রমেন দাস: বন্ধু চল রোদ্দুরে মন কেমন মাঠজুড়ে... এ-ও যেন এক বন্ধুত্বের গল্প! না পাওয়া অথবা অন্ধকারের দুনিয়ায় এক আকাশ ভালোবাসার কাহিনি! মহেশতলার সুশান্ত মণ্ডলের জীবনে এক অমানবীয়তার স্পর্শের কথকতা যেন! তিনি ক্যাব চালব। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা অনলাইন অ্যাপ ক্যাবেই চলে সুশান্তর রোজগার। কিন্তু সাধারণ এই ক্যাব চালকের সঙ্গী হয়েছে ছোট্ট এক পাখি। শীর্ণকায় সেই বুলবুলই হয়ে উঠেছে ওই তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী।
শুনতে অবাক হলেও এই শহর কলকাতাতেই ঘটছে এমন বিরল ঘটনা! উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতা, রাজপথে সাদা অল্টো গাড়ির ওই চালকের কাঁধে দিব্যি খোশমেজাজে বাস ছোট্ট 'ঝটু'র। জোড়া বুলবুল পাখির একটিকে নিয়েই চলাফেরা সুশান্তর। এমনকী চা থেকে ভাত, 'ঝটু'র জন্য আলাদা কোনও ব্যবস্থা করতে হয় না ওই ক্যাব চালকের। ১৫-১৬ ঘণ্টা গাড়িতে চেপে ঝটুর ক্লান্তি আসে না একটুও। যাত্রীদের কাছেও খুব একটা বিরক্তির কারণ হয় না ছোট্ট বুলবুল।
চালকের কাঁধে দিব্যি খোশমেজাজে বাস 'ঝটু'র। নিজস্ব চিত্র।
কিন্তু কীভাবে এমন জীবন বাছলেন সুশান্ত?
মহেশতলার গোপালপুর এলাকার বাসিন্দার কথায়, ''আমার বাড়ির পাশের একটি গাছের তলায় পড়েছিল একজোড়া বুলবুল পাখি। আমার স্ত্রী ওদের নিয়ে আসে। খাঁচায় নয়, তারপর থেকে বাইরে ছেড়ে রেখেই ওদের যত্ন শুরু করি। তবে ঝটু অন্যরকম হয়ে গিয়েছে। আমার সঙ্গ ছাড়ে না। গাড়ি চালাই ওকে নিয়েই, কোথাও চলে যায় না। যা খাব, তাই দিতে হবে। যেন আমার জীবনের একটা অঙ্গ ও। পুরো নিজের পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছে। ঝটু ছাড়া আমার জীবন আর ভাবতেই পারি না।''
উত্তরপ্রদেশের মান্ধকার বাসিন্দা মহম্মদ আরিফের বন্ধু সারস পাখি অথবা বাংলাদেশের পটুয়াখালির কালামের বাজপাখি। আবার দুর্গাপুরের অঙ্কিতার শালিখ! মানুষ-পাখির 'দোস্তি' ঝড় তুলেছে বারবার। অজানা, অচেনা জগতেও নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব দেখেছে দুনিয়া। এই বুলবুলও যেন তেমনই এক বন্ধু, যার জীবনে ভয় নেই, আছে শুধু বিশ্বাস আর ভরসা, এমনও বলছেন কেউ কেউ।
কখনও স্টিয়ারিংয়ের পাশে বিশ্রাম ছোট্ট বুলবুলের। নিজস্ব চিত্র।