সুলয়া সিংহ: দুষ্টের দমন। অশুভ শক্তির বিনাস, শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা। দুর্গাপুজোর আবহে বারবার ঘুরেফিরে আসে এই শব্দগুলি। কিন্তু শুধু দুর্গাপুজোর পাঁচটা দিন তো নয়, প্রতি মুহূর্তে সমাজের অশুভ শক্তির সঙ্গে লড়াই করে এগিয়ে যেতে হয় দুর্গাদের। ‘অসুর’দের রক্তচক্ষু থেকে বাঁচতে, আত্মসম্মান রক্ষার্থে, নিজেকে নিরাপদে রাখতে প্রতিনিয়ত চলে সংগ্রাম। নারীদের সেই লড়াইকেই কুর্নিশ জানিয়ে তাঁদের ডানা মেলে ওড়ার সঙ্গী হতে এবার অভিনব উদ্যোগ নিল দক্ষিণ কলকাতার পুজো কমিটি।
বছরের পাঁচটা দিন দুর্গা (Durga Puja) আরাধনা। আর বাকি তিনশো দিন খবরের শিরোনামে উঠে আসে শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ, মানসিক অত্যাচার, গার্হস্থ্য হিংসার মতো ঘটনা। তিনমাসের শিশু থেকে নব্বইয়ের বৃদ্ধা- বিকৃত, নিম্নরুচির মনোবৃত্তি থেকে পার পায় না কেউ-ই। নিমেষে বেআব্রু হয়ে যায় সমাজের ভয়ংকর, বীভৎস চেহারাটা। তাই অসুর দমনে নিজেদের নিয়োজিত রাখতে হয় মহিলাদের। এই নির্মমতার কাছে যাতে তাঁরা কোনওভাবেই মাথানত না করেন, তার জন্যই পুজোর প্রাক্কালে বিশেষ উদ্যোগ নিল দক্ষিণ কলকাতার সানরাইজ ৬৬ পল্লি দুর্গোৎসব কমিটি। প্রাথমিক ভাবে যাতে তাঁরা আত্মরক্ষা করতে পারেন, সেই ব্যবস্থাই করা হচ্ছে। এবার মায়ের আরাধনার সঙ্গে সমাজের নারীদেরও ‘সাহসিনী’ ও ‘দুর্গতিনাশিনী’ করায় ব্রতী পুজো উদ্যোক্তারা। অন্তত ৫ হাজার মহিলাকে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
[আরও পড়ুন: বালিশের সঙ্গে সঙ্গমে, সহপাঠীদের নিয়ে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য! ভয়ংকর র্যাগিংয়ের শিকার ডাক্তারি ছাত্রী]
রবিবার খুঁটিপুজোর শুভলগ্নে শুরু হবে এই ‘দুর্গতিনাশিনী’ অভিযান। এর জন্য বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। শাড়ি পরিহীতা নারীরা বাইকে চেপে ঘুরে বেড়াবেন শহরজুড়ে। জানানো হবে ক্লাবের নয়া উদ্যোগের কথা। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও পৌঁছে দেওয়া হবে এই বার্তা। ইচ্ছুক মহিলাদের নিখরচায় আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেবেন মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষক গৌরব গোস্বামী। মহিলাদের আগ্রহ বাড়াতে ও উৎসাহ দিতে তৈরি হচ্ছে একটি থিম সংও। যা গাইবেন লোপামুদ্রা মিত্র এবং মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করবেন মমতাজ সরকার।
তবে দুর্গাপুজোর দশমীতেই এই অভিযান শেষ হবে না। সানরাইজ ৬৬ পল্লির লক্ষ্য, ছ’মাসের মধ্যে অন্তত পাঁচ হাজার মহিলা যাতে এই প্রশিক্ষণ থেকে উপকৃত হন। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নির্ভয়ে সমাজের অসুরদের রুখে দিতে পারেন প্রতিপদে। গতবছরই পুজোয় বিরাট চমক দিয়েছিল ৬৬ পল্লি। প্রথমবার মায়ের হাতে হয়েছিল মায়ের আরাধনা। দুর্গাপুজো করেছিলেন চার নারী। এবারও উপাসনায় সেই শুভমস্তুই। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা প্রদ্যুম্ন মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, “মৃন্ময়ী মায়ের পুজো তো হবেই, রক্তমাংসের মায়েদের পাশে দাঁড়াতে পারলে তবেই পুজোর সার্থকতা। সেই কারণেই এই ভাবনা বাস্তবায়ন করতে চাই আমরা।”