স্টাফ রিপোর্টার: শ্যামনগরের বাড়িতে বসে দীপের মা তখনও অপেক্ষায়, ছেলে ফিরবে। ২১ বছরের দীপ কালীপুজোর দু’দিন পর বাড়ি ফিরল ঠিকই, কিন্তু শবদেহ হয়ে। তবে তাঁর অঙ্গে দীপাবলির আলো জ্বলল আরও পাঁচজনের জীবনে। সোমবার দুপুর থেকে দীপের দু’টি কিডনি, লিভার, ফুসফুস এবং হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করা হয়েছে পাঁচজন অসুস্থ রোগীর দেহে। চোখ দু’টিও পাবে একটি বেসরকারি হাসপাতাল।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভাইয়ের দেহ শববাহী গাড়িতে তোলার সময় দীপকুমার রায়ের দাদা সুদীপ্ত রায় বলেন, ‘‘আগামী বছরও দেওয়ালি আসবে। উৎসবও হবে। কিন্তু ভাই পাশে থাকবে না। তবে ওর দেহের অঙ্গে আরও পাঁচজন সুস্থ হবে, এটাই সান্ত্বনা।’’ এর বেশি আর বলতে পারেননি সুদীপ্ত। কান্নায় গলা বুজে আসে। বন্ধ হয় মোবাইল।
[আরও পড়ুন: প্রেম মানেনি পরিবার! কিশোর-কিশোরীর ঝুলন্ত দেহ মিলল আমগাছে]
গত ৩ তারিখ, শুক্রবার সন্ধ্যায় দীপ রায় স্কুটি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। যাওয়ার আগে বলেছিলেন, একটু ঘুরে আসছি। কিন্তু রাত দশটার পরেও ছোট ছেলে বাড়ি না ফেরায় চিন্তা শুরু হয়। রাত বারোটা নাগাদ দাদা সুদীপ্ত বের হন ভাইকে খুঁজতে। সুদীপ্তর কথায়, ‘‘এক বন্ধু ফোনে দুঃসংবাদ দেয়। বাড়ি থেকে একটু দূরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল ভাই। পাশেই স্কুটি।’’ এর পরে আর দেরি করেননি। অ্যাম্বুল্যান্স করে সোজা বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মাঝের ক’দিন দীপ সিসিইউতে ছিলেন। কখনও শারীরিক অবস্থার একটু উন্নতি। একটু আশার আলো। ডাক্তারবাবুদের ভরসা। আবার কখনও গম্ভীর মুখে এসে ডাক্তারবাবু জানিয়ে যান, অত্যন্ত ক্ষীণ আশা। কোনও পথ পাওয়া যাচ্ছে না।
কালীপুজোর রাতেই দীপের অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে শুরু করে। তাঁকে ভেন্টিলেশনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসকরা। পরদিন, সোমবার দুপুরে সুদীপ্তকে ডেকে হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন ‘ব্রেন ডেথ’ হয়েছে তাঁর ভাইয়ের।
[আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফের রক্ত ঝরল দক্ষিণ ২৪ পরগনায়, সহকর্মীকে খুন যুবকের]
মঙ্গলবার দুপুরে দীপের দেহের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে সুদীপ্ত বলেন, ‘‘আমরা তো চেয়েছিলাম সারাজীবন ধরে ভাইয়ের চিকিৎসা করতে। কিন্তু অ্যাপোলোর ডাক্তারবাবুরা জানিয়ে দেন,‘‘আর কোনও আশা নেই। ব্রেন ডেথ হয়েছে ভাইয়ের।’’ তার আগেই স্বাস্থ্যভবনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল দু’দফায় হাসপাতালে এসে দীপের চিকিৎসা ব্যবস্থা পরীক্ষা করেন। পরীক্ষা করেন দীপকেও। সন্ধ্যায় ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণার অনুমতি দেন। এরপরেই চিকিৎসকরা যুবকের মরণোত্তর অঙ্গদানের প্রস্তাব দেন।
সুদীপ্তের কথায়,‘‘বাবা আর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভাইয়ের অঙ্গে অন্য রোগীরা যেন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে।’’ বেসরকারি হাসপাতাল যোগাযোগ করে পিজি হাসপাতালে রিজিওন্যাল অর্গান অ্যান্ড টিস্যু ট্রান্সপ্ল্যান্ট অর্গানাইজেশন’-এর সঙ্গে। স্বাস্থ্য দপ্তরের অনুমতি মেলার পরই গ্রিন করিডর করে হৃদযন্ত্র পাঠানো হয় এসএসকেএম হাসপাতালে, একইভাবে বেসরকারি রুবি হাসপাতালে পাঠানো হয় দু’টি কিডনি। ফুসফুস এবং লিভার পেয়েছেন অ্যাপোলো হাসপাতালের দুই রোগী। কোন কোন রোগীর দেহে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হবে তা নিয়ন্ত্রণ করেছে স্বাস্থ্যভবন।