কুণাল ঘোষ: দ্রৌপদী মুর্মু নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ভুলটা কী বলেছেন? কেনই বা তাঁর বক্তব্যকে বিকৃত করে সস্তা রাজনৈতিক প্রচারের চেষ্টা করছে কংগ্রেস, সিপিএম? তৃণমূলনেত্রী বলেছেন, “রাষ্ট্রপতি পদে আদিবাসী মহিলাকে প্রার্থী করবে বিজেপি, এটা আগে বললে সর্বসম্মত করা যায় কি না ভাবা যেত। রাজনাথ সিংজি যখন ফোন করেছিলেন, তখনও নাম বলেননি। এখন আমাদের অ-বিজেপি বিরোধীদের বিকল্প প্রার্থী যশবন্ত সিনহা।”
সিপিএম, কংগ্রেস আর কিছু তারকাটা বিশেষজ্ঞ এই কথাকে বিকৃত করে বাজারে নেমেছেন। এমন প্রচার হচ্ছে যেন নেত্রী বিজেপি (BJP) প্রার্থীর প্রতি দুর্বল বা বিজেপির প্রতি নরম ইত্যাদি। অথচ বাস্তবটা উলটো। দ্রৌপদী মুর্মুকে প্রার্থী করে বিজেপি যে আদিবাসী ও মহিলা আবেগের তাস খেলতে যাচ্ছে, তৃণমূলনেত্রী সেখানে সপাটে একটি কৌশলী বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি কোথাও বলেননি যে, তিনি বা তৃণমূল এখন দ্রৌপদীকে সমর্থন করবেন। তাঁর প্রার্থী যশবন্ত সিনহাই। কিন্তু বিজেপি যেভাবে মহিলা আদিবাসী প্রার্থীকে সামনে রেখে প্রচার করছে, তার উত্তরে মমতা দু’টি রাজনৈতিক বার্তা দিলেন–
এক, ব্যক্তিগতভাবে রাষ্ট্রপতি পদে মহিলা আদিবাসী প্রার্থীতে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। লড়াই বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে। দেশের বিপুল সংখ্যক আদিবাসী ও মহিলা নাগরিকদের কাছে বিজেপির একতরফা প্রচারের মোকাবিলায় এটি তাঁর সঠিক বার্তা।
[আরও পড়ুন: দেশে একদিনে করোনার কবলে ১৬ হাজারের বেশি মানুষ, চিন্তা বাড়াচ্ছে পজিটিভিটি রেট]
দুই, দ্রৌপদী মুর্মুকে যে সর্বসম্মত প্রার্থী করা গেল না, তার পুরো দায় বিজেপির। বিজেপি কেন আগে বিরোধী দলগুলির কাছেও এই নাম পেশ করেনি। তারা ফোন করতে পারছে, আর নাম বলতে পারল না? অর্থাৎ, এই আদিবাসী মহিলা প্রার্থীর ক্ষেত্রে উদার হয়ে সর্বসম্মতির কথা ভাবতেও পারত বিরোধীরা। বিজেপির জন্যেই সেটা হল না। তৃণমূলনেত্রীর এই বিবৃতি গভীর রাজনৈতিক তাৎপর্যপূর্ণ।
আদিবাসীদের প্রতি যখন বিজেপি বলবে, আমরা দ্রৌপদীকে প্রার্থী করেছি, তখন বিরোধীরা বলবে, তোমরা আগে নামটি বলোনি কেন? কেন সর্বসম্মতির চেষ্টা করোনি? এখন আমাদের আলাদা প্রার্থী মিলিত সিদ্ধান্তে। তাই সেভাবেই লড়াই হবে।
[আরও পড়ুন: বিহারে ফের বজ্রপাতের বলি ১০, চলতি সপ্তাহেই প্রাণ হারালেন ২৬ জন]
তৃণমূলনেত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে বিজেপির প্রতি বা বিজেপি প্রার্থীর প্রতি দুর্বলতার কোনও সম্পর্ক নেই। এই বিবৃতি বিজেপির প্রচারে ব্যারিকেড তৈরির বিবৃতি। বাম, কংগ্রেস বুঝে বা না-বুঝে অন্ধ তৃণমূল বিরোধিতা করতে গিয়েই বিকৃত প্রচার করছে। জাতীয় রাজনীতিতে ক্রমশ পিছিয়ে পড়েও এদের শিক্ষা হয় না। বিজেপিরও কেউ কেউ দেখলাম বিবৃতি দিলেন যে তৃণমূল নাকি চাপে পড়ে নরম।
তোমার মুন্ডু! আদিবাসী মহিলা প্রার্থী নিয়ে বিজেপির প্রচার আটকে দিয়েছেন মমতা, তাতেই তাদের শ্বাসকষ্ট। দ্রৌপদীকেই যখন প্রার্থী করল বিজেপি, ২০১৭ সালে করেনি কেন? তখন তো সাংসদ হিসাবে আমি লিখিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দ্রৌপদীর নাম প্রস্তাব করেছিলাম। সেই চিঠি তখন থেকেই মিডিয়ায় প্রকাশিত। যদি মহিলা প্রার্থী চায় বিজেপি, ২০১৭-তেই কেন মীরা কুমারকে তারা সমর্থন করেনি? আসলে আদিবাসী মহিলা দ্রৌপদীকে সম্মান দেওয়া ওদের মূল উদ্দেশ্য নয়, বিজেপির গোষ্ঠীবিন্যাসে বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে রাষ্ট্রপতি হতে না দেওয়ার দাবার চালই আসল কথা। এখন মুখে আদিবাসী মহিলার কথা। ঠিক বলেছেন তৃণমূলনেত্রী, বিজেপি আগে বলেনি কেন?