shono
Advertisement

প্রথমত চাই আরও শান্তি-সারসওয়ালা

কবীর সুমনের সাপ্তাহিক কলাম। The post প্রথমত চাই আরও শান্তি-সারসওয়ালা appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 04:19 PM Aug 11, 2018Updated: 04:49 PM Aug 11, 2018

যে ভাষায় বিজেপির এক নেতা বলেছেন বাংলা থেকেও তিনি ও তাঁর দল বাংলাদেশিদের তাড়িয়ে দেবেন, সেই ভাষার অধিকাংশ সফ্‌টওয়্যার বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ার ও প্রোগ্রামারদের তৈরি। অ্যানড্রয়েড ফোনে বা ফেসবুকে মুসলিমবিদ্বেষী, বাংলাবিদ্বেষী ও বাঙালিবিদ্বেষী যে কথাগুলি তাঁরা বাংলা লিপিতে লিখে প্রচার করেন, তার মাধ্যম হল বাংলাদেশের অসামান্য প্রোগ্রামারদের সৃষ্টি। মুসলমান কিন্তু। কী হবে? লিখেছেন কবীর সুমন

Advertisement

একটিমাত্র রাখাল যাক…
আমি এ-মাটি ছাড়ব না।
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত

গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল নাকি বলেছিলেন মানুষ এমন এক প্রাণী যে হাসতে পারে। প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে, অন্য প্রাণীরা হাসতে পারে না অ্যারিস্টটল জানলেন কী করে? ইজরায়েলের গায়িকা এস্থার ওফারিমের একটি গান ছিল ‘বয় ফ্রম দ্য কান্ট্রি’ (Boy from the Country)। সেই কোন যুগে শুনিয়েছিলেন আমাকে বন্ধুবর আবদুল্লাহ্‌ আল ফারুক। শুরুতেই ছিল: ‘সে গাছদের বলত ভাই, বনানীকে মা/ আমরা তাকে তাই বৃষ্টির মধ্যেও বের করে দিয়েছিলাম।/ কেউ কেউ এমনকী বলছিল গাঁ থেকে আসা ছেলেটার মাথা খারাপ।/… সে মাছদের সঙ্গে কথা বলত/ মাছরা তার সঙ্গে।/ তোমরা জানলে কী করে তারা কথা বলে না/ তোমাদের সঙ্গে তারা কথা বলে
না তাই?’

গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল কেবল ‘মানুষ’ নামে প্রাণীদের হাসতে দেখেছিলেন। ব্যাং বা উচ্চিংড়ে বা কোনও পাখি বা কুকুর বা ঘোড়া বা চিংড়ি মাছকে হাসতে দেখেননি। সে-কারণেই কি তাঁর ওই উক্তি? এখন পর্যন্ত আমাদের পাড়ার বেড়াল বা কাক বা ঘরের টিকটিকিটাকে বলতে শুনিনি আমাদের দেশের অসম রাজ্যের ৪০ লক্ষ মানুষ আমাদের দেশের নন, কারণ নাগরিকপঞ্জিতে তাঁদের নাম নেই। দুর্জনে বলছে সারা জীবন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরি করার পরও এক অসমবাসী জানতে পারলেন নাগরিকপঞ্জিতে তাঁর নাম ওঠেনি। অসমের কোনও হাতি বা শেয়াল বা মেঠো ইঁদুর এসব নিয়ে চিন্তিত কি না জানতে পারিনি আমরা। বাংলাদেশের যে দোয়েল নিয়মিত উড়ে আসে ভারতে আর বিকেল নাগাদ ফিরে যায় সে জানেও না পাসপোর্ট-ভিসা কাকে বলে। যে ভাষায় বিজেপির এক নেতা বলেছেন বাংলা থেকেও তিনি ও তাঁর দল বাংলাদেশিদের তাড়িয়ে দেবেন, সেই ভাষার অধিকাংশ সফ্‌টওয়্যার বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ার ও প্রোগ্রামারদের তৈরি। সেই নেতা ও তাঁর দল কি তা জানেন? জানেন বলে মনে হয় না। অ্যানড্রয়েড ফোনে বা ফেসবুকে মুসলিমবিদ্বেষী, বাংলাবিদ্বেষী ও বাঙালিবিদ্বেষী যে কথাগুলি তাঁরা বাংলা লিপিতে লিখে প্রচার করেন তার মাধ্যম হল বাংলাদেশের অসামান্য প্রোগ্রামারদের সৃষ্টি। মুসলমান কিন্তু। কী হবে? শিক্ষা, জ্ঞানবিজ্ঞান, সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান বা সেভাবে দেখতে গেলে মানব সভ্যতা বিজেপি, আরএসএসের নেতা ও সমর্থকদের কোনও ক্ষতি করতে পেরেছে বলে মনে হয় না।

[প্রমাণ কই যে কান্দাহার থেকে আসোনি…]

এই আগস্ট মাসে আমাদের আকাশে ঘন হয়ে উঠছে প্রথমে অসমের ৪০ লক্ষ, তারপর বাংলার কয়েক কোটিকে ভারত থেকে তাড়ানোর অঙ্গীকারের উদ্ভট মেঘ– যা থেকে জল নয়, অ্যাসিড ঝরে পড়ার সম্ভাবনাই রয়েছে। ঠিক যেমন ১৯৪৫ সালের আগস্ট মাসের ৬ ও ৯ তারিখ জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকির উপরে পড়েছিল আমেরিকার তৈরি অ্যাটম বোমা। বোমা পড়ার দুই থেকে চারমাসের মধ্যে ৯০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৪৬ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন হিরোশিমা শহরে। আর, নাগাসাকিতে মারা গিয়েছিলেন ৩৯ হাজার থেকে ৮০ হাজার মানুষ। দুই শহরেই অর্ধেকেরও বেশি প্রাণ হারান বোমা পড়ার দিনেই। একটি রিপোর্টে পড়েছি হিরোশিমায় বোমা পড়ার মুহূর্তেই মারা গিয়েছিলেন ৮৮ হাজার মানুষ, যাঁরা কিনা হাসতে জানতেন। মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীদের হিসাব? ধুৎ। ওসব নিয়ে কে ভাবে! তারা তো আর এমন সভ্যতা গড়ে তোলেনি, রাজনীতি বানায়নি, দেশ বানায়নি, সেনাবাহিনী বানায়নি, নেতা বানায়নি, ধর্ম বানায়নি, ঈশ্বর বানায়নি, ঈশ্বরের নানা নাম বানায়নি, সংবিধান বানায়নি, ধর্মগ্রন্থ বানায়নি, বোমা বানায়নি, ওষুধও বানায়নি, চিকিৎসা বানায়নি। তাদের কতজন গেল কতজন রইল– কী আসে যায়। তাছাড়া তারা হাসেও না।

[অসমে ৪০ লক্ষ বাঙালির এখন ডিটেনশন ক্যাম্পের আতঙ্ক]

মনে রাখা? শুধু মানুষ না অন্য প্রাণীও মনে রাখে। বরং মানুষই ভুলে যায় বেশি। আমেরিকা বা কাউকে ধরে করে অসমের ৪০ লাখের উপর যদি একটা হিরোশিমা-দাওয়াই ঝেড়ে দেওয়া যেত? ব্যস। তাঁরা কোন চুলোয় যাবেন তা নিয়ে কারও চিন্তা থাকত না। প্রথমে ৪০ লাখ ভাগাও তারপর বাংলার কয়েক কোটি– একথা যাঁরা বলছেন, সেই বিজেপি নেতারা ১৯৪৫-এর আগস্টের দু’টি দিনের কথা ভুলে গিয়েছেন বোধহয়। একটু স্মরণে আনুন, চেষ্টাচরিত্তির করুন, ল্যাঠা চুকে যাবে। কিন্তু অন্যদিকে আবার আমি একজনকে চিনি আগস্ট মাসের ৬ ও ৯ তারিখ যিনি ভোলেন না। ওই দুই দিনে তিনি কাগজ দিয়ে শান্তি-সারস বানান। ছোটদের শিখিয়ে দেন কীভাবে বানাতে হয়। চেনা মানুষদের উপহার দেন। এ বছর তিনি হোয়াটসঅ্যাপে শান্তি-সারসের ছবি পাঠিয়েছেন। ৭০ হল আমার। জীবনে আর কাউকে দেখিনি যিনি শান্তি-সারস তৈরি করে মানুষকে দেন হিরোশিমা নাগাসাকির কথা মনে রেখে– বিশ্বশান্তির জন্য।

অ্যারিস্টটল যদি জানতেন এই মানুষটির কথা? একজন বাঙালি। কলকাতাবাসী। কী বলতেন তিনি? হয়তো বলতেন মানুষ এমন এক প্রাণী, যাঁদের মধ্যে একজন শান্তি-সারস তৈরি করেন, উপহার দেন পৃথিবী নামে এই গ্রহের শান্তি প্রার্থনা করে।

(মতামত নিজস্ব)
kabirsuman2013@gmail.com

The post প্রথমত চাই আরও শান্তি-সারসওয়ালা appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement