অভিরূপ দাস: বাংলা আজ যা ভাবে গোটা দেশ তা ভাবে আগামিকাল। ফের একবার তা প্রমাণিত হল স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) শনিবার হেলথ আই কার্ড বা স্বাস্থ্য পরিচয়পত্রের ঘোষণা করেছেন। এই কার্ড কাজ করবে একটি ইউনিক আইডি দিয়ে। সম্পূর্ণ বিষয়টি এক বাঙালি চিকিৎসকের ‘ব্রেন চাইল্ড’। তিন বছর আগে তিনিই দেশের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডার (JP Nadda) কাছে তুলে দিয়েছিলেন এর ইউনিক আইডির “কনসেপ্ট ওয়ার্ক।” ডা. ইন্দ্রনীল খান এখন ঢাকুরিয়া আমরির চিকিৎসক। বাটানগরে কেটেছে ছোটবেলা। সাউথ পয়েন্টের প্রাক্তনী এমবিবিএস পাশ করেছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে। তারপর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমডি।
১৩৫ কোটি ভারতীয়র কাছে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া কোনও ছোটখাটো চ্যালেঞ্জ নয়। দেশের ২১.৯ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন। চিকিৎসা পরিষেবায় তাঁদের পক্ষে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করা অসম্ভব। ডা. ইন্দ্রনীল খান জানিয়েছেন, দেখা গিয়েছে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিপুল খরচের একটা বড় কারণ ডায়গনস্টিক টেস্ট। দেখা গিয়েছে, কোনও রোগীর চিকিৎসা বাবদ বিল ১০ লক্ষ হলে ৭ লক্ষ টাকা খরচ হয় একাধিক টেস্ট করতে গিয়ে। একাধিক টেস্ট করার কারণও ভিন্ন। এক রাজ্য থেকে কোনও রোগী যখন অন্য রাজ্যে চিকিৎসা করাতে যান, টেস্ট রিপোর্ট হাতে থাকলেও সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল তাঁকে পুনরায় সেই টেস্ট করতে বলে। “বার বার টেস্ট করাতে খরচ অনেক। দিস্তা দিস্তা কাগজ জমতে থাকে। ৮/১০ বছর চিকিৎসা চলছে এমন অনেক ক্যানসার রোগীকে দেখেছি টেস্টের কাগজ রাখার জন্যেই আলাদা ঘর করেছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে একটা ডেটাবেসে যদি কাজ করা যায় তাহলে বারবার টেস্ট করতে হয় না।” জানিয়েছেন ডা. খান। এরপরই শুরু গবেষণা।
[আরও পড়ুন: পুজোর বাজেট ছেঁটে করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনল এই ক্লাব]
ডা. ইন্দ্রনীল খানের রিসার্চ ওয়ার্কে সমস্ত হাসপাতাল এবং ল্যাবরেটরিকে একটি ছাতার তলায় আনার কথা বলা হয়। সে ছাতার নাম ন্যাশনাল হেলথ গ্রিড। সবার প্রথম প্রতিটি হাসপাতাল নার্সিংহোম এই ন্যাশনাল হেলথ গ্রিডের অ্যাক্রিডিয়েশন পাওয়ার জন্য আবেদন করবে। খতিয়ে দেখেই তারপর মিলবে শংসাপত্র। এরপর অ্যাক্রিডেটেড স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রত্যেকটি মানুষের জন্য একটি ইউনিক হেলথ আইডির বন্দোবস্ত করবেন। সেই ইউনিক আইডি টাইপ করলেই একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ফুটে উঠবে। শেষ কবে কি টেস্ট করেছিলেন, তার রিপোর্ট সমস্ত তথ্য জানা যাবে একটি টাচে। জাতীয় স্তরের এই ডেটাবেস দেশের যেকোনও প্রান্তে বসে দেখা যাবে। এতে যেমন কাগজ হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না, তেমনই বারবার ভিন রাজ্যে গিয়ে টেস্ট করাতে হবে না। ২০১৭-এর ২১ জুলাই নির্মাণ ভবনে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডার কাছে সম্পূর্ণ রিসার্চ ওয়ার্ক জমা দিয়েছিলেন বঙ্গতনয়। তাঁর রিসার্চ পেপারে আস্থা রেখে প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন এমনটাই হবে।
প্রতিটি ভারতবাসী আগামী দিনে একটি ইউনিক হেলথ আই কার্ড বা স্বাস্থ্য পরিচয়পত্র পাবেন। যা হবে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর। সেখানে ওই ব্যক্তির যাবতীয় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নথি রাখা থাকবে। যা থেকে জানা যাবে তাঁর শারীরিক অবস্থা। এই কার্ড তাঁরা ব্যবহার করতে পারবেন চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে। ব্যবহার করতে পারবেন ওষুধ কেনার সময়। ডা. ইন্দ্রনীল খানের কথায়, “আমি আপ্লুত প্রধানমন্ত্রী আমার পরিকল্পনায় সিলমোহর দিয়েছেন। ওঁর হাত ধরে দেশ আগামী দিনে আরও এগিয়ে যাবে। আমার গবেষণা যদি সাধারণের উপকারে আসে তাহলেই পরিশ্রম সার্থক।”
[আরও পড়ুন: ভারতে করোনা ভ্যাকসিন তৈরি হতে এখনও এক বছর, বলছেন WHO’র প্রধান গবেষক]
The post দীর্ঘ পরিশ্রম সার্থক, প্রধানমন্ত্রীর হেলথ আই-কার্ড প্রকল্পের নেপথ্যে মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তনী appeared first on Sangbad Pratidin.