সেটা কতটা কাজ করবে জানি না। কিন্তু কিছু টাকা যদি আমি পাঠাই, ওষুধ কিনতে বা প্রাথমিক চিকিৎসায় সেটা কাজে আসবে। এই টাকাটা আসতে গেলেও আমার ছবি হিট হওয়া প্রয়োজন। কাজেই আমাকে দু’টোই তৃপ্তি দেয়। কিন্তু আমার তো বছরে দু’টো বা তিনটে ছবি হয়। ওই তৃপ্তি ফ্রাইডে-তেই পেয়ে যাই। যারা কষ্টের মধ্যে আছে বা অতিমারীতে বিপর্যস্ত, তাদের পাশে দাঁড়ানোর আনন্দ কোনও হিট-ফ্লপের সঙ্গে তুলনায় আসে না।
মানুষের পাশে আমি বরাবরই আছি যতটা পেরেছি, শুধু করোনার (Coronavirus) সময় বলে নয়। আজকে হয়তো প্যানডেমিকে এই বিষয়টা বেশি প্রকাশ্যে এসেছে। এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ, সকলেই তাদের অভিজ্ঞতা সেখানে শেয়ার করেছে, তার জন্যই লোকে জানতে পেরেছে। আমি পিছনে থেকে সাহায্য করতেই ভালবাসি। ভগবান আমাকে লাইমলাইট, পরিচিতি অনেক কিছু দিয়েছেন। আমি কিন্তু রাজনীতিতেও খুব বেশি সামনে আসতে চাই না। এ সব কাজেও পিছনেই ভাল থাকি। আমি শুধু সামনে আসতে চাই আমার ছবির জন্য। আমি চাই মানুষ আমাকে অ্যাজ আ হিরো-ই চিনুক। সারাজীবন যেন সেরা আর্টিস্ট, ভাল অভিনেতা হিসাবেই মনে রাখে।
[আরও পড়ুন: ‘মন্দার’ দেবাশিসের বড় ব্রেক, এবার নুসরত ও যশের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করবেন অভিনেতা]
প্যানডেমিকের পর আপনার ‘গোলন্দাজ’ এল। এসেই আক্ষরিক অর্থে হলে দর্শক ফিরিয়েছে। নতুন ছবি ‘টনিক’ কি সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবে?
একটু আগের একটা ঘটনা বলি, কিছু লোক ‘টনিক’ দেখতে চেয়েছিলেন, তাঁরা ছবির সঙ্গে বাস্তব জীবনের মিল খুঁজে পেয়েছিলেন। ছবি দেখে তাঁদের এত ভাল লাগে যে, ‘টনিক’ হিন্দিতে করার জন্য রাইটস চেয়ে অফার দেন। এর চেয়ে বড় আনন্দ ছবি মুক্তির আগে আর কী হতে পারে! ডিস্ট্রিবিউটরও ছবি দেখে অসম্ভব খুশি। বলছেন, ‘এটা তোমার জীবনের সেরা ছবি। আমি একই সঙ্গে হাসছি এবং কাঁদছি।’
বড়দিনে হ্যাপি মুডের ছবি হতে চলেছে ‘টনিক’ ট্রেলার দেখে এবং গান শুনে মনে হচ্ছে! তবে সেই ‘সাঁঝবাতি’-র ‘চাঁদু’-র ছোঁয়া কি রয়েছে আপনার চরিত্রে?
একদমই না। কারণ ‘চাঁদু’ চরিত্রটা ছিল বাড়ির পরিচারকের। তার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। সে কিন্তু একটা লেভেলের পর গিয়ে ছানাদাদুর সঙ্গে খুনসুটি করতে পারবে না। কিন্তু ‘টনিক’-এর চরিত্রটা একদম আলাদা। এ হচ্ছে স্বপ্ন বিক্রি করে। ও ইন্সপিরেশনের টনিক। সবাইকে হাসায়, বকে দেয়, ঝগড়া করে। রিভার র্যাফটিং, প্যারাগ্লাইডিং বা মাউন্টেন ক্লাইম্বিংয়ে অনুপ্রাণিত করে। এটা ‘চাঁদু’ নয়, এটা দেব। যে পজিটিভিটি ছড়িয়ে দিয়ে থাকে। কোনও সময় আমাকে দেখবে না ভেঙে পড়েছি। ভেঙে পড়ার মধ্যেও আলাদা লড়াই থাকে। সেটাই ‘টনিক’। সে হচ্ছে জীবনের মুশকিল আসান (হাসি)। সবাই ‘টনিক’-এর সঙ্গে রিলেট করবে।
সত্যি সত্যিই পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে রিভার র্যাফটিং করলেন?
পরিচালক অভিজিৎ (সেন) প্রথম থেকেই ক্লিয়ার ছিল, যে এই চরিত্রটা করবে তাকে সমস্ত স্টান্ট করতে হবে। কারণ বাংলা ছবিতে খুব বেশি ‘সিজি’ করলে বোঝা যায়। যখন শুনলাম পরাণদা করছেন, তখনই জিজ্ঞেস করেছিলাম, যে উনি জানেন তো এগুলো করতে হবে? পরে দেখি পরাণদা বলছেন, ‘আমি তো এগুলো করব না বলেছি।’ তখন অভিজিৎ আমাকে বলে, ম্যানেজ করতে (হাসি)। তারপর পরাণদাকে রীতিমতো মোটিভেট করে, মজা করে, লেগে থেকে করেছি। এবং তুমি যেটা বলছ, সেটা পুরোটাই পরাণদার হার্ড ওয়ার্ক। সব স্টান্ট নিজে করেছেন, এই বিরাশি বছর বয়সে।
কোথাও কি সেই ‘গল্প হলেও সত্যি’র কথা মনে পড়বে?
এইটা যে কোনও রিলেটেব্ল স্টোরির সঙ্গে রিলেট করতে পারবে। আমার বাবা যখন মুম্বই থেকে কলকাতায় শিফট করল, বাবা তো শেফ ছিল, নিজের ক্যাটরিং ছিল। এখানে এসে কর্মহীন হয়ে পড়ল। বাড়িতে বসে বয়স বাড়ছিল শুধু। তখন আমি ভাবি, বাবার জন্য একটা রেস্তরাঁ খুলব। রান্নায় ন্যাক তার, মানুষকে খাওয়াতে ভালবাসে। এই রেস্তরাঁ বাবাকে উপহার দিয়েছিলাম। প্যানডেমিকে বন্ধ থাকার পর রি-ওপেন করলাম (চিপ চার্লি) নতুনভাবে। আমি ‘গল্প হলেও সত্যি’ দেখিনি। কিন্তু বাবাকে খুশি দেখতে চেয়েছিলাম। এটাই ‘টনিক’।
দেব-এর ‘টনিক’ কে?
আমার বিভিন্নভাবে ‘টনিক’ চলে। সকালে কাজে যাওয়ার আগে বাবা-মায়ের হাসিমুখ দেখতে ভাল লাগে। দ্যাটস মাই টনিক টু স্টার্ট মাই ডে। আবার শুটিংয়ে ভাল শট দিলে হাততালি পেলে ওটাই আমার টনিক। ছবি রিলিজের পর হাউসফুল বোর্ড দেখলে, তার চেয়ে বড় টনিক আর কী! বাড়ি ফিরে হ্যাপি আর লাকি আমার দুই পোষ্য, ওরাই আমার দিনশেষের টনিক। আমি ফিরলে ওরা রাতে খায়।
২৪ ডিসেম্বর ‘টনিক’-এর সঙ্গে ‘এইট্টি থ্রি’ রিলিজ। বড় হিন্দি ছবি। চিন্তা আছে?
হোক না, তাতে কী? আমি তো সব সময়ই লড়াই করেছি। ‘ধুম’ এর সঙ্গে ‘আমাজন অভিযান’ এসেছিল। পুজোয় তো আট-দশটা ছবি থাকেই (হাসি)।