সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: কারও বাবা চাষ করেন। দিনমজুরের মেয়ে কেউ। নুন আনতে পান্তা ফুরনো সংসারে অভাবই নিত্যসঙ্গী। আর্থিক প্রতিকূলতাকে তুচ্ছ প্রমাণ করে উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকায় স্থান পেলেন বেশ কয়েকজন। ছেলেমেয়ের সাফল্যে খুশি অভিভাবকেরা।
বাঁকুড়ার কৃতি সন্তান সোমনাথ পাল, ৪৯৪ নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকায় পঞ্চম স্থান দখল করেছে। বাবা শয্যাশায়ী। অসুস্থ বাবার চিকিৎসার খরচ জোগাতে হাঁস, মুরগি প্রতিপালন করতেন সোমনাথ। বিড়ি বাঁধার কাজেও মাকে সাহায্য করতেন তিনি। ব্যবসায় উপার্জিত টাকা সঞ্চয় করে অনলাইন ক্লাস করার জন্য স্মার্টফোন কিনেছিলেন। লড়াকু ছেলের অভাবনীয় ফলাফলে খুশি সকলের। আর্থিক সংকটকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভূগোলের শিক্ষক হতে চান তিনি।
[আরও পড়ুন: নাড্ডার সতর্কতাতেও হল না কাজ, বঙ্গভঙ্গের দাবিতে অনড় কার্শিয়াংয়ের বিজেপি বিধায়ক]
ইচ্ছা থাকলে যেকোনও বাধাই পেরনো যে সম্ভব, তা প্রমাণ করেছেন আলিপুরদুয়ারের শালকুমারের বাসিন্দা বর্ষা পারভিন। দরমার ঘরে কোনওরকমে দিনযাপন করতেন শীল বাড়ি হাট উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। দিনমজুর বাবার সন্তান বর্ষা বরাবর পড়াশোনায় ভাল। তবে এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যে উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকায় জায়গা করে নেবে সে, তা ভাবতেও পারেননি বর্ষা। ষষ্ঠ স্থান দখল করেছেন তিনি। মেয়ের সাফল্যে অত্যন্ত খুশি মা-বাবা। আনন্দেও চোখের জলে ভাসছেন তাঁরা।
শিলিগুড়ির বুদ্ধভারতী হাইস্কুলের ছাত্রী রীতা হালদার। বাবা বিনয় হালদার মাছ বিক্রি করেন। মা একাধিক বাড়ির পরিচারিকা। দাদা প্লাইউড কারখানার কর্মী। মা অসুস্থ হয়ে পড়লে লোকের বাড়িতে গিয়ে বাসনও মাজতে হয়েছে রীতাকে। সেই রীতাই এবার উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকায় সপ্তম স্থানাধিকারীদের মধ্যে একজন।
বর্ধমান বিদ্যার্থী ভবন গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা আদকের পরিস্থিতিও প্রায় একইরকম। প্রিয়াঙ্কার বাবা চাষবাস করেন। সামান্য উপার্জন হলেও, মেয়ের পড়াশোনায় কোনও ফাঁক রাখতেন না প্রিয়াঙ্কার বাবা। সমস্ত বাধা অতিক্রম করে উচ্চমাধ্যমিকে অষ্টম স্থান দখল করেছেন তিনি। আগামী দিনে শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন প্রিয়াঙ্কা।
মন্তেশ্বরের শুশুনিয়ার ভোজপুরের বাসিন্দা নেহা নাসরিনও অভাবকে তুচ্ছ বলে প্রমাণ করেছেন। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের কন্যা উচ্চমাধ্যমিকে ৪৮৯ নম্বর পেয়েছেন। মেধাতালিকায় দশম স্থান দখল করেছেন তিনি। আপাতত আগামী দিনে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই ব্রতী পড়ুয়ারা।